ছাতাতেও হয় কিস্তিমাত

Spread the love

চট্টগ্রাম মুসলিম হাই স্কুলে পড়ার সময় আমরা হেটে হেটেই স্কুলে যেতাম। কাজে বর্ষার দিনে আমাদের সবারই হাতে ছাতা থাকতো। তবে, আমি রোদ থেকে বাঁচার জন্যও ছাতা ব্যবহার করতাম। এ জন্য পোলাপান আমারে যথেষ্ট ক্ষেপাইতো। কিন্তু আমি খুব একটা পাত্তা দিতাম না। স্কুল জীবনে যে সব ছাতা ব্যবহার করেছি সবগুলোই কাল কাপড়ের। এগুলোর নাম ছিল দেশী ছাতা! সে সময় কয়েকজন টু-ফোল্ডেড ছাতা নিয়ে আসতে শুরু করে স্কুলে। এগুলোর হাতলে একটা সুইচ থাকে। টিপ দিলেই ছাতাটা খুলে যায়। এরকম একটা ব্যবহারের ইচ্ছে যে একেবারেই হতো না তা নয়। কিন্তু বাসায় বলার কথা কখনো সাহসে কুলায় নি।

রঙ্গিন ছাতার একটা গল্প আমাদের পরের প্রজন্মের ছোটদের পাঠ্য বই-এ ছিল। এক ভদ্রমহিলা রঙ্গিন ছাতা খুলে বাঘের কবল থেকে রক্ষা পান। তাে, ছাতার কথা মানুষ আড়াই হাজার বছর আগেই জানতো মনে হচ্ছে। কারণ চিনা দার্শনিক যো লি’র বইতে এটার উল্লেখ আছে। মহাভারতেও ছাতার উল্লেখ আছে।
তবে ছাতার এই গল্প ফাঁদার কারণ আসলে সম্পূর্ণ ভিন্ন । ইন্টারনেটে খুঁজে ভারতের একটা প্রতিস্ঠান পেলাম যারা কিনা রঙ্গিণ সব ছাতা বানায়। আর এই ছাতা বিক্রি করে এ্রর উদ্যোক্তা প্রতীক যোশী মোটামুটি লাখোপতি হয়ে গেছে! ইয়োর স্টোরি বলছে ওর এমবিএ সহপাঠীরা দুই বছরে যা আয় করে প্রতীক সেটা এক কোয়ার্টারেই করেন।

প্রতীক লক্ষ করেন বেশিরভাগ ছাতাই কালো কাপড়ের, কাঠের বা স্টিলের হাতলওয়ালা। দেখতে দেখতে তার মনে হয় চমৎকার ডিজাইনের  ছাতা তৈরি করতে পারলে সেটা ভাল বিক্রি হবে। যে সময় তার এমবিএ বন্ধুরা ভাল বেতনের চাকরিতে ঢুকে যাচ্ছে তখন প্রতীক ভাবলেন তিনি তার হাইপোথিসিস পরীক্ষা করে দেখবেন। কলেজ পড়ার সময় প্রতীক টিউশনি করে মোটামুটি লাখ দেড়েক রুপি জমিয়েছে। সেটা দিয়েই নিজের মতো ডিজাইন করে প্রথম ৫০০ ছাতা সে বিক্রি করে। এর অনেকখানি পুশ সেল ছিল।

ইয়োর স্টোরিকে প্রতীক বলেছেন,”আবদুর রহমান সড়কে (আমাদের কারওয়ান বাজার) আমি দিনের পর দিন ঘুরে বেড়িয়েছি। অনেক কিছুই সেখান থেকে শিখেছি। এগুলোর অনেক কিছুই আমার এমবিএ ডিগ্রীর বাইরের বিষয়।বিশেষ করে মানুষের আচরণ।”

ছাতার কাপড়, ফ্রেম, প্যানেল, হাতল, কাপড়ের ছাপা, সবশেষে সেলাই- প্রত্যেকটি কাজই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতীক যে কাজটা করেছেন সেটা মোটামুটি এরকম –
১. ডিজাইনার যোগাড় করে তাকে দিয়ে ডিজাইন করানো
২. ছাতার কারিগরদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সেখান থেকে ছাতা বানিয়ে নেওয়া
৩. একটি ওয়েবসাইট বানানো যেখানে লোকে ছাতার অর্ডার করতে পারবে
৪. নিজের একটা ছোট টিম বানানো যারা প্রতিটি ছাতার কোয়ালিটি চেক করবে, অর্ডার অনুসারে সেটা প্যাক করে কুরিয়ার করবে, ইনভয়েস তৈরি করে সেটা আদায়ের ব্যবস্থা করবে।

যখন দিনে ৪০০ ছাতার অর্ডার আসতে শুরু করলো তখন সেটা সামলানো কঠিনও হলো। প্রতীক জানিয়েছেন এমন এক দিনে তিনি নিজে কাঁধে করে ১০ কেজি ওজনের ছাতার কাপড় কারখানায় নিয়ে গেছেন যেন সময়মতো কাজটা করা যায়।

ইয়োর স্টোরি যে হিসাব দিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে প্রতীক এক কোয়ার্টারে ৩০ লক্ষ রুপীর ছাতা বিক্রি করতে পেরেছেন। যেহেতু টেকাটুকা বেশি ছিল না তাই মার্কেটিং করেছে বিনে পয়সায়। মূলত ক্রেতাদের উদ্ধুদ্ধ করেছেন যেন তারা ছাতার ছবি তুলে সেটা প্রকাশ করে। আবার যেদিন অ্যামাজনে তার ছাতা আপলোড করেন সেদিন এক আংকেলকে ঠিক করে রেখেছিলেন যাতে উনি কেনেন। অন্তত একটা ছাতা তো অ্যামাজন থেকে বিক্রি হবে। এভাবে নানা বুদ্ধি খাটিয়ে নিজের ছাতার মার্কেটিং-এর কাজটা করে যাচ্ছেন প্রতীক।

এখন নিজেদের ওয়েবসাইট ছাড়াও ফ্লিপকার্ট, অ্যামাজন ইন্ডিয়া, স্ন্যাপডিলে প্রতীকের ছাতা বিক্রি হয়। এছাড়া মুম্বাই-এর  বেশ কিছু খুচরা দোকানেও প্রতীকের ছাতা বিক্রি হয়।

প্রতীক যোশী আসলে প্রমাণ করেছেন ভিন্নভাবে প্রচলিত পণ্য তৈরি ও বিক্রি করেও উদ্যোক্তা হিসাবে সফল হওয়া যায়।

Leave a Reply