বিদায় হে মেন্টর, হে প্রিয়  

Spread the love

গ্রোথ হ্যাকিং-এর কোন বইতে প্রথম আমি টনির কথা জানি। জাপ্পোসের সিইও। একটি জুতার দোকান, অনলাইনে। সেখানে এক জোড়া জুতার অর্ডার করলে চার জোড়া পাঠানো হয়। কী অদ্ভুত চিন্তা। পরে তার সম্পর্কে আরও জানলাম। ডেলিভারিং হ্যাপিনেজ পড়তে পড়তে তার প্রেমেই পড়ে গেলাম। টনি সেই হয়ে গেল আমার মেন্টর, প্রিয় মেন্টর।

আজ সকালে ফেসবুকে প্রথম প্রমি নাহিদের মেসেজ পড়ে জানতে পারি টনি সেই ৪৬ বছর বয়সে ওপারে পাড়ি জমিয়েছেন। কী হয়েছিল ইয়াহুর নিউজে সেটা বিস্তারিত লেখা হয়নি। ২০২০-এর কারবার আর কী!

টনিকে কেন আমি পছন্দ করতাম? বড় একটা তালিকা বানাতে পারবো। কিন্তু মূল ব্যাপারটা আসলে সুখ বিতরণ।

আমি যখন বুয়েট কম্পিউটার সেন্টারে চাকরি করি তখন একবার আলী মুর্ত্তাজা স্যার আমার কাজে জানতে চান – কী মুনির মিয়া, যা পাও তাতে চলে?

“আর একটু বাড়লে ভাল হতো স্যার”।

স্যার আমার কাজ বাড়ালেন। কয়েকমাস পর আবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। তৃতীয়বারের বার স্যার আমাকে জানালেন-এটা একটা নেভার এন্ডিং গেম। তুমি যদি তোমার চাহিদা বাড়াতে থাকো তাহলে কোনদিন সেটা পূরণ হবে না। কিন্তু টাকার পেছনে না দৌড়ে তুমি যদি কাজটাই আনন্দের সঙ্গে করো তাহলে দেখবা যে টাকা তোমার দরকার সেটা তোমার হয়ে যাবে। স্যারের কথা শুনে আশ্চর্য হলাম এবং জানলাম কাজের পেছনে দৌড়ালে টাকার দরকারও অনেক কমে যায়!

তো, পরে যখন টনির বিখ্যাত বই পড়লাম তখন টের পেলাম কেমন করে মানুষ আশ্চর্য সব কাজ করতে পারে এবং কাজের পিছনে নিজের সর কিছু বাজি রাখতে পারে।

সুখ বিতরণ ছিল টনির ব্যবসার মন্ত্র। জাপ্পোসের শুরু থেকেই টনির চেষ্টা ছিল উচ্চমাত্রায় কাজকে নিয়ে যাওয়া। গত বছর জাপ্পোস দুই দশক পার করেছে আর এ বছর জাপ্পোসের প্রধান নির্বাহীর পদ থেকে সরে দাড়িয়েছেন টনি। গত বছর এক সাক্ষাৎকারে টনি বলছেন, “আমাদের গ্রোথ এবং উদ্ভাবনের একটা বড় জায়গা জুড়েই ছিল আমাদের ভিন্নভাবে ব্যবসা করার চিন্তা”।

ভেবে দেখুন টনি কিন্তু “ভিন্ন” ব্যবসা করার কথা বলেননি, বলেছেন “ভিন্নভাবে” করার কথা। সে সাক্ষাৎকারে আরও বলেছেন, “আমরা বলি – জাপ্পোস একটা সেবাদানকারী কোম্পানি যা কাকতালীয়ভাবে জুতা বিক্রি করে”। এর মানে হলো “জুতা” না বেচে যদি “জামা বেচতেন” তাহলেও সেটি একটি সেবা প্রতিস্ঠানই থাকতো।

জাপ্পোসের কাস্টোমার কেয়ার সেন্টারকে ঘিরে অনেক গল্প/মিথ তৈরি হয়েছে। একবার এক লোক জুতা ফেরৎ দেওয়ার জন্য কাস্টোমার কেয়ারে জানায়। কথা প্রসঙ্গে সে জানায় রাতে আত্মহত্যা করবে তাই নতুন জুতার দরকার নেই। কাস্টোমার কেয়ারের ঐ এজেন্ট কয়েক দফায় কয়েকঘন্টা কথা বলে ঐ লোককে আত্মহত্যা থেকে ফিরিয়ে আনে।

জাপ্পোসের শুরুর গল্পটাও অসাধারণ। জাপ্পোসের মুল উদ্যোক্তা টনিকে একটা ভয়েস মেইল পাঠিয়ে তার অনলাইনে জুতা বিক্রির আইডিয়া পিচ করে। শেষ লাইনটা ছিল এরকম- “এরই মধ্যে ৫% লোক ডাকযোগে জুতা কেনে এবং জুতার মার্কেট হলো ৪০ বিলিয়ন ডলারের”। টনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “সঙ্গে সঙ্গে আমি হিসাব করেছি কতো টাকার কথা এখানে বলা হচ্ছে। এরা জুতা না পড়েই জুতা কিনছে”।

জাপ্পোস লোককে বাড়তি জুতা পাঠানো শুরু করে। ২০০৯ সালে অ্যামাজন জাপ্পোসকে কিনে নেয় মাত্র ১২০ কোটি (১.২ বিলিয়ন) ডলারে। অন্যদের ভাবনা মিথ্যা প্রমাণ করে জাপ্পোস নিজেদের কালচার নিয়েই অ্যামাজনের মধ্যে কাজ করে গেছে।

গত কিছুদিন ধরে টনি কাজ করছিলেন, “স্টার্টআপ সিটি” নিয়ে। এর মানে হলো একটি শহরের সর্বোচ্চ অধিবাসীকে স্টার্টআপের উদ্যমে উদ্দীপ্ত করা। “তাহলে নেইবারহুডটা ভাল হবে”।

টনির বই-এর আধাআধি আমি আমার মতো করে অনুবাদও করেছি যদিও শেষ হয়নি। কিন্তু জাপ্পোসের কেস স্টাডি আমার ছাত্র-ছাত্রীকে পড়তেই হয়। কাস্টোমার কেয়ার কেস হোক, বিজনেস প্ল্যানের কেস হোক –জাপ্পোস আমার বিজনেস স্টাডির একটা বড় অংশ জুড়ে আছে।

থাকবে আগামী দিনেও।

বিদায় হে মেন্টর। হে প্রিয়

Leave a Reply