আজ নগদ, কাল বাকী

Spread the love

আমাদের মধ্যে অনেকেই “কালকে” থেকে একটা কিছু করার অনেক পরিকল্পনা করি। সেই “কালকে” শেষ পর্যন্ত উদ্ভাবনী বাঙ্গালির আবিস্কার, “আজ নগদ কাল বাকী”র মতো কখনো আসে না। কিছু শুরুও করা হয় না। আমরা যারা ১৯৯০-এর দশকের শুরু পর্যন্ত স্কুলে পড়েছি, তাদের সবাই কিন্তু ইংরেজিতে লিও টলস্টয়ের তিনটি প্রশ্ন পড়েছি এবং জেনেছি যে “এখনই” হচ্ছে কোন কাজ শুরু করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। তাহলেও কেন আমরা শুরু করি না?

একটা কারণ হতে পারে অনেক কাজের ফলাফল সঙ্গে সঙ্গে টের পাওয়া যায় না। যদি আজকে থেকে আপনি –

  • ১০টায় কোথাও যাওয়ার কথা থাকলে সেখানে ৯.৫০-এর মধ্যে পৌছান,
  • প্রতিদিন কমপক্ষে তিনজন আত্মীয়, বন্ধু বা পরিচিত জনের কুশলাদি জানেন যাদের সঙ্গে আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেরকম যোগাযোগ নেই,
  • প্রতিদিন ফেসবুক ব্যবহারের সময় কমিয়ে দেন,
  • নিজের স্কিল বাড়ানোর চেষ্টা করেন, এবং
  • দিনে অন্তত কোন বই-এর ১০ পৃষ্ঠা পড়েন ; তাহলে

না, কিছুই হবে না।

আগামীকাল, পরশু, তরশু, নরশু কিংবা এক সপ্তাহেও কিছু হবে না। এক মাস পরেও তেমন কিছু হবে বলে আমার মনে হয় না।

কিন্তু তিন মাস পরেই আপনি পরিবর্তনগুলো টের পাবেন। ছয় মাস পরে আপনি নিজের মধ্যে অনেক শক্তি পাবেন। এই অভ্যাসগুলো আপনাকে তিন বছর পরে নতুন এক জায়গায় নিয়ে যাবে। আমি নিশ্চিত মাত্র ৫ বছর পরেই আপনি অন্য মানুষ হয়ে যাবেন।

এটি কোন কল্প কথা নয়। আমার পর্যবেক্ষণ এবং নিজের জীবনের অভিজ্ঞতা যেমন আছে তেমনি এ নিয়ে বিশ্বনন্দিত এক্সপেরিমেন্টও আছে। প্রথমেই নিজের কথা বলে নেই। গত মে মাসের ১৭ তারিখ থেকে আমি আমার ফেসবুক প্রোফাইল বন্ধ করে রেখেছি। মুলত দীর্ঘদিনের অসুস্থতাজনিত কারণে অনেক কাজ জমে যাওয়ায় এই উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু মজার বিষয় হলো এর ফলে আমি জমে যাওয়া কাজ ছাড়াও অনেক কাজের জন্য বাড়তি সময়ও পাচ্ছি। যেমন প্রায় তিন বছর ধরে পরে থাকা বাঙলার বিজ্ঞানীদের নিয়ে আমার একটি পাণ্ডুলিপির কাজ এই সময়ে শেষ করেছি। এটি আমার ওরা ১১ সিরিজের প্রথম বই। ওরা ১১ বাংলার বিজ্ঞানী নামের বইটি এই জুনের ২০ তারিখে প্রকাশিত হয়েছে।

গণিত উৎসবে আমাদের এক ছোট্ট প্রতিযোগী ২০১১ সালে প্রাথমিক গ্রুপে যোগ দেয়। তখন থেকে সে নিরলসভাবে লেগে ছিল। ২০১৬ সালে আইএমও থেকে ব্রোঞ্জ, ২০১৭ সালে সিলভার এবং ২০১৮ সালে দেশের জন্য প্রথম স্বর্ণপদক লাভের গৌরব অর্জন করে। আমি যতো সহজে লিখলাম ততো সহজে এটির গুরুত্ব বোঝা যায না। মনে রাখতে হবে, বিশ্বের কোন প্রতিযোগিতা যেখানে কমপক্ষে ১০০টি দেশ অংশ নিয়েছে এমন কোন প্রতিযোগিতায় এটি এখন পর্যন্ত আমাদের একমাত্র স্বর্ণপদক। আহমেদ জাওয়াদ চৌধুরী এখন এমআইটিতে তার পড়াশোনার পাশাপাশি জুনিয়রদের গণিতে প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে।

এই যে অপেক্ষা করা বা দীর্ঘ সময়ের জন্য লেগে থাকা সেটার ফলাফল জানার জন্য ১৯৭২ সালে স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি একটা পরীক্ষা করে। একটি রুমে ৫ বছর বয়সী একদল ছেলেমেয়েকে রাখা হয়। একজন প্রফেসর তাদের কাছে গিয়ে বলেন – তোমরা যারা একটা করে চকলেট পেতে চাও তারা আমি বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দরজা খুলে বের হয়ে যেতে পারো। বের হলেই চকলেট পাবা। কিন্তু যারা দুইটি চকলেট পেতে চাও তাদের এই রুমে আরও ১০ মিনিট বসে থেকে তারপর বের হতে হবে। তাহলেই কেবল দুইটি চকলেট পাবে।

গবেষকরা দুই দলের ছেলে-মেয়েদের খোঁজ নিয়েছে  ৪০ বছর পরে। দেখা গেল যারা ১০ মিনিট অপেক্ষা করেছে তারা, যারা তাড়াহুড়া করে বের হয়েছে তাদের চেয়ে ভাল করেছে – স্যাট স্কোরে, ভার্সিটির বিষয় ও ফলাফলে। এমনকী কর্মজীবনেও। তারা স্বাস্থ্যবান, অর্থবান এবং অধিকতর সুখী!

এ জন্য হয়তো বলা হয় রাতারাতি সাফল্যের জন্য ১০ বছর অপেক্ষা করা লাগে। আমরা নিজেরাও দেখি যে একটি হাতুড়ি দিয়ে একটা পাথর ভাঙ্গার সময় কেবল শেষ আঘাতে পাথরটি ভাঙ্গে। তার মানে কিন্তু এ নয় যে আগের আঘাতগুলো অপ্রয়োজনীয়।

কাজে কোন কিছু শুরু করতে চাইলে সেটি আজকেই শুরু করুন, কালকের জন্য রাখার দরকার নাই।  কারণ মুদির দোকানের “আজ নগদ, কাল বাকী’র মতো এই কালকে আর নাও আসতে পারে।

শুভ কামনা

 

Leave a Reply