দ্যা মোমেন্ট অব লিফট-২: বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস

Spread the love

দ্যা মোমেন্ট অব লিফট-১: রোড এহেড থেকে মোমেন্ট লিফট

১০ জুলাই তারিখে বাংলাদেশ সচিবালয়ে গিয়েছি। বের হয়ে দেখলাম অনেকগুলো বড় বড় বিলবোর্ড এবং জানলাম ১১ জুলাই বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস। অনেক দিবসই পালিত হয় এবং বেশিরভাগই খেয়াল করা হয় না। কিন্তু এবারের জনসংখ্যা দিবসের বিলবোর্ড আমার চোখে পড়ার মূল কারণ তার আগেই আমি মেলিন্দা গেটসের দ্যা মোমেন্ট অফ লিফট পড়তে শুরু করেছি।
বিল-মেলিন্দা গেটস ফাউন্ডেশনের এই সহ-প্রতিষ্ঠাতার প্রথম কাজ কন্ট্রাসেপটিভ, জন্ম বিরতিকরণের উপকরণ নিয়ে। এবং কী আশ্চর্য গত বছর বিশ্ব জনসংখ্যা দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল “Family Planning is a human right”। পরিবার পরিকল্পনা একটি মানবাধিকার! এবছর কিন্তু আলাদা কোন প্রতিপাদ্য নেই এই বিদবসের। বরং জাতিসংঘ চেয়েছে বিষয়টা নিয়ে সবাই, সব জাতি সচেতন হোক।

আমরা যখন ছোট ছিলাম তখন বিটিভিতে জনসংখ্যা বিস্ফোরণ নিয়ে অনুষ্ঠান হতো। অনেক নাটিকা এবং বিজ্ঞাপন তৈরি হয়েছে যেখানে বলা হতো “বুদ্ধিমান হোন, ঠিক কাজটি করুন এবং পরিবার পরিকল্পনা করুন”।
ছোট আমার কাছে পরিবার পরিকল্পনার মূল অর্থ তাই ছিল “ছেলে হোক, মেয়ে হোক, দুইটি সন্তানই যথেষ্ট”। এটিই আমাদের মূল শ্লোগান ছিল দীর্ঘদিন। কিন্তু মাঝখানে কেন জানি পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক আন্দোলন আমাদের দেশে ঝিমিয়ে পড়ে। অথচ আমাদের দেশে এই আন্দোলনটা সবচেয়ে জরুরী আন্দোলন হওয়া দরকার বলে আমার সব সময় মনে হয়েছে।
আমাদের দেশের জনঘনত্ব বিশ্বে সবচেয়ে বেশি। বিশ্বের সাতশত কোটি মানুষ, সবাইকে যদি আমেরিকায় ঠেসে দেওয়া হয় তাহলে তাদের প্রতি বর্গ কিলোমিটারে লোক হবে ৭০০+। আর আমরা আছি ১১০০+। বর্গকিলোমিটারে ১১০০+ লোক নিয়ে আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে উঠে এখন দৌড়াতে শুরু করেছি। ভাবুনতো আমাদের জনঘনত্ব যদি আর একটু কম হতো তাহলে কী হতো? আমাদের দেশে স্কুল-কলেজে বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়ে প্রায় চার কোটি ছেলে মেয়ে। বিশ্বের কয়টা দেশের জনসংখ্যা চার কোটির বেশি? আমাদের দেশে যতো ছেলে-মেয়ে এবার বিসিএস প্রিলিমিনারি দিয়েছে বিশ্বের অন্যতম ধনী দেশ ব্নারুইতে ততো লোকই নেই!!!
এতো গেল আমার স্বাভাবিক আন্ডারস্ট্যান্ডিং। কিন্তু মেলিন্দা গেটস আমার অন্য একটি দিকে চোখ খুলে দিয়েছেন। সেটি হলো জন্মবিরতিকরণে, সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণে, নারীর অধিকার। কেন নারীর এই অধিকার দরকার? এটি আমি খুব স্বাভাবিকভাবে ভাবতাম কেবল নারীর শরীর আর সন্তানের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত। কিন্তু এর বড় সামাজিক দিকও আছে।
এবং কী আশ্চর্য যে উদাহরণটি তিনি দিয়েছেন সেটি বাংলাদেশের। মেলিন্দা লিখেছেন ৭০-এর দশকে বাংলাদেশেই নাকি পাবলিক হেলথের সবচেয়ে লম্বা পরীক্ষাটি হয়েছে। বাংলাদেশের কয়েকটি গ্রামের অর্ধেক পরিবারকে কন্ট্রাসেপটিভের আওতায় আর বাকী অর্ধেককে ছেড়ে দেওয়া হয়। ২০ বছর পর দেখা গেছে যে সব নারীরা কন্ট্রাসেপটিভের আওতায় ছিল তাদের সন্তানরা সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান হয়েছে, তাদের পড়াশোনা ও স্কুলিং ভাল হয়েছে এবং তাদের পরিবারের সম্পদও অন্যদের চেয়ে বেশি। আর সেসব মায়েরা স্বাস্থ্য রক্ষা করতে পেরেছেন এবং তাদের আয়ও বেশি। কারণটাতো সহজই। মায়েরা যদি সন্তানদের পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেন, তাদের নিজেদের স্বাস্থ্য যদি ভাল থাকে, তাহলে তাদের সন্তানরা ভাল হবে। ঐ যে মনে আছে নেপোলিয়নের কথা – আমাকে সুমাতা দাও আমি তোমাদের সুজাতি দেবো।
মেলিন্দার নিজের তিন সন্তান। প্রত্যকের মাঝখানে তিন বছরের বিরতি। এই বিরতির জন্য মেলিন্দা মনে করেন তিনি কেবল তাদের প্রতি যত্নবান হতে পেরেছেন তাই নয়, তাদের পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় হয়েছে এবং চমৎকার পরিবেশও তারা পেয়েছে।
আজ থেকে ২০-২১ বছর আগে মেলিন্দা আবিস্কার করেন আফ্রিকা-এশিয়ার কমপক্ষে ২০কোটি নারী কন্ট্রাসেপটিভ পেতে চাইলেও তারা সেটি পেতো না। অথচ সেটি তাদের কাছে পৌছে দেওয়াটা বিশাল কোন ঘটনা ছিল না। কাজে তিনি ঠিক করলেন তাদের ফাউন্ডেশনের প্রথম গুরুত্পূর্ণ কাজ হবে এসব নারীদের কাজে জন্মবিরতিকরণ সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া।
মেলিন্দা নিজে একজন ক্যাথলিক হওয়াতে তার বন্ধুবান্ধবরা তাকে মানা করেছে। বলেছে সমালোচনাকারীরা তাঁকে ছেড়ে দিবে না। কাজে তার এই কাজে নামা ঠিক হবে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মেলিন্দা এই কাজে ঠিকই নেমেছেন।  এবং প্রথমবারের মতো কয়েকটি দেশকে রাজি করিয়ে মোট ২০ বিলিয়ন ডলারের কর্মসূচী গ্রহণ করতে পেরেছিলেন।

কিন্তু, আমাদের ছোট বেলায় পরিবার পরিকল্পনার যে জোরদার ক্যাম্পেইন ছিল সেটা কেন এখন আর নেই? আমাদের যে মন্ত্রণালয়ের নাম ছিল স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সেটির নাম কেন হয়ে গেল স্বাস্থ্য ও পরিবাল কল্যাণ মন্ত্রণালয়? কেনই বা আমাদের প্রায়োরিটি তালিকা থেকে জনসংখ্যা সমস্যাটা বাদ গেল?

মেলিন্দার দ্যা মোমেন্ট অব লিফট পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি হয়তো এই প্রশ্নগুলোরও উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবো।

আরও একটা  বিষয় আমি বোঝার চেষ্টা করবো। আমি নিজে মনে করি সত্তর দশকে কনট্রাসপটিভের প্রাপ্যতা যেমন উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য ছিল এখন ইন্টারনেটের প্রাপ্যতাও উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। এই বই পড়তে পড়তে এই বিশ্বাসের কী হয় সেটা দেখার বিষয়।
এ পর্যন্ত ভূমিকা। পরের পর্ব থেকে সরাসরি বই-এ।

পরের পর্ব – হুইলস, হুইলস এন্ড হুইলস


[বিল মেলিন্দা গেটস ফাউন্ডেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মেলিন্দা গেটসের সাম্প্রতিক গ্রন্থ “দ্যা মোমেন্টস অব লিফট নিয়ে এটি আবার ধাবারাহিক রচনা। এটি কোন অনুবাদ কিংবা ভাবানুবাদ নয়। এটি হলো এই বই পড়তে পড়তে আমার একধরণের প্রশ্ন, উপলব্বধির বয়ান। যতদিন পারি লিখে যাবো।]

 

One Reply to “দ্যা মোমেন্ট অব লিফট-২: বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস”

Leave a Reply