ইমোশনাল মার্কেটিং – কেস স্টাডি ২ : আই হ্যাড লাইক টু বা’য় দ্যা ওয়ার্ল্ড এ কোক

Spread the love

ইমোশনাল মার্কেটিং-কেস স্টাডি : ১ ডলারে ১০০ কোটি ডলার!

ছোটবেলায় প্রথম কোকের স্মৃতি আমার নেই। সেটি পাকিস্তান আমলে আমার ৪-৫ বছরের জীবনের কিনা সেটাও বলতে পারবো না। তবে, সে ষাটের দশকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ঠিকঠাকমতো কোকাকোলা ও ফ্যান্টা পাওয়া যেত এতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ পাকিস্তানে কোকাকোলা বোতলজাতকরণ শুরু হয় ১৯৫৩ সালে। কোকাকোলা হলো সত্যিকারের গ্লোবাল কোম্পানি যরা কিনা সব ব্যবসা করে স্থানীয়ভাবে। অর্থাৎ দেশে দেশে এর বাণিজ্যের বিস্তার হয় বোতলজাতের স্থাপনা বসিয়ে। পাকিস্তানও তার ব্যতিক্রম ছিল না। কোকাকোলার এই ‘স্থানীয় উৎপাদনের” পেছনে কারণ কয়েকটা। এর ফলে স্থানীয় লোকেদের কাজের সুযোগ তৈরি হয়। অর্থাৎ “আমার খালার মামাতো ভাই-এর ছেলের ঘরের নাতি” এই কারখানায় কাজ করে। আর তাতে কোকাকোলার সঙ্গে আমার আত্মীয়তা তৈরি হয়। তাছাড়া স্থানীয় উৎপাদনের কারণে দামও থাকে স্থানীয় লোকেদের হাতের নাগালে। যা হোক পকিস্তানে ব্যবসা শুরু করার ১০ বছর পরে, ১৯৬৩ সালে, আমার জন্মের তিন বছর আগে, ২৫৭ তেজগাঁও বাণিজ্যিক এলাকাতে  প্রতিষ্ঠিত হয় তাবানী বেভারেজ। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর কোম্পানি হস্তান্তরিত হয় মুক্তিযোদ্ধা কল্যানট্রাস্টের হাতে এবং মিরপুরে নতুন প্ল্যান্টও হয়। আর ১৯৮২ সাল থেকে আবদুল মোনেম লিমিটেডও যুক্ত হয় কোকাকোলা বোতলজাতকরণ ব্যবসায়।

তো, কোকাকোলার কথা আসলো কারণ ইমোশনাল মার্কেটিং-এর একটি বড় উপাদান হলো আনন্দ। আনন্দের বিজ্ঞাপন খুঁজলে আপনি লাখ লাখ পাবেন ইন্টারনেটে, নিজের স্মৃতি হাতড়েও বের করতে পারবেন আরও অনেকগুলো। আনন্দের ব্যাপারটাকে গানে, কথায়, কোটেশেনে যেমন বলা যায় তেমনি তা তুলে ধরা যায় সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছু করে। অতি সম্প্রতি মার্কেটাররা ‘জয় মার্কেটিং’ নামে একটি নতুন শব্দযুগলও ব্যবহার করছেন। আনন্দের ব্যাপারটি মূখ্য হয়ে যে মার্কেটিং সেটাই আনন্দের মার্কেটিং। তবে, শব্দযুগল নতুন হলেও এটি মোটেই নতুন কিছু নয়। খুঁজতে খুঁজতে কোকাকোলার ১৯৭১ সালের এই বিজ্ঞাপনটি খুঁজে পেলাম। ‘I’d like to buy the world a coke’ শিরোনামের বিখ্যাত বিজ্ঞাপনটি খুঁজে পেয়েছি। আমার কেস স্টাডির জন্য আমি দুইটি উদাহরণ খুঁজছিলাম আনন্দের মার্কেটিং বোঝানোর জন্য।

১৯৭১ সালের কোকাকোলার এই বিজ্ঞাপনটির যাত্রা শুরু হয়। সে বছরের ১৮ জানুয়ারি লন্ডনের আকাশ ঢাকা পড়ে যায় ঘন কুয়াশায়। ফলে বিমানগুলো হিথরোর পরিবর্তে আশেপাশে চলে যায় অবতরণ করতে। সেরকম একটা বিমানে ছিলেন বিল বেকার। বিল তখন ম্যাকক্যান এরকিসন এডভার্টাইজিং –এ কোকাকোলা একাউন্ট সামলান। সেদিন তার মিটিং ছিল তার সহকর্মী বিলি ডেভিসের সঙ্গে। বিলি তার সঙ্গে মিউজিক ডিরেকশনের কাজ করেন। আর তাদের দুই প্রিয় গীতিকার রজার কুক ও রজার গ্রীনওয়ে। উদ্দেশ্য রেডিওর জন্য নতুন জিংগেল তৈরি করে সেটা নিউ সিকার্স নামে ব্রিটিশ একটি গানের দলকে দিয়ে রেকর্ড করা।

কিন্তু বিধি হলে বাম কী বা করার থাকে রামের। কাজে অন্যান্য যাত্রীদের সঙ্গে বিল বেকারকে নামতে হয় আয়ারল্যান্ডের শ্যানন বিমানবন্দরে। তাদেরকে যে হোটেলটিতে রাখা হয়, সেটি তেমন উন্নতমানের ছিল না। ফলে অনেকই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেও শেষ পর্যন্ত মেনে নেয়। পরদিন এরকম একদল ক্ষিপ্ত, ঝগড়াটে যাত্রীকে বিল আবিস্কার করেন এয়ারপোর্ট ক্যাফেতে। দেখা গেল রাতের দুঃখের কথা ভুলে তারা মেতে উঠেছে নানা গল্পে এবং আশ্চর্য যে সবারই হাতে রয়েছে কোকাকোলার বোতল।

বেকার পরে ঐদিনটি স্মরণ করেছেন এভাবে –“ঠিক সেই মুহুর্তে আমি কোকের বোতলকে সম্পূর্ণ এক নতুন আলোতে দেখতে পেলাম। কোকাকোলা যা কিনা প্রতিদিন বিশ্বের আনাচে কানাচে লাখ লাখ লোকের তৃষ্ণা মেটায়, সেটি আমার কাছে ধরা পড়লো সম্পূর্ণ নতুন উচ্চতায়। কাজে আমি আমাদের অতি পরিচিত “লে’স হ্যাভ এ কোক” কে অন্যভাবে ভাবার চেষ্টা করলাম। না, এ শুধু রিফ্রেশমেন্টের আহবান নয়। বরং এ হলো বিনীতভাবে কাউকে বলা “একে অন্যর সঙ্গে কিছু সময় উপভোগ করার”। আমার ভাবনা হলো কোককে কেবল ড্রিংক হিসাবে না না ভেবে “আর একটু বেশি” ভাবা।

কাজে লন্ডনে ফিরে বিল বেকার তার টিমকে সম্পূর্ন ঘটনা খুলে বললের এবং বললেন তার ইচ্ছা “বিশ্বের সবার জন্য কোক কিনে দেওয়ার”। কিন্তু দেখা গেল গীতিকাররা সেটি মানলেন না।

ডেভিস বললেন, “আচ্ছা। কিন্তু যদি আমি পৃথিবীর সবার জন্য একটা কিছু করতে পারি, তাহলে আমি তাদেরকে কোক কিনে দেবো না?”

“তুমি তাহলে কী করতে চাও?” জানতে চাইলের বেকার।

“আমি সবাইকে প্রথমে একটা বাড়ি কিনি দেবো। তারপর সবার সঙ্গে শান্তি আর ভালবাসা বিনিময় করবো” ডেভিস বললেন।

বেকার রাজি হলেন। বললেন – তথাস্তু। আগে তাই হোক। তারপর “আমি দেখাবো কোক সেখানে কোথায় ফিট করে”

দুই রজার তাদেরকে শোনালেন “Mom, True Love, and Apple Pie” –এর সুর। সেখান থেকে কয়েকদিনের চেষ্টায় লেখা হয়ে গেল এখন যেটি পরিচিত ”আই হ্যাড লাইক টু বা’য় দ্যা ওয়ার্ল্ড এ কোক”। ফেব্রুয়ারি মাসের ১২ তারিখে রেডিও কমার্শিয়াল হিসাবে এটি পাঠিয়ে দেওয়া হলো আমেরিকার বিভিন্ন রেডিও স্টেশনে। যদিও অনেক বোতলজাতকারী এর কোন সুফল দেখতে পাননি সঙ্গে সঙ্গে, কিন্তু বিভিন্ন রেডিও স্টেশনের রেডিও জকিরা পুরো গানটি রেকর্ড করার জন্য অনুরোধ করত থাকে বিলকে। কাজে শেষ পর্যন্ত লাখ খানেক ডলারের বেশি খরচ করে গানটি চিত্রায়িত করা হয় ইতালীতে। এ জন্য সারা পৃথিবীতে থেকে বিভিন্ন ভাষাভাষী লোককে জড়ো করা হয় ইতালীর এক পাহাড়ের চূড়ায়। বিজ্ঞাপনের কথাগুলো হলো –

On a hilltop in Italy
We assembled young people
From all over the world
To bring you this message
From Coca-Cola bottlers
All over the world
It’s the real thing – Coke.

আর গানের কথাগুলো ছিল এ রকম

I’d like to buy the world a home
and furnish it with love
grow apple trees and honey bees
and snow white turtle doves
I’d like to each the world to sing
in perfect harmony
I’d like to buy the world a coke
and keep it company
that’s the real thing
I’d like to teach the world to sing
in perfect harmony
I’d like to buy the world a coke
and keep it company
that’s the real thing

বিশ্বজুড়ে টেলিভিশনে দেখানোর পর এই বিজ্ঞাপনটি হয়ে যায় ইনস্ট্যান্ট হিট। রেডিও স্টেশনগুলো এটি বাজাতে থাকে দিনভর। টিভিগুলোও বিজ্ঞাপনের বাইরে গিয়ে দেখাতে থাকে।  বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এক লাখেরও বেশি লোক চিঠি [কাগজের চিঠি, ই-মেইল বা ফেসবকু বার্তা নয়!!!] লিখে কোকাকোলা কোম্পানির প্রশংসা করে ও ধন্যবাদ জানায়। আর বিশ্বজুড়ে এই গান বাজিয়ে পাওয়া প্রথম ৮০ হাজার ডলার রয়্যালটি কোকাকোলা কোম্পানি ইউনিসেফকে দান করে দেয়!

 

 

 

[এই লেখাগুলো আমার প্রকাশিতব্য ইমোশনাল মার্কেটিং বই-এর অংশ বিশেষ। আমার সকল লেখা, বক্তৃতা এবং বই প্রকাশিত হয় সৃজণী সাধারণ লাইসেন্সের আওতায়। এটি ক্রিয়েটিভ কমন্স লাইসেন্সের বাংলা ভার্সন। এর মানে হলো যে কেউ অবাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে এর কন্টেন্ট শেয়ার, ছাপা বা ফটোকপি করতে পারবে। আমার অনুমতির প্রয়োজন হবে না। কেবল কোন গণমাধ্যমে প্রকাশ করলে সেখানে সূত্র উল্লেখ থাকলে ভাল]

 

 

 

One Reply to “ইমোশনাল মার্কেটিং – কেস স্টাডি ২ : আই হ্যাড লাইক টু বা’য় দ্যা ওয়ার্ল্ড এ কোক”

Leave a Reply