একটি স্বপ্নের ইনস্টিটিউট অথবা একটি ইনস্টিটিউটের স্বপ্ন

Spread the love
অনেকেই আমার কাছে জানতে চায়, আমি যতোগুলো কাজ সমন্বয় করি, সেগুলো কেমন করে একটা প্রতিষ্ঠানিক কাঠামো পাবে? অনেকেই হয়তো খেয়াল করেছেন আমি গত কিছুদিন ধরে একটি ইনস্টিটিউট জাতীয় কিছু একটা বানানোর কথা বলছি। অনেকেই এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চান। তাই ভাবলাম একটা কাঠামোবদ্ধ লেখা লিখে রাখি।
ব্যাকগ্রাউন্ড 
১. আমাদের কয়েকটা কর্মকাণ্ড আছে। 
গণিত অলিম্পিয়াড এটা মোটামুটি সবাই জানে। আমরা এরই মধ্যে সোনার পদক পেয়েছি এবং যারা গণিত অলিম্পিয়াড করে এখন তারা প্রতিবছর হার্বার্ড, এমআইটি, ওয়াটারলুতে পড়তে যাচ্ছে। সরকারি সাপোর্ট ভালো। সরকার ৮০টা  প্রাইমারি স্কুলে আমাদের পদ্ধতিতে গণিত শেখানোর একটা পাইলট করছে।
জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াড এটি অপেক্ষাকৃত নতুন আয়োজন হলেও আমাদের ছেলেমেয়েরা এরই মধ্যে রুপা পর্যন্ত পেয়েছে। এখানে যেহেতু ব্যবহারিক থাকে সেটা সামলানোর জন্য আমরা নিজেরাই একটা ল্যাবরেটরি বানিয়ে নিয়েছি। এটির নাম মাকসুদুল আলম ল্যাবরেটরি। এখানে শিক্ষার্থীরা নিজেরা বিভিন্ন গবেষণা, এক্সপেরিমেন্ট করতে পারে। এরকম একটা গবেষণা থেকে শিশু কিশোর বিজ্ঞান কংগ্রেসে একটা পেপার বেস্ট পেপার হয়েছে।
শিশু কিশোর বিজ্ঞান কংগ্রেস : এটি একটি ভিন্ন ধরণের বিজ্ঞান মেলা। প্রচলিত বিজ্ঞান মেলার বাইরে। এখানে শিশুরা (আপটু ১২ ক্লাশ) বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ, পোস্টার ও প্রকল্প নিয়ে হাজির হয়। তবে, প্রথমে তাদের একটা কনসেপ্ট পেপার জমা দিতে হয়। সেটি দেখে বিচারকরা অনুমোদন করেন। তারপর সে পেপার প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করে। ২৬-২৭ এপ্রিল ষষ্ঠ আয়োজনটি হয়েছে। প্রথম আয়োজনের একজন অংমগ্রহণকারী, রেদওয়ানুল ইসলাম, তাঁর কংগ্রেসের ধারণাটি পরে আরও বিকশিত করে এবং এটি ন্যাচার সিরিজে ছাপা হয়েছে। কংগ্রেসের অনুশীলন কয়েকজনকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইন্টার্নশীপ প্রোগ্রামে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে।
রোবট অলিম্পিয়াড– আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াডে ৭ বছরের ছেলেমেয়েরা অংশ নেয়। এটা মাথায় রেখে আমরা শুরু করেছি। এখানেও আমরা গোল্ড মেডেল পেয়েছি।
চাকরি খুঁজব না, চাকরি দেব – এটি তরুণরা যারা উদ্যোক্তা হতে চায় তাদের জন্য এটি একটি প্ল্যাটফর্ম। এখন পর্যন্ত বেশ কিছু তরুণ-তরুণীকে আমরা উদ্যোক্তা হিসাবে পথে নামিয়ে দিয়েছি।
চিলড্রেন সায়েন্স ফান্ড : এটি থেকে স্কুলের চেলেমেয়েদের রিসার্চ আর ট্রাভেল গ্র্যান্ট দেওয়া হয। এবারের কংগ্রেস ৫০জনকে দেওয়া হয়েছে।
এগুলো করার জন্য আমাদের কিছু কমিটি আছে – গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি, বিডিওএসএন, চাকরি খুঁজবনা চাকরি দেবো, বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি। আমাদের সঙ্গে যারা কাজে করে, আমরা সহ, সবাই ভলান্টিয়ার। মূল কাজগুলো তারা করে। কিছু পেইড লোক আছে যারা রুটিন কাজগুলো সামলায়।
২. এসবের কারণে অনেক স্বপ্নবান লোক তৈরি হয়েছে যারা আমার মতো অলস দ্যা গ্রেটকে কিছু কাজ করার জন্য ত্যক্ত করে যাচ্ছে। যেমন একটা প্ল্যাটফর্ম বানানো যেখানে প্রবাসীরা এসে কিছুদিন কাজ করতে পারে। হতে পারে কোন রিসার্চ, কোন মেন্টরিং ইত্যাদি। অন্যদিকে তরুণ যারা বুয়েট বা সেরকম প্রতিষ্ঠানে স্টপগ্যাপ হিসাবে সময় কাটায় তারা তাদের সময়টা ঐ প্ল্যাঠফর্মে দিতে পারে। মানে একটা রিসার্চে অংশ নিল বা কয়েকজন মিলে একটা বই লিখলো। এই প্ল্যাটফর্মটি এখন বানানোর কথা ভাবছি।
খ. কী করতে চাই
৩. আগে যা লিখেছি তার ভাবনাগুলোর ফসল হলো একটা ইনস্টিটিউট। বলা যায় একটা আমব্রেলা সংগঠন যেখানে উপরের ১ ও ২ নম্বরের কাজগুলো করা যাবে।এর কাজ হবে –

৩.১ – একটা রিসার্চ উইং যেখানে এডভান্স রিসার্চ হবে। লম্বা সময় ধরেই হবে। এটি যেহেতু একটি ডিমড ইউনিভার্সিটি হবে কাজে এখানে মাস্টার্স ও পিএইচডিও করা যাবে। পোস্টডকও। (মেকানিজমটা বড় বলে ব্যাখ্যা করছি না। মেনে নেন যে হবে)। এপ্লাইড রিসার্চও হবে। ফরমায়েশী রিসার্চও থাকবে। কোন একটা প্রতিষ্ঠানের জন্য সায়েন্টিফিক রিসার্চ করে দেওয়া। এর অনেকগুলো সেন্টার থাকবে যেখানে এই কাজগুলো হবে।
৩.২ স্কুল কলেজ থেকে ভার্সিটি পর্যন্ত মানব সম্পদ উন্নয়ন। এ জন্য অলিম্পিয়াড, কংগ্রেস এ সমস্ত কাজগুলো এই ইনস্টিটিউটের আন্ডারে একটা সেন্টার থেকে হবে। এখান থেকে আমরা ট্রাভেল ও রিসার্চ গ্র্যান্টও দিবো। শুরুতে পোলাপানকে বিভিন্ন জায়গায়, সম্মেলনে যাওয়ার জন্য স্পন্সর খুঁজে দিবো। পরে নিজেরাই ফান্ড করতে শুরু করবো।
৩.৩ স্পিন-অফ : যারা কমার্শিয়াল প্রজেক্টে কাজ করবে তাদের জন্য স্পিন-অফ করার সুযোগ থাকবে যেন তারা বের হয়ে গিয়ে একটা স্টার্টআপ করতে পারে। এই উইং-এর আন্ডারে আমরা একটা স্টার্টআপ ইকো সিস্টেম নিয়েও কাজ করবো। একটি ভ্যানগার্ড কাজ হবে দেশের স্টার্টআপ সিস্টেমের ডেটাবেস করা যা প্রতিবছর আপডেট হবে উইথ এন ইনডেক্স।
৩.৪ কোলাবোরেশন – দেশে ও বিদেশে অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের কোলাবোরেশন থাকবে। আমেরিকা, ইউরোপ বা জাপানে কোন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমাদের একটা লিয়াজো থাকবে। যেমন এনএসএফের একজন ডিরেক্টর ক’দিন আগে ঢাকায় এসেছেন। তিনি আমাদের
#মিসিংডটার কার্যক্রমের রিসার্চ অংশ ফান্ড করতে চান যদি আমরা আমেরিকার কোন প্রফেসরকে নিতে পারি। এগুলো করার জন্য আমাদের কোলাবোরেশন থাকবে। আমরা রেগুলার সামার/উইন্টার স্কুল করবো, এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম থাকবে ইত্যাদি।
৩.৫ বই – আমরা প্রচুর বই লিখবো। ছেলেমেয়েদের জন্য। বিজ্ঞান, গণিত থেকে শুরু করে এবিসিডি পর্যন্ত।

গ. কেমন করে চলবে
৪. একটা এনডাউমেন্ট ফান্ড করবো। আপাতত ১০০ কোটি টাকার। সেটা দিয়ে কিছু কাজ করা যাবে। নিয়মিত গ্র্যান্ট যোগাড় করবো।

৪.১   টাকার বিনিময়ে রিসার্চ করবো
৪.২  স্পিনঅফে শেয়ার থাকবে।
৪.৩  কিছু ট্রেনিং করাবো যেটা কেউ করায় না
৪.৪ বই বেঁচবো।
ঘ মডেল
৫. আপাতত আদর্শ টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ। এটা ভারতে। হোমি ভাবা করেছিলেন জামশেদ জি টাটাজীর সাহায্য নিয়ে। অন্যদেশের সিমিলার কোন এজেন্সী সম্পর্কে আমি জানি না। তাই ভাবতে পারি নাই।
ঙ. অগ্রগতি
৬. শংকরে একটি ১৪ তলা ভবনের ১৪ তলার ৩০০০+ বর্গফুট জায়গা পাবো এই বছরের শেষে। প্রস্তাবিত বিজ্ঞান
ভবনেও দুইটি কক্ষ পেতে পারি যদিও আগ্রহ কম।
(আপডেট – করোনার কারণে ভবনের নির্মান কাজ পিছিয়ে গেছে। হয়তো ২০২১ এর শেষ বা ২০২২ এ  পাওয়া যাবে)
চ. এখন কী করছি
৭.১. একটা ফান্ড খুঁজছি যেটা দিয়ে একজন লোককে এই ইনস্টিটিউটের কাগজপত্র বানানো এবং কাজ শুরু করার জন্য ফুলটাইম নিয়োগ দিতে পারি।
৭.২ একজন আপাতত আমাদের প্ল্যান গুলো শুনছে লেখার জন্য। 
৭.৩ ইনফরমাল পিচ করতে শুরু করেছি। যদিও কোন প্রেজেন্টেশন বা ভিডিও নাই।
এখানে কেন লিখলাম
আমার ধারণা যারা পারদর্শী তারা যদি এগিযে আসে তাহলে –
৮.১  আমি জানবো কীভাবে বিদেশ থেকে এরকম আজাইরা কামে ফান্ডিং, কোলাবোরেশন ইত্যাদি ম্যানেজ করা যয়,
৮.২  কীভাবে আমাদের লোকজন যারা এমন সব প্রতিষ্ঠানে আছে যারা ম্যাচিং ফান্ড দেয় তাদের সঙ্গে একটা সম্পর্ক তৈরি করা যায় 
৮.৩ আম্রিকা/রাশিয়াতে ফিজ্যকালি গিয়ে কোন প্রেজেন্টেশন করলে লাভ হবে কী না?
৮.৪ এরকম আজাইরা কাজে আগ্রহী আমার মতো অলস কয়েকজনকে খুঁজে পাওয়া
৮.৫ এই কাজটা যে একটা ফালতু ও আজাইরা কাজ এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া। ধন্যবাদ সকলকে।

দীর্ঘ পোস্ট পড়ার জন্য ধন্যবাদ।
(বিদ্র : আমার টাইপিং প্রতিভা অসাধারণ বলে অনেক বানান ভুল আছে। আশাকরি আস্তে আস্তে ঠিক করে ফেলতে পারবো)

15 Replies to “একটি স্বপ্নের ইনস্টিটিউট অথবা একটি ইনস্টিটিউটের স্বপ্ন”

  1. সাইন্স ক্লাব অফ পাবনা এবং ঈশ্বরদী সাইন্স ক্লাবের পক্ষ থেকে রইল অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও শুভকামনা….

  2. খুবই ভালো উদ্যোগ। প্রশংসার দাবিদার। প্রয়োজনবোধে বাংলাদেশী ইনভেস্টরদের ব্যাপারে সাহায্য করতে পারব। ধন্যবাদ।

  3. ছোট-খাটো কাজে লাগতে চাই আমি। চট্টগ্রামে থাকি; সরকারি কলেজে রসায়ন পড়াই।
    আল্লাহ আপনাকে হায়াতে তৈয়বা দান করুন!

  4. স্যার,
    আপনার এই সমস্ত উদ্যোগ আমাকে অনেক বেশী আকর্ষণ করে, আমি আপনার সাথে কাজ করতে চাই, যদিও আমি আমার ব্যক্তিগত উদ্যোগে কিছু কাজ করছি তবুও আপনার সাথে যদি দেখা করতে পারতাম তাহলে অনেক ভালো হতো। আমি বিশ্বাস করি আপনার সহযোগিতা পেলে অনেক ভালো কিছু উপহার দিতে পারবো ইনশাআল্লাহ্‌…

  5. Definitely well planned and visioned as well. I would be happy to be a part of this great cause.

    I can help on doing applied research as well as regular research as well.

    Let see what kind of institutes interested are interested to fund these kinds of activities.

    All the best wishes Munir vai and as always stand with you.

    Kamrul

  6. আপনারা কেন ইংরেজিতে উত্তর দিয়েছেন? লেখাটাতো বাংলায় লেখা। এ দেখেই সব কিছু বোঝা যায়

    1. সবাই চাইলেই বাংলাতে টাইপ করতে পারে না। তাছাড়া ভাষাটা কখনো মূখ্য নয়, ভাবটাই আসল।

  7. Awesome idea sir. Could be used crowd funding as a source of fund. There are lots of people who want donate some portion of their income for the betterment of future generations.

  8. Sounds cool. I’m an undergraduate student Bsc EEE in Islamic University of Technology (IUT).

    It would be great I can work with you guys somehow. Let me know if you’re thinking to involve people like me.
    Thanks!

  9. ঘরেরখেয়ে বনেরমোষ তারায় কজন
    পরেরতরে নিজের সময় বিলায় কজন

    আপনি পেরেছেন, আপনি পারবেনও।

  10. Bhaiya, thanks for writing in details, I could understand how fast you wrote, because of my that question in the morning!

    This clearly a very well thought out plan, ai am sure it will evolve with time. I think we as your fan or supporter, will grow up to understand a core institute will help all the initiative in a more dynamic way, to push more development in a sustainable way!

Leave a Reply