স্টোরি টেলিং – গল্প কেন বলি

Spread the love

গল্প কোথায় পাই

গল্প বলার ১০১টা কারণ আছে। জাতি হিসেবে আমরা অহেতুক গল্প করি। এন্টারটেইনমেন্টের অংশ তো বটে। শিক্ষামূলক গল্প তো সেই ঈশপের আমল থেকেই প্রচলিত। বিক্রিবাট্টার ক্ষেত্রেও গল্প বলাটা অনেক পুরাতন। বিজ্ঞাপনে গল্পের ব্যবহারও অনেক পুরাতন। এমনকি যখন একটা ছবি দিয়ে একটা গল্প বলতে হতো তখনও বিজ্ঞাপনে গল্প ছিল। কেন?

গল্প বিমূর্ত ধারণাকে মাঠে নামিয়ে এনে জটিল বিষয়কে সহজ করে

প্রথমত গল্পের মাধ্যমে একটি জটিল মেসেজ সহজে দিয়ে দেওয়া যায়। শুধু তাই না একটা বিমূর্ত ধারণাকেও মাটিতে নামিয়ে আনা যায়।

নতুন কোন ধারণা বোঝার ক্ষেত্রে আমাদের সবারই কমবেশি সমস্যা হয়। গল্প সেখান থেকে উত্তরণের একটা রাস্তা বের করে দেয়। ছোটবেলার কথা ভাবুন। শিক্ষকেরা একটা রূপকথার গল্প  অথবা একটা বাস্তবের গল্প বলে আমাদের গুণের নামতার মধ্যে নিয়ে গেছেন। কিংবা ধর্মীয়গুরুরা আমাদের পর-জীবনের একটি সুন্দর উপাখ্যান বলেন যেন আমরা এই জীবনে লাইনে থাকি। আর বিজনেসের লোকেরা একটা কেস স্টাডি সাজাতে পছন্দ করে যা কিন্তু কিছু বোরিং ডেটাকে তুলে ধরে!

মার্কেটাররা যুগ যুগ ধরে গল্প বলেছে। কিন্তু সেটাকে অন্যমাত্রায় নিয়ে যাওয়ার একটা ক্রেডিট আপনার এপলকে দিতে হবে। দুইটা জটিল যন্ত্র। কম্পিউটার ও স্মার্টফোন। সাধারণ মানুষকে কেমনে এই দুইটি জটিল যন্ত্র বোজাবেন আপনি? অথচ দেখেন ঠিকই তারা বের করেছে কেমন করে গল্প দিয়ে রিলেট করতে হয় প্রোডাক্টকে। তাদের গল্পগুলোতে সাধারণ ব্যবহারকারীরাই এসেছে।এবং সেখান থেকে ফিচার সেটও সামনে এসে পড়েছে। কোন টেকনিক্যাল জার্গন সেখানে থাকে না কারণ টেকনিক্যাল জার্গনেতো সাধারণ মানুষ বুঝবে না। হালের আইফোন-১২তে কোন চার্জার নেই। গল্পটা কী?

গল্প মানুষকে জড়ো করে

গল্পের আবেদন আসলে সার্বজনীন। হিরো, আন্ডারডগ বা হৃদয়ভেঙ্গে যাওয়ার গল্প সারা বিশ্বের মানুষ সহজভাবেই বুঝতে পারে। মূল ব্যাপারটা হলো আমরা সবাই ইমোশনকে প্রসেস করতে পারি এবং সময়মতো নিজের রাগ. দু:খ, আশা, ভালবাসা শেয়ার করতে ভালবাসি। গল্পের মধ্যে যে আবেগ থাকে সেটা নানা কিসিমের মানুষকে একটা পয়েন্টে একত্র করে ফেলে। এই যে ডাইভার্স পৃথিবী, সেখানে নানা কিসিমের লোককে আপনি কেমনে একত্র করবেন? গল্প বলে!

একটা উদাহরণ দেই। এটা আমি গণিত অলিম্পিয়াডে বলতে শুরু করি। এখন অনেক জায়গায় বলি। এটি প্লেটোর ডায়ালগে আছে। আমি মেসেজটা দেই এভাবে –

প্লেটো একদিন তার ওস্তাদ সক্রেটিসের কাছে গেলেন। গিয়ে বললেন – ওস্তাদ, একটা দেশে তো নানারকম লোক আছে। কেউ গাড়ি চালায়, কেউ গাড়িতে চড়ে; কেউ ব্যবসা করে, কেউ চাকরি করে; কেউ ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ আবার ওকালতি করে। কেউ দেশে পড়ে কেউ বিদেশ থেকে পড়ে এসেছে। কেউ রাজনীতির লোক কেউ রাজনীতি পছন্দ করে না। ওতে বিচিত্র লোক কীভাবে দেশকে ভালবাসবে? দেশপ্রেম দেখাবে?

সক্রেটিস হাসলেন। বললেন – দেশপ্রেমের দরকার নাই।

প্লেটো অবাক হয়ে বললেন – সে কি ওস্তাদ। দেশকে ভালবাসবে না? কেমনে কী?

সক্রেটিস তখন বলেন – না, আলাদা করে দেশকে ভালবাসার দরকার নাই। যার যা কাজ সেটাই যদি করে তাহলেই দেশকে ভালবাসা হয়।

তারপর আমি যোগ করি, নিজের কাজ সর্বোত্তমভাবে করাটাই হলো দেশপ্রেম। এই গল্প দিয়েই আমি জটিল একটা মেসেজ পৌছে দিতে পারি। উতসবের সবচেয়ে ছোট জন আর স্টেজে বসা গুণীজন কেউ আমার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন না।

গল্প আসলে আমাদের মানবিক বানায়। আমাদের ভাষা, জাতীয়তা, ধর্ম, রাজনৈতিক পছন্দ-অপছন্দ ছাপিয়ে কিন্তু গল্প আমাদের কাছাকাছি করে ফেলে।

মার্কেটিং-এ এমন গল্পের একটা উদাহরণ হলো টমসের জুতা। জুতা যারা কেনেন এবং যাদের কাছে টমস জুতা পৌছে দেয় তাদের গল্প সাজিয়ে টমস এমন একটা কমিউনিটি গড়ে তুলতে সমর্থ হয়েছে যা তাদের বিক্রিকে অনন্য উচ্চতায় পৌছাতে পেরেছে। আমাদের দেশে যারা রকমারি’র ই-মেইল পান তারা জানেন গল্প তাদের কেমন করে প্রভাবিত করে!

গল্প অণুপ্রাণিত ও উদ্বুদ্ধ করে

গল্প যেমন আমাদের মানবিক করে তেমনি ব্র্যান্ডও তাই করে। ব্র্যান্ড যখন অথেনটিক আর ট্রান্সপারেন্ট হয় তখন সেটা মাটিতে নেমে আসে, আর আকাশে ওড়ে না। তখন ভোক্তারা সহজে সেই ব্র্যান্ড বা প্রোডাক্টকে কানেক্ট করতে পারে।

আর ঠিক এই সময়েই সময়েই মানুষের ইমোশনকে ট্যাপ করতে হয়। গল্পে ভাল খারাপের মিশ্রণ থাকে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সত্যের/ভালোর জয় হয়। কাজে গল্প বললে সেভাবেই বলতে হবে যাতে যিনি শুনবেন/দেখবেন/জানবেন তিনি যেন একশন নেন। গল্পের মাধ্যমে ব্র্যান্ড লয়্যালটিও আপনি বাড়াতে বাড়বেন। নিজের ব্র্যান্ড বা প্রোডাক্ডকে কেন্দ্র করে তাই আপনাকে শিখতে হবে সেটিকে গল্পের মোড়কে কীভাবে ভোক্তার কাছে নিয়ে যাবেন। এ জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার প্রোডাক্টের বর্ণনা শৈলি।

কিছু ব্র্যান্ড গল্প বলে সেটিকে সেলসে কনভার্ট করতে পারে, সবাই পারে না। আপনাকে শিখতে হবে সেই বুদ্ধিটা কী? গল্প কোথবয় পাই-এর শুরুতে বলেছি প্রতিস্ঠাতার গল্প হতে পারে একটা ভাল সেলসের বুদ্ধি। এই কাজটা করতে হয় প্রতিস্ঠাতা নিজে ব্র্যান্ডকে ছাপিয়ে যাওয়ার আগে। যে সব প্রতিস্ঠান আবার প্রতিষ্ঠাতাকে বেশি হাইলাইট করে, তারা খুব সহজে নিজেদের এসেট পাবলিক ডোমেইনে দিয়ে দেন। কাজে সতর্কও থাকতে হবে।

One Reply to “স্টোরি টেলিং – গল্প কেন বলি”

Leave a Reply