বিশ্বকবির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি – আমারই চেতনার রঙে

Spread the love

রবীন্দ্রনাথের জন্মের তিন বছর আগে জন্মেছিলেন আমাদের প্রথম বসু। স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর একটি নিবন্ধ আমাদের স্কুলে পাঠ্য ছিল – কবিতা ও বিজ্ঞান। চট্টগ্রামের মুসলিম হাইস্কুলে ইমাম স্যার গেরিলা কায়দায় আমাদের বাংলা পড়াতেন। তার পড়ার স্টাইলের কারণে আমরা ক্লাস খুবই উপভোগ করতাম। স্যার বলতেন বসু এই লেখাটা লিখেছেন মনের খেদে। যদিও ব্যাপারটা আসলে তা ছিল না (পরে জেনেছি)। কিন্তু ঐ নিবন্ধে তিনি বলেছিলন কবি আর বিজ্ঞানী দুইজনেই আসলে সত্যকেই খুঁজে ফিরেন। দুইজনের খোঁজার পদ্ধতিটাই কেবল আলাদা। তার মানে কবিরাই বিজ্ঞানী বা বিজ্ঞানীরাই কবি।

রবীন্ত্রনাথকে আমি নতুন আলোয় দেখি, বুয়েটে আসার পর। তখন আমার কেবল পড়া, পড়া আর পড়া। মালিবাগে সিজারদের বাসায় আমাদের বিজ্ঞান আড্ডা- বিজ্ঞান জেতনা কেন্দ্র। আমরা বলতাম বিস্কুট চেতনা। মানে আমরা প্রতি শুক্রবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চা-বিস্কুট খেতে খেতে আড্ডা দিতাম আর কোন না কোন বই, লেখা পড়তাম। সেখানেই আমরা পড়ি পার্থ ঘোষের বিশ্বজগতের স্বরূপ নামে একটি নিবন্ধ, দেশ পত্রিকার সাহিত্য সংখ্যাতে ছাপা হয়েছে। সেই লেখাতে আমি প্রথম আবিস্কার করলাম সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে বিশ্বকবিকে দেখা যায়, আবিস্কার করা যায়।
পার্থ ঘোষ কোয়ান্টাম বলবিদ্যার আলোচনায় বিশ্বকবিকে ডেকে এনেছেন। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে আইনস্টাইনের একটি কথোপকথন আর ‘আমার চেতনার রঙে’র আলোচনায় আমরা আবিস্কার করলাম দর্শক আপেক্ষক দুনিয়া(universe)র পক্ষেই রবীন্দ্রনাথের অবস্থান।

আমারই চেতনার রঙে পান্না হল সবুজ,
চুনি উঠল রাঙা হয়ে।
আমি চোখ মেললুম আকাশে,
 জ্বলে উঠল আলো
পুবে পশ্চিমে।
গোলাপের দিকে চেয়ে বললুম “সুন্দর‘,
সুন্দর হল সে।
 তুমি বলবে, এ যে তত্ত্বকথা,
 এ কবির বাণী নয়।
 আমি বলব, এ সত্য,
 তাই এ কাব্য।

আচ্ছা, এতো জোর তিনি কেমনে পান। আমি বললেই গোলাপ সুন্দর হবে?

অথবা তিনি কী বলেন – সুন্দরের ধারণা কেবল মানুষের কাছে। ভিন্ন গ্রহের কোন প্রাণীর কাছে কী সেটা সুন্দর হবে? এমন প্রাণী যারা তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের যে অংশটা আমরা দেখি সেটা বুঝতেই পারে না? তাহলে ওদের কাছে রঙ্গিন কী?

রবীন্দ্রনাথ কি তাহলে এনথ্রোপিক নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন? আমরা আছি বলে আসলে এই দুনিয়ার সৃষ্টি হয়েছে? এই যে স্টিফেন হকিং ক’দিন আগে তার শেষ নিবন্ধে কেন জানি একটু থেমেছেন।

এই যে দুনিয়া আমরা দেখি এখানে যদি মহাকর্ষ ধ্রুবকের মান একটু কম হতো তাহলে কখনোই কোন সুপারনোভা বিস্ফোরণ হতো না। সুপারনোভা বিস্ফোরণ যদি না হতো তাহলে জীবনের জন্য দরকারী লোহার মতো ভারী মৌল কেমন করে সৃষ্টি হতো? আর যদি একটু বেশি হতো, তাহলে তো তারারা বেশিদিন বাচতেই পারতো না। আমরা তো আর তাহলে তারার সন্তান হতে পারতাম না।

তাহলে দুনিয়ার এতো হিসেব নিকেশ সেটি কী দুর্ঘটনাজনিত? এনথ্রোপিক নীতির লোকেরা বলে মানুষ আছে বলে এতো ব্যাথ্যা আছে। আমরা না থাকলে দুনিয়াই কী? হের ব্যাখ্যাই বা কী?

হকিং-এর জবাব ছিল সোজাসাপ্টা। তাঁর মাল্টিভার্স তত্ত্ব বলছে এরকম অসংখ্য দুনিয়া আছে, অসীম সংখ্যাক। তার মধ্যে আমরা কেবল আমাদেরটাই দেখি বলে এতো অবাক হই। কে জানে?হয়তো এ কারণে আকাশ ভরা সূর্যতারার মাঝখানে নিজেকে খুঁজে পেযে আমরা আনন্দিত হই, বিস্মিত হই।

https://www.youtube.com/watch?v=WLzaT4b1eqw

২০১৫ সালে বিশ্ব পালন করেছে আন্তর্জাতিক আলোর বছর হিসাবে। সেটির সমাপনী অনুষ্ঠানেও আমরা স্মরণ করেছি এই বিশ্ববিজ্ঞানীর। কারণ তিনিই তো বলেছেন শেষ পর্যন্ত আমাদের মুক্তি হবে আলোতে!

ঐ যে বললাম কবি আর বিজ্ঞানী সত্যকে সন্ধান করেন। রবীন্দ্রনাথ কতো অবলীলায় তাই সীমার মাঝে অসীমকে খুঁজেন। তিনি কি জানতেন গণিতের কোনো কোনো অসীম ধারার যোগফল আসলে সসীম হয়।। হয় বলে একিলিস পেছেন থেকে দৌড়ে গিয়ে কাউকে ধরে ফেলতে পারে!

বিজ্ঞানের পরিভাষা নিয়েও ভেবেছেন রবীন্দ্রনাথ। ভেবেছেন কীভাবে বিজ্ঞানশিক্ষাকে ছড়িয়ে দেওয়া যায়।।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নানান লেখায়, চিঠিতে, গল্পে, গানে বিজ্ঞানের নানান বিষয় আছে বলেই অনেকে ধারণা করেন। সেগুলো কেমন? রবীন্দ্রনাথের বিজ্ঞান ভাবনার সঙ্গে কী আধুনিক বিজ্ঞানের মিল আছে?

গানে, কবিতায়, নৃত্যে এবং আলোচনায় ২৫ বৈশাখ  (৮ মে, মঙ্গলবার ২০১৮) তাই আমরা স্মরণ করবো আমাদের বিশ্বকবিকে, বিজ্ঞানভাবুক রবীন্দ্রনাথকে।
অনেকের ধারণা বাবিজস কেবল কাঠখোট্টা বিজ্ঞান নিয়ে কাজ করে। সেটি যে সত্য নয় সেটিই আমরা সেদিন আলাপ করবো।
ঢাকার বাতিঘরে আমাদের এই ছোট্ট আয়োজন, আমাদের চেতনার রঙে রঙিন হোক।
গোলাপের পানে চেয়ে আমরা যেন বলতে পারি – সুন্দর হও।

অনুষ্ঠানের তথ্যাবলী এখানে পাওয়া যাবে। অনুষ্ঠানটি হবে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র ভবনের ৮ম তলায়, বাতিঘরে।

কোন নিবন্ধনের দরকার নেই। এসে পড়লেই হবে।

 

Leave a Reply