ক্ষুধার্ত থাকো, বোকা থাকো-৮: রাজসিক প্রত্যাবর্তন-৩

Spread the love

ক্ষুধার্ত থাকো, বোকা থাকো-৭: রাজসিক প্রত্যাবর্তন-২

এপলের সিদ্ধান্তের কথা না জানিয়ে সিইও গিল এমেলিও স্টিভ জবসের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করলেন, কীভাবে তাঁর সঙ্গে নেগোসিয়েট করা যায়। প্রেসকে এড়ানোর জন্য এমেলিও স্টিভের বাসায় গিয়ে হাজির হলেন। গিল পরে স্মতিচারণ করেছেন এই বলে যে, জবস আসলে একজন “গিফটেড স্পিকার” এবং তার এই প্রতিভা নেগোসিয়েশনেও বজায় থাকে। গিলের সবচেয়ে বেশি ভাল লেগেছে “স্টিভ জবসের প্রতিশ্রুতির চেয়ে বেশি কিছু করার আকাঙ্খা”। অন্যদিকে গিলের স্ট্যান্স কী ছিল?

স্কালিকে দলে ভেড়ানোর জন্য জবস যা করেছিলেন গিলও এখানে সে পদ্ধতি নিলেন, “Do you want to mess around with NeXT or change the world?”

 

ফলাফল হলো – এপল নেক্সটকে কেবল তাদের অপারেটিং সিস্টেম বানানোর জন্য কন্ট্রাক্ট করলো না, বরং এপল নেক্সটকে সম্পূর্ণ কিনে নিল, স্টিভ জবসকে সহ!  নেক্সটের সকল আইপি, সকল রিসোর্স এবং সকল ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাসহ। আর স্টিভ জবস হলেন এপলের “সিইও-এর পরামর্শক”। সেই সময় অনেকেই গিলকে প্রবলভাবে মানা করেছে যাতে সে জবসকে এপলে না ঢোকায়। কিন্তু গিল নিজের চেয়ে এপলের স্বার্থকেই প্রাধান্য দিয়েছেন বেশি।

স্টিভ জবস তাঁর নিজের কোম্পানিতে ফিরলেন। পেলেন ১০০ মিলিয়ন ডলার ক্যাশ এবং এপলের ১৫ লক্ষ শেয়ার। জবসের প্রথম কাজ হলো গিলের পুনর্গঠন এজেন্ডাতে নিজের ছাপ স্পষ্ট করা। অচিরেই লোকজন টের পেল গিল এমিলিও যা যা করছে আসলে তার বেশিরভাগ আসছে জবসের মাথা থেকে। মিডিয়াগুলোও এ সময় জবসের পক্ষ নিতে শুরু করে। জবসের দীর্ঘদিনের বন্নধু ওরাকলের সিইও ল্যারি তো বলেই বসলেন “একমাত্র জবসই পারেন এপলকে নতুন উচ্চতায় নিতে”। এ নিয়ে জবস আর  ল্যারি অনেক আলাপ আলোচনাও করেছেন।

গিলকে দিয়ে তাঁর প্রাথমিক পয়েন্টগুলো বোর্ডে তোলার পর জবস শুরু করলেন তার ভিন্ন স্কিলের তেলেসমাতি। তিনি এপল বোর্ড মেম্বারদের সঙ্গে গোপনে যোগাযোগ শুরু করলেন। প্রথমে যোগাযোগ করলেন উড উলার্ডের সঙ্গে যাকে কিনা বোর্ডে এনেছেন গিল এমোলিও! তবে, উলার্ড কিছুদিন ধরে গিলের কর্মকাণ্ড পছন্দ করেননি।

এমন কিছু হতে পারে সেটা ফরচুন ম্যাগাজিন কিন্তু জবসের ফেরার পরপরই ভেবেছে। উলার্ড যখন জবসের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলছিলেন তখন কিন্তু তার মাথাতে ছিল জবস মেকিনটস টিমটাকেই ঠিকমতো চালাতে পারেননি, একক কর্তৃত্ব নিয়েও নেক্সটকে দাড় করাতে পারেননি। তারপরও তিনি একসময় জবসের একাগ্রতার কাছে হার মানেন।

এর মধ্যে জবসের পরামর্শমতো কিছু উদ্যোগের ফলে, দীর্ঘদিন পর এপলের বিক্রিবাটাতে উন্নতি হয়েছে। কিন্তু ততোদিনে বোর্ডের ৭ জনের মধ্যে চারজনই গিলের জায়গায় জবসকে বসানোর কথা ভেবে ফেলেছে।
কাজেই সেই বছরের ৪ জুলাই-এর ছুটির সময় গিল সে ফোনটি পান – “তোমাকে আর এপলের দরকার নেই। আমাদের এমন সিইও দরকার যিনি একজন গ্রেট মার্কেটার ও সেলস পার্সন”। তাকে অবশ্য জানানো হয়নি বোর্ড এরই মধ্যে স্টিভ জবসকে অন্তর্বর্তীকালিন সিইও হিসাবে ঠিক করে ফেলেছ!!! যারা স্টিভ জবসেকে চেনেন তারা সবাই আসলে জানেন গিল খাল কেটে কুমির এনেছেন যার লেজটা আসলে খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা।

গিলের চলে যাওয়ার পর স্টিভ প্রথমেই ধরলেন হার্ডওয়্যার। এপলের ১০০+ হার্ডওয়্যার পরিকল্পনাকে তিনি দুই অঙ্কে নামিয়ে আনলেন। ১০০ প্রোডাক্ট ম্যানেজারকে ডেকে নতুন একটি হার্ডওয়্যারের স্বপ্নের কথা বললেন (পরে এটি হয় আইম্যাক)। উইনস্টনের মতো লোকেরা এই পরিকল্পনার অনেক খুঁত বের করলো বটে কিন্তু দেখা গেল প্রকৌশলীদের চেয়ে জবসের অপ্রকৌশলবিদ্যার জোর বেশি! এসময় উইনস্টন জানতেন এপলের প্রকৌশলীরা ভাল নেতৃত্বের জন্য অপেক্ষা করছিল। কাজে তারা তখন চমক দেখানোর জন্য রেডি হয়ে গেল।

জবসও রেডি হলেন তার অবস্থান সংহত করতে। নতুন করে সাজালেন তার বোর্ড। উলার্ড আর গ্যারেথ চ্যাং-কে রেখে বাকীদের বিদায় জানালেন। বোর্ডে নিয়ে আসলেন ওরাকলের ল্যারি এলিসনকে আর আনলেন একসময়কার এপল নির্বাহী বিল ক্যাম্পবেলকে।

ততোদিনে “অন্তর্বর্তীকালিন” কথাটা খসে পড়েছে জবসের তকমা থেকে। নতুন বোর্ডের কাছে এপলের সিইও বললেন তার নতুন দীক্ষা – একটি কোম্পানি তখনই টিকে থাকতে পারে যদি তার একাধিক ভাল প্রোডাক্ট থাকে। প্রোডাক্ট ভাল হলেই কোম্পানি চলে, আং-ফাং দিয়ে কোম্পানি চলে না।
এই বোর্ডের এপলের এই চিরনতুন লোকটির প্রতি অনেক আস্থা। তাদের আস্থা নিয়ে শুরু হলো নতুন এক মিশন।
৫ হাজারের কম লোক নিয়ে বিলিয়ন ডলারের কোম্পানি গড়া। স্টিভ জবসের নতুন চ্যালেঞ্জ।

তিনি কি তখন জানতেন এপল একসময় বিশ্বের প্রথম ট্রিলিয়ন ডলারের কোম্পানি হবে!!! জন্ম হবে নতুন ইতিহাসের?

তবে সে অন্য গল্প।

 

 

 

 

Leave a Reply