গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং – মাস্টার ক্লাস

Spread the love

মোশতাক আহমেদের কুমির ফার্মে যেদিন প্রথম কুমির এসে পৌঁছালো সেদিন এক অভৗতপূর্ব দৃশ্যের অবতাড়না হলো। আশেপাশের গ্রাম থেকে দলে দলে লোক এসে পড়লো ‘কুমির’ দেখার জন্য। উদ্যোক্তা দেখলেন – লোকজন গাছে উঠে কুমির দেখার চেষ্টা করছে। আর ওতে কুমির-দর্শককে সামলানোও যাচ্ছে না। জটিল সমস্যা।
উদ্যোক্তারা সমস্যা দেখলেই সমাধান করতে ভালবাসেন। কাজে আমাদের ‘কুমির ভাই’ চট করে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন। সেটা হলো মানুষজনকে নিয়ন্ত্রণ না করে, তাদের বাঁধা না দিয়ে. সবাইকে সিস্টেমের আওতায় কুমির দেখতে দেওয়া।
কাজে কুমির খামারে কুমির দেখার জন্য টিকেটের প্রচলণ করা হলো। ‘২০ টাকায় কুমির দেখা’। ব্যাস হয়ে গেল।

পরে এটাকেই তিনি আরও সমৃদ্ধ করলেন, প্রটোকল যোগ করলেন, যোগ করলেন গাইড। তারপর টিকেটের দাম হয়ে গেল ২৫০ টাকা! কারণ ‘বিমানবন্দরের ভেতরে ঢুকতে গেলে ২০০ টাকা লাগে। আমার কুমিরতো তার থেকে দাম বেশি’। মোশতাক ভাই তারপর চিঠি লিখলেন সেনাবাহিনীর এডজুটেন্ট জেনারেলকে যেখানে তিনি ধন্যবাদ দিলেন কারণ ময়মনসিংহ এলাকার সেনাছাউনির লোকেরা নিয়মিত কুমির দেখতে আসে। চিটি লিখলেন ডিসি, এসপিদেরও। সঙ্গে এটাও বললেন, কৃতজ্ঞতা হিসেবে কেবল তাদের জন্য টিকেটে ২০% ছাড়। মানে ২০০ টাকা। এজি সেই চিঠি কপি করে সব সেনানিবাসে পাঠিয়ে দিলেন। সামান্য একটা চিটি আর একটু জেস্চার দিয়ে হয়ে গেল মার্কেটিং-এর বড়ো কাজ। এজি আর ডিসিরাই হয়ে গেলেন তাঁর খামারের মার্কেটার। আর এভাবে একজন গ্রোথ হ্যাকার মার্কেটার তার গ্রাহক, শুভানুধ্যায়ীদের মার্কেটার বানিয়ে ফেলে।
১৪ নভেম্বর, ২০১৮। ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ’৭১ মিলনায়তনে গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং বোঝাতে গিয়ে কুমির খামারের এই ঘটনা বললেন দেশের প্রথম ‘কুমির চাষী’ মোশতাক আহমেদ। জানালেন কুমির দেখার টাকা দিয়ে কুমিরের খাবারের খরচটাও উঠে আসতো!
উদ্যোক্তা সপ্তাহ উপলক্ষে গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং-এর মাস্টারক্লাসে আমি, মোশতাক ভাই আর কাজি এম মুর্শেদ ভাই কেমন করে উদ্যোক্তারা কম খরচে নিজের মার্কেটিং করবেন তার কিছু ধারণা দিয়েছি।
শুরুতে আমার একটি ১৩০ স্লাইডের প্রেজেন্টেশন ছিল। শুরু করেছি যথারীতি হটমেইলের গল্প দিয়ে আর শেষ করেছি ইন্টারনেটে গ্রোথ হ্যাকিং-এর রিসোর্সের খবর দিয়ে। বলেছিল সুযোগ থাকলে আমার গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং বইটা পড়ে নিতে।
গ্রোথ হ্যাকিং-এর কয়েকটা উদাহরণ দিয়ে আমি বোঝাতে চেয়েছি গ্রোথ হ্যাকিং আসলে একটি প্রতিদিনকার কাজ। এ কাজে থামা যাবে না।
খুব সাধারণ মার্কেটিং কৌশলও গ্রোথ হ্যাকারের পাল্লায় পড়ে কতো অসাধারণ হয়ে উঠতে পারে সেটার কথা বলতে গিয়ে “তিনটা কিনলে একটা ফ্রি”-এর একটা উদাহরণ দিয়েছি। উদ্যোক্তা তিনটে কিনলে একটা ফ্রি না বলে যে একটা কিনছে তাকে তিনটা কুপন দিয়েছে। সঙ্গে বলেছে – আপনি তিনজনকে এই তিনটে কুপন দিয়ে দেবেন। তারা তিনজনই যদি আমাদের দোকানে পন্য কেনেন তাহলে আপনার পন্যের দাম আমরা ফেরৎ দিয়ে দেবো!!! কী অসাধারণ বুদ্ধি।
বলেছি গ্রোথ হ্যাকারদের কাজই হলো সারাক্ষণ বিভিন্ন ধারণা টেস্ট করে দেখা। ওরা ফেসবুক বুস্ট করার সময় একটা মাত্র বুস্ট করে না। একই বিষয়ের প্যারামিটার চেঞ্জ করে কয়েকটা পোস্ট দেয়। তারপর খেয়াল করে কোনটা ক্লিক করেছে। তারপর সেটা রেখে বাকীগুলো অফ করে দেয়। মার্কেটারদের সাধারণ ফানেলে একটা রেফারেল যোগ করে গ্রোথ হ্যাকাররা কেমন করে রিটেনশনের কাজ করে সেটা ব্যাখ্যা করেছি।
মুর্শেদ ভাই দেখিয়েছেন মার্কেটিং ইনোভেশন কেন দরকার হয়। বলেছেন এয়ারবিএনবির বুদ্ধি। প্রোডাক্ট মার্কেট ফিটের কথাও বলেছেন।

তারপর আমরা কিছু প্রশ্নের জবাব দিয়েছি। পরে আমার আর মুর্শেদ ভাই-এর মনে হলো আমার আগের বই-এর দ্বিতীয় খন্ড লেখা দরকার। হয়তো লেখবো অচিরেই। তবে, তার আগে একটা ফুল কোর্স করানোর কথাও ভাবছি। এ কোর্স কোন গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং ফর এন্ট্রারপ্রিনিয়র। স্টে টিউন।

হ্যাপি হ্যাকিং।

3 Replies to “গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং – মাস্টার ক্লাস”

  1. গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং ফর এন্ট্রারপ্রিনিয়র ট্রেনিং ইভেন্টের আমি প্রথম ছাত্র হতে চাই ভাইয়া। শুরু করলে মোবাইলে বা ইমেইলে যদি একটা নোটিফিকেশন দিতেন প্লীজ! ওয়েবসাইটের ঘরে মোবাইল নাম্বার দিলাম ভাইয়া।

Leave a Reply