ইমোশনাল মার্কেটিং প্রকাশে বিলম্ব কেন?

Spread the love

৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ শুক্রবার আমার জন্য খুবই আনন্দের দিন ছিল। কারণ ঐদিনই বই মেলাতে আমার নতুন দুইটি বই প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে ‘ময়াল’ লিখতে আমার প্রায় ছয় বছর সময় লেগেছে।অন্যদিকে ইমোশনালে সময় লেগেছে প্রায় দুই বছর। তবে, ইমোশনাল মার্কেটিং বইটি গত বছরই মেলাতে এবং তারও আগে রকমারিতে আসার কথা ছিল। কিন্ত এই বই প্রকাশিতই হয়েছে মাত্র কয়েকদিন আগে।

এর আগে উদ্যোক্তাদের জন্য গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিংশরবতে বাজিমাত নামে দুইটি বই লিখেছি। ২০১৮ সালের মাঝামাছি এসে ভাবলাম  উদ্যোক্তাদের জন্য  আরও বই লেখা দরকার। দুটো বই-এর কথা ভাবলাম। একটি হলো “হাতে কলমে গ্রোথ হ্যাকিং”। মানে ধাপে ধাপে কীভাবে গ্রোথ হ্যাকিং-এর নিয়মকানুন, কলা কৌশল নিয়ে কাজ করবে তার একটা গাইড বই। কাজও শুরু করলাম। কিন্তু অচিরেই টের পেলাম গ্রোথের সঙ্গে ভালবাসা আর আবেগের একটা বড় সম্পর্ক আছে। আর মার্কেটারদের আবেগ ব্যবহারের হারও বেড়ে গেছে নানাবিধও কারণে। প্রথম কারণটা অবশ্যই ইন্টারনেট আর স্যোসাল মিডিয়া। ইচ্ছে করলেই যে কোন প্রতিষ্ঠান এখন কোন টাকা খরচ না করেই একটি ভিডিও কমার্শিয়াল ইউটিউবে ছেড়ে দিতে পারে। তারপর সেটির ক্যাম্পেইন করতে পারে স্যোসাল মিডিয়াতে। এমনকী বড় বড় ব্যান্ডগুলোও এই মাধ্যম ব্যবহার করতে শুরু করেছে যদিও তাদের টিভিতে যাওয়ার টাকা আছে। অন্যদিকে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে যে কেউ ভিডিও বানিয়ে ফেলতে পারে। কাজে কাজটা হয়ে গেল সহজ।  আগের তুলনায় এখন আপনার “মুখ ঢেকে যাচ্ছে বিজ্ঞাপনে”। এতসব চ্যানেল, এতো সহজে বিজ্ঞাপনের কারণে মার্কেটারদের কাজ কিন্তু কঠিন হয়ে যাচ্ছে!!! মার্কেটারদের, উদ্যোক্তাদের তাহলে বের হয়ে আসার, অনেকে ভিড়ে আলাদা থাকার উপায় কী?
উপায় হলো নিজেকে আলাদা করতে শেখা। কেমন করে?

পড়ে, পড়ে, পড়ে। দেখে, দেখে, দেখে এবং শুনে শুনে শুনে।

নতুন মার্কেটিং কৌশল শেখা এবং প্রতিনিয়ত নিজেকে পরিশীলিত করার কোন বিকল্প নেই। এ নিয়ে লড়াই সংগ্রাম করতে হবে। আর সেই সংগ্রামেরই আর একটা নাম হলো ইমোশনাল মার্কেটিং
আমি যখন ইমোশনাল মার্কেটিং নিয়ে দিস্তা দিস্তা কাগজের বই আর পর্দায় নানা ব্লগ-আর্টিকেল পড়তে শুরু করি তার আগ পর্যন্ত আমার কাছে ইমোশনাল মার্কেটিং-এর উদাহরণ ছিল কেবল হালাল সাবান আর হিজাব রিফ্রেশ স্যাম্পু। কিন্তু, যতো গভীরে গেলাম ততোই টের পেলাম ব্যাপারটা কেবল ধর্মীয় আবেগ নয়। এমনকী কেবল সেটি নয় মায়ের প্রতি ভালবাসা। জানলাম আবেগের একটা বিশাল সায়েন্সও আছে। রঙ দিয়ে আবেগকে নিয়ন্ত্রণও করা যায় এবং আবেগ দিয়েই উস্কে দেওয়া যায় মার্কেটিংকে। এবং সেটি ব্যাপকভাবে।
তখন আমি এই বইটা পরিকল্পনা করি। এই বই পরিকল্পনায় আমার প্রকাশক মাহবুবুর রহমান ও তার কর্মী সরফরাজ (আসলে সরাফত, কিন্তু আমি কেন জানি তাকে সরফরাজই ডাকি)-এর একটা ভূমিকা আছে। তারা বলতে গেলে আমাকে চাপের মধ্যেও রেখেছে যেন আমি এই বইটা লিখি।
তো, আমি যখন বইটা লিখবো ঠিক করি তখন আমার অলস মন এই বলে সায় দিয়েছে “ওতো চিন্তার কী আছে। তোমার ওস্তাদ টিম ফ্যারিস বা রায়ান হলিডে নিশ্চয়ই এই বই লিখে ফেলেছে। সেটাকে সামনে রেখে লিখে ফেললেই হলো। শুধু হালাল সাবান বা হিজাব ওয়ালীদের কথা মনে রাখলেই হবে”।
আহা। কাজটা যদি এতো সহজ হতো। কিন্তু “বিধি হলে বাম, কী করবে রাম”। আমার ওস্তাদরা কেউ এমন কোন বই এখনো লিখেন নাই যেটা সামনে রেখে টুকলিফাই করে, নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে এই বইটা আমি লিখতে পারি।
ফল যা হওয়ার তাই হলো। আমাকে পড়তে শুরু করতে হলো পাঠ্যবই, পড়তে হলো হাজার ব্লগ। এমনকী নজর রাখতে হলো বিশেষ বিশেষ টুইটে। এতে যে সময়ের মধ্যে এটা লেখা যাবে মনে করেছি, সেটি কিন্তু আর হলো না।

তারপরও ২০১৯এর বই মেলা ধরা হয়তো যেতো কিন্তু সেটা গেল না দুই কারণে। শোনা গেল, আমার প্রকাশককে নাকি স্টলই দেওয়া হবে না বইমেলায়। এ নিয়ে ম্যালা দেনদরবার করতে হলো। আর সবচেয়ে খারাপ হলো ভাইরাস ব্যাটারা এটাক করে আমার বারোটা বাজিয়ে দিয়ে গেল। প্রায় একমাস আমি তেমন কিছুই করতে পারলাম না। ফলে আরও পেছালো। শেষ পর্যন্ত গত বছরের মেলা আর ধরাই হলো না।

এর পর হাতে সময় পেয়ে নিয়মমতো বই পাঠালাম কয়েকজন আর্লি রিডারের কাছে। নিজেও রিভিউ করলাম। তারপর ভাবলাম যেহেতু সময় পাওয়া গেছে, কাজে পাণ্ডুলিপি নতুন করে সাজাই।
এই বইতে এখন চারটি পর্ব আছে। প্রথমটি ইমোশনালের ব্যকরণ, এরপর ইমোজি, তারপর কেস স্টাডি এবং সবশেষে ফেসবুকে ব্যবহারের তরিকা। কিন্তু আমার অরিজিনাল প্ল্যানে ছিল কেবল প্রথম অংশটা।
সময় পাওয়াতে আমি এটিকে আরও বড় করলাম যাতে ‘গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং’-এর মতো পরে আমার মনে না হয় ‘হাতে কলমে ইমোশনাল মার্কেটিং’ লেখা দরকার। কাজে বইটা বড় হয়ে গেল এবং সবশেষে ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বইমেলাতে এসেছে। এরপর রকমারির মাধ্যমে অনলাইন গ্রাহকদের কাছে পৌঁছাচ্ছে।
কিন্তু গত বছর জানুয়ারিতে প্রচ্ছদ ফাইনাল হওয়ার পরই সেটা প্রি-অর্ডারে চলে যায়। সেই থেকে বাজারে আসার আগ পর্যন্ত এটা প্রি-অর্ডারে ছিল। অনেকই তখন অর্ডার করেছেন। কিন্তু বই পেতে শুরু করেছেন মাত্র গতকাল-গতপরশু থেকে।
এই পুরো ব্যাপারে আমার প্রকাশক বা রকমারির কোন দোষ নেই।
পুরোটা আমার ব্যর্থতা। প্রথমত গত বছর এটি শেষ করতে না পারা এবং যথারীতি সুযোগ পেয়ে দ্বিতীয় খন্ডও একসঙ্গে লিখে ফেলা!

আশা করি, আমার পাঠকেরা যারা দীর্ঘ এক বছর অপেক্ষা করেছেন তারা আমাকে মার্জনা করবেন।

প্রিয় পাঠক, আপনাদের ধৈর্যের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা। ভবিষ্যতে এরকম যাতে না হয় সে ব্যাপারে আমি সচেষ্ঠ থাকার চেষ্টা করবো।

সবার সেকেন্ড ডিফারেন্সিযাল নেগেটিভ হোক।

১২/২/২০২০

 

 

 

Leave a Reply