ইমোশনাল মার্কেটিং-১৪ : আর্ট অব গিভিং

Spread the love

ইমোশনাল মার্কেটিং-১৩ : টার্গেট যখন নারী

মার্কেটিং কিন্তু সব সময় বিজ্ঞাপনে সীমাবদ্ধ থাকে না। এর নানা ডালপালা আছে। একটি খুব ভাল দিক হলো উপহার দেওয়া অথবা উপহার সংক্রান্ত বিজ্ঞাপন তৈরি করা। আবার সেটা দুটো মিলেও হতে পারে। দুটো মিলে কেমন হয় সেটি আলোচনা করা হয়েছে কেস স্টাডির ওয়েস্টজেটের ক্রিসমাস মিরাকলে।

উপহার দেওয়ার সময় আমাদের দেশে লোকে দুই ঈদ, পহেলা বৈশাখ এবং ১ল জানুয়ারিকে বেঁছে নেন। এই উপহার ডিজাইন করার সময় মার্কেটারদের মাথায় দুটো বিষয়ের একটা থাকে-

আমার উপহারের কথা উপহার পাওয়া লোক অন্যদের বলবেন তো, অথবা

আমার দেওয়া উপহার তিনি ব্যবহার করবেন তো।

দুটো টার্গেটই আসলে নির্ভর করে উপহারের ধরণের ওপর। যেমন বছরের শুরুতে দেওয়া ক্যালেন্ডার। এটি একটি অতি দরকারি উপহার কারণ বাজারে আজকাল সে অর্থে ক্যালেন্ডার কিনতে পাওয়া যায় না। সম্ভবত এই উপহারটি লোকে চেয়েও নেয়। কয়েকটি জরিপে দেখা গেছে যে সব ক্যালেন্ডারের ছবির মধ্যে প্রোডাক্ট বা পণ্যের বর্ণণা, ছবি ইত্যাদি থাকে সেগুলোর আকর্ষণ কম। লোকে সচরাচর সেগুলো নিজেদের দেওয়ালে লাগাতে চায় না। পণ্য বা সেবার নিরস বর্ণণার চেয়ে লোকে পছন্দ করে থিমেটিক ছবি, প্রকৃতির ছবি কিংবা সফল ব্যক্তিত্বের কোন ঘটনা। ২০১৭ সালে ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক তাদের টেবিল ক্যালেন্ডারে বাংলা ১২ জন বিজ্ঞানীর জীবন ও কর্ম তুলে ধরেন। দেখা গেছে যাদের এই উপহার দেওয়া হয়েছে তাদের বেশিরভাগই এটি ব্যবহার করেছেন।
বাংলাদেশে ক্যালেন্ডারের ক্ষেত্রে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো খুবই ভাল কাজ করেন। দৈনিক পত্রিকাগুলো এক পাতার একটি বাংলা বছরের বিজ্ঞাপন পত্রিকার সঙ্গে পাঠকদের দেন। এর মধ্যে যেটি শিল্পীদের আঁকা ছবি ব্যবহার করে সেটির কথায় শোনা যায় মানুষের মুখে মুখে।

দুই ঈদের উপহার দেওয়ার সময় কোম্পানিগুলো কাজের জিনিষ দেওয়ার চেষ্টা করে। রোজার ঈদে সেমাই, দুধ, চিনি যেমন সুন্দর একটি প্যাকেটে  দেওয়া হয় তেমনি কোরবানির ঈদে তেল, মরিচ, কিশমিশ দেওয়া যায়। এখানে মার্কেটারের মার্কেটিং-এর উদ্দেশ্যের মধ্যে মার্কেটিংটা মোটেই মূখ্য থাকে না। এটি হলো প্রয়োজনের সময় ঐ ব্র্যান্ড যে আপনার সঙ্গে আছে সেই বোধ তৈরি করা। এবং অনেকেই সেটি দারুণভাবে করে।

২০১৮ সালে জিপিএইচ ইস্পাত কোরবানির ঈদে উপহার হিসাবে দেন চমৎকার পলিথিনের ব্যাগ। সেটি উপহার পাওয়াদের অনেক পছন্দের হওয়াতে ২০১৯ সালে পলিপ্যাকেটগুলোকে আরও উন্নত করেই উপহার সাজানো হয়েছে। বাংলাদেশের রাইড শেয়ারিং সার্ভিস পাঠাও ২০১৯ সালের কোরবানির ঈদে উপহার হিসাবে তেল, মিরিচ, কিসমিস এসব সুন্দের প্যাকেজিং-এর মাধ্যমে পাঠিয়েছে।

এছাড়া উপহার কিন্তু কর্পোরেট বন্ডিং –এ সাহায্য করে। এই জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অন্য প্রতিষ্ঠানের জন্মদিন বা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ফুলের তোড়া বা কেক নিয়ে হাজির হয়।

এগুলো গেল সরাসরি উপহারের বুদ্ধি। উপহারের সংস্কৃতি প্রমোট করার জন্যও আপনি বিজ্ঞাপন তৈরি করতে পারেন। টাইটানের একটি বিজ্ঞাপন আমার রিভিউ করা জয় অব গিভিং-এর অন্যতম সেরা বিজ্ঞাপন। মাত্র এক মিনিট ১১ সেকেন্ডের এই বিজ্ঞাপনে একজন শিক্ষকের শেষ ক্লাসটাকে বর্ণিল করা হয়েছে তাকে একটা ঘড়ি উপহার দিয়ে। তবে, উপহারের বস্তুর চেয়ে বেশি উপভোগ্য হয়েছে দেওয়ার কায়দাটি। ভালমতো খেয়াল করবেন উপহার পাওয়ার পর স্যারের চেহারা এবং অনুভূতি।

এরকম বিজ্ঞাপন বানানোর সময় খেয়াল রাখতে হবে গল্পের ব্যাপারটা। একটি সামান্য গল্পও আপনার জন্য খুবই কার্যকরী হয়ে উঠতে পারে। নিচের উদাহরণটিও দেখতে পারেন –

সরাসরি উপহারের কথায় আবার ফিরে আসি। ২০১৮ সালে বাংলাদেশের শিক্ষার্থী আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে প্রথম বারের মতো স্বর্ণপদক লাভ করে। আইপিডিসি সে সময় আমাকে ও আমাদের দলোর কোচ ড. মাহবুব মজুমদারকে একদিন লাঞ্চে দাওয়াত দেয়। ফিরে আসার সময় উপহার হিসাবে একটি পানির ফ্লাক্সও আমি পেয়েছি। এই ফ্লাক্সটি দেখতে খুবি সুন্দর। কাজে আমার টেবিলে নতুন কেউ যখনই এটা দেয়, তার একটা পরিকল্পনা হয় এটি সে ‘গাপ’ করে দিবে। কেউ কেউ হাতে নিয়ে – এটি আমি নিয়ে গেলাম’ বলে হাটতে শুরু করে। কিছুদূর যাওয়ার পরই আমি কেবল তাকে স্মরণ করিয়ে দেই নেওয়ার আগে যেন ফ্লাক্সটি সে ভাল মতো দেখে। এ কথা শোনার পর সবই ফ্লাক্সটি আবার আমার টেবিলে ফেরৎ দিয়ে যায়।
কেন? সেটি ফ্লাক্সের ছবি দেখেই বুঝতে পারবেন।

One Reply to “ইমোশনাল মার্কেটিং-১৪ : আর্ট অব গিভিং”

Leave a Reply