ইমোশনাল মার্কেটিং-৩ : আবেগের আমি , আবেগের তুমি, আবেগ দিয়ে যায় চেনা

Spread the love

ইমোশনাল মার্কেটিং-২: লাইক এ গার্ল

আচ্ছা, এই লেখাটা পড়ার সময় আপনার মনের অবস্থা কেমন, একটু ভাববেন।

লেখার সময় আমার মনে অবস্থাটা বলতে পারি।আজ ১৯ অক্টোবর, ২০১৮। শুক্রবার। ছুটির দিনে এমনিতেই রিলাক্স থাকি। ছুটির দিনে আমি সকালের নাস্তাতে দুইটি পরোটা খেতে পারি। এজন্য সকাল থেকে আমার মনটা ফুরফুরে থাকে। অন্যান্য দিন আমার নাস্তা হয়ে যায় ভোরে ভোরে, কিন্তু শুক্রবার সেটি ৯টার পর। কাজেই, এখন আমি নাস্তা না করেই লিখছি। কিন্তু ফুরফুরে ভাব টা নাই। মন একটু খারাপ কারণ গতকাল আমাদের ছেড়ে গেছেন আমাদের সবার প্রিয় আইয়ুব বাচ্চু। গতকাল সকালে যখন খবরটা শুনেছি, তখন বিশ্বাসই হয়নি। সেটার জের টেনেছি দিনভর, যদিও নানা ব্যস্ততাতেই দিন কেটেছে। একটি নতুন প্রজেক্টের ধারণাপত্রও গতকাল একসেপ্ট হয়েছে। অন্যদিকে গতকালই আমাদের স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক প্রথম আলো আন্তস্কুল ও কলেজ প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতার দ্বিতীয় ও চূড়ান্ত মহড়া ছিল। সেটাতে একবার মাত্র লগ-ইন করেছি। তাই পুরোটা খেয়াল করতে পারিনি। ভোরবেলায় জেনেছি ৫৩২টা এনটিটির ২২০০+ সাবমিশন। এটি একটি ওয়াও পরিসংখ্যান। সকালবেলা তাই আমার মন ভাল এবং খারাপের দোটানায়। কিন্তু, আইয়ুব বাচ্চুর কারণে মন খারাপটাই বেশি। কান্নাও পাচ্ছে। এখন যদি তার ছোটভাই, আমার স্কুল জীবনের বন্ধু ফোন করে তাহলে আমি ঠিকই কেঁদে দেবো। হয়তোবা কবি শেলীর কথাটাই ঠিক, Our sweetest songs are those that tell of saddest thought.” এ যেন – বিষাদ ছুঁয়েছে আজ, মন ভাল নেই। ঠিক আবার আমার ভালও লাগছে, কারণ গতরাত থেকে আমার এই বই-এর কাজটাও একটা গতি পেয়েছে। সবটা নিয়েই এ মূহুর্তে আমার ইমোশন।

বাংলা উইকিপিডিয়ার ভাষায়, “আবেগ-কে সংজ্ঞায়িত করা কঠিন। আবেগকে অনেকে অনুভূতির সমার্থক ধরে নেয়। যদিও অনুভূতি শারিরীক ও মানসিক দুইই হতে পারে। আবেগ মূলতঃ মানসিক। এটা এমন একটি মানসিক অবস্থা যা স্বতঃস্ফূর্তভাবেই উদ্ভূত হয়; সচেতন উদ্যম থেকে নয়। এর সঙ্গে মাঝে মাঝে শারিরীক পরিবর্তনও প্রকাশ পায়। সেক্ষেত্রে আবেগকে বলা যায় অনুভূতির উৎস। আবার শারীরিক ভাবে বলতে গেলে মসৃণ পেশী এবং বিভিন্ন গ্রন্থির কারনে শরীরের অন্তর্নিহিত পরিবর্তনই হল আবেগ ৷ সামগ্রিকভাবে, চেতনার যে অংশ অনুভূতি বা সংবেদনশীলতার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত তাকে আবেগ বলা যায়। আবেগ(Emotion) শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ Emovere থেকে”। ইংরেজি উইকিপিডিয়ায় আর একটু বিস্তারিত আছে। বলা হচ্ছে মনের সচেতন অবস্থার কারণেই একগুচ্ছ মানসিক তৎপরতা যার মূল হতে পারে আনন্দ (Pleasure) বা অসস্ততি (Displeasure)। অন্য ১০টা সাইকোলজিক্যাল বিষয়ের মতো আবেগের সংজ্ঞাতেও বিশেষজ্ঞরা একমত নন। কাজে আমরা ঐ লাইনে না যাই। আমার মনের অবস্থার বিস্তারিত বিবরণ থেকে আমরা সরাসরি মৌলিক ইমোশন বা আবেগে চলে যেতে পারি। মোটামুটি জয়টি আবেগকে মৌলিক আবেগ ধরা হয়– সুখ (Happiness), বিষন্নতা (Sadness), ভয় (Fear), রাগ (Anger),  বিস্ময় (Surprise), বিতৃষ্ণা(Disgust)। অনেকই আজকাল ভয় আর বিস্ময়কে একটা এবং  রাগ ও বিতৃষ্ণাকে একত্র করে চারটা মৌলিক আবেগের কথা বলেন। আর একটা বিষয়ও মাথায় রাখতে হয়। সেটি হলো উত্তেজনা (Excitement)। এটি আসলে আবেগের বহি:প্রকাশ, আবেগ নয়।

এখন আবার আমার এখনকার আবেগে ফিরে যাই। আমার এখনকার আবেগকে কী বলা যায় – আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যু জনিত কারণে আমি কিছুটা বিষন্ন অন্যদিকে আমি বিস্মিত কারণ প্রোগ্রামিং কনটেস্টের পরিসংখ্যান। আবার আমি আনন্দিতও কারণ বইটার কাজ হচ্ছে। জটিল মনে হচ্ছে?

না, এ হলো মনের অবস্থার হেরফের। সামান্য একটু এদিক ওদিক হলে একজন ভীত মানুষও আনন্দিত হয়ে উঠতে পারেন!!! মানে এই সীমারেখা টানাটা কঠিন কাজ। অনেকটা রঙের মতো। প্রত্যেকটা রঙের অনেক শেড, অগুনতি, অসীম! আবেগও তাই। মানে আবেগ আসলে রঙের মতোই।

ভাল একজন ইমোশনাল মার্কেটার হতে হলে ইমোশনালি ইনটেলিজেন্ট অথবা ইমোশনাল লিটারেট হওয়া দরকার। আর এজন্য দরকার ইমোশনের ব্যাপারটা বোঝা। এটির নানান মডেল আছে। মনোবিজ্ঞানী রবার্ট প্লাচিক তার “হুইল অব ইমোশন”-এ রঙের মাধ্যমে আমাদের আবেগের নানান বিষয়কে ব্যাখ্যা করেছেন। আর এই মডেলটা আমাদের মাথার মধ্যে গেঁথে ফেলতে হবে।

প্লাচিকের আবেগের চাকা
এই মডেলে মৌলিক বা প্রাইমারী আবেগ ৬টি নয়, আটটি – রাগ(anger), আন্দাজ(anticipation), আনন্দ(joy), বিশ্বাস(trust), ভয় (fear), বিস্ময়(surprise), বিষন্নতা( sadness) এবং বিতৃষ্ণা (disgust)। এরপর কৌণিকটাকে খেয়াল করেন। আপনি যতোই কেন্দ্রের দিকে যাবেন ততই তীব্রতা বাড়বে। বাস্তবে কীভাবে আমরা এটাকে প্রয়োগ করতে পারি? একঘেয়েমির কথাই ধরা যাক। আপনি যদি আপনার একঘেয়েমিকে এড্রেস না করেন তাহলে সেটা পলিনত হবে বিতৃষ্ণায় এবং শেষমেষ একটা ঘৃণার (Loathing) ব্যাপারে পরিণত হবে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। আপনি যদি এই চাকাকে মনে রাখেন, তাহলে বুঝে পারবেন আপনার তরফের ‘নিস্ক্রীয়তা’ আপনাকে কোথায় নিয়ে যাবে। মার্কেটাররা তাদের পণ্যের মোড়কে, ফিচারসেটে, বিজ্ঞাপনে প্রতিনয়ত পরিবর্তন আনে বা আনতে চায় – এটাই তার কারণ।

এখন দেখা যাক, এদের পারস্পরিক সম্পর্ক কেমন? দেখলেই বোঝা যাবে, বৃত্তের যেখানে যে আবেগ, তার উল্টোদিকেই তার উল্টোটা। যেমন বিষন্নতার বিপরীত হলো আনন্দ আর বিশ্বাসের বিপরীত হলো বিতৃষ্ণা। এন্টিসিপেশনের উল্টোটা কী বের করতে পারেন? চিন্তার একটা লাইন পাওয়া যাচ্ছে?

যে সব ইমোশনের রঙ নাই! হু, সেগুলো হলো দুইটি প্রাইমারি ইমোশনের যোগফল। যেমন আন্দাজ আর আনন্দ মিলে হলো (Optimism)। আনন্দ আর বিশ্বাস মিলে হলো ভালবাসা (Love)।

আবেগ বেশিরভাগ সময়ই জটিল। আর সেটাকে যদি আপনি একাধিক আলাদা আলাদা অনুভূতির সংমিশ্রণে প্রকাশ করতে পারেন, তাহলেই বুঝবেন ইমোশনাল মার্কেটার হওয়ার পথে আপনি একধাপ এগিয়ে গেলেন।

(আবেগের চাকা নিয়ে আমি আর বিস্তারিত লিখতে চাই না, আপাতত। আর্লি রিডার ও পাঠকরা যদি মনে করেণ আর একটু ব্যাখ্যা হতে পারে, তাহলে আমি সেটা ভাববো। আপাতত আমরা পরের পর্বে চলে যেতে পারি)।

6 Replies to “ইমোশনাল মার্কেটিং-৩ : আবেগের আমি , আবেগের তুমি, আবেগ দিয়ে যায় চেনা”

  1. বিস্তারিত হলে ভালো হতো।
    হাটি হাটি পায়ে পায়ে টাও দারুন ছিল।

Leave a Reply