ই-উদ্যোক্তা হাটের উদ্যোক্তা-৪ : তানিয়া ওয়াহাবের ট্যান

Spread the love

২০১১ সালে ‘চাকরি খুঁজব না চাকরি দেব’ এর যাত্রা শুরু। এ সময় থেকে আমার একটা অন্যতম প্রধান কাজ ছিল কয়েকজন তরুণকে খুঁজে বের করা যারা ইতোমধ্যে সফল উদ্যোক্তা। উদ্দেশ্য মহৎ। তাদেরকে আমাদের গ্রুপে যোগ দিতে বলা। তো এর মধ্যে আমি প্রথম আলো’র বাণিজ্য পাতায় একটা চামড়াজাত পণ্যের উদ্যোগ সম্পর্কে লেখা দেখলাম। জানলাম একজন নারী উদ্যোক্তা, সঙ্গে আরও ১০ জন মিলে এই উদ্যোগটি নিয়েছেন। ভাবলাম ওনাকে বলি। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখি – এরই মধ্যে পেয়েছেন এসএমই ফাউন্ডেশনের সেরা এসএমই নারী উদ্যোক্তা পুরস্কার (২০০৮), এফবিসিসিআইয়ের সেরা এসএমই নারী উদ্যোক্তা (২০১১) এবং ডেইলি স্টার-ডিএইচএলের আউটস্ট্যান্ডিং ওম্যান ইন বিজনেস (২০১৩) পুরস্কার। ২০১৫ সালে হয়েছেন এফবিসিসিআইয়ের সদস্য। বুঝলাম ভুল লোকের পেছনে দৌড়াচ্ছি। এতো এতো পুরস্কার অলরেডি পেয়েছেন।  উনি কি আর আমাদের পোলাপান, যারা কিনা মাত্র শুরু করতে চায় তাদের গ্রুপে আসবে?
তাও কী মনে করে একদিন মিন মিন করে ফেসবুকে নক দিলাম। তখন মনে হয় মেসেজ অনেক সহজ টহজ ছিল। মেসেজে গ্রুপের কথাবার্তা বলে ছেড়ে দিলাম। জানিই তো, উত্তর পাওয়া যাবে না। ওমা, রাতের বেলায় বাসায় এসে দেখি উনি রেসপন্স করেছেন এবং জানতে চেয়েছেন আমার কোন প্রশ্ন আছে কিনা?
বুঝলাম তানিয়া শুধু সুন্দরী, উদ্যমী, কর্মঠ নন ও একজন সত্যিকারের বিনয়ী উদ্যোক্তা। সেই থেকে ‘চাকরি খুঁজব না, চাকরি দেব’-এর একজন কোর সদস্য উদ্যোক্তা তানিয়া ওয়াহাব।

এখন তানিয়ার কাজ আরও বেড়েছে, এখন দেশে বিদেশে তাঁর পণ্য যায়। তবে, আর ১০ জন সফল উদ্যোক্তার মতো তানিয়ার শুরুটাও সহজ ছিল না। আমরা প্রথম আলো’তে প্রতিবছর ১০ জন তরুণকে বর্ষসেরা হিসাবে নির্বাচিত করি যারা কিনা তাদের অরুন আলোয় আমাদের বিকশিত করে। তানিয়া ২০১৫ সালে সেই তালিকাতে জায়গা করে নিলো। আমার দায়িত্ব হলো তাকে নিয়ে ছুটির দিনে এক পাতা লেখা। সেই লেখাটা এখান থেকে পড়ে নেওয়া যাবে। সেখানেই জানা যাবে তানিয়ার তানিয়া হয়ে ওঠার গল্প।

তানিয়া আমাদেরই একজন। আমাদেরই একজন হওয়ার জন্য তাঁকে অনেকেই খোঁচা দেয়। তার মতো একজন সফল হেভিয়েয়েট কেন আমাদের পোলা-পানের পেছনে সময় দেয় সেটা নিয়েও সে অনেক বকা খায়। কিন্তু নতুনদের এগিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁর কাজ তাতে ক্ষ্যামা পায় না। আমাদের উদ্যোক্তা হাট হোক, ই-ইদ্যোক্তাহাট হোক, উদ্যোক্তা সম্মাননা হোক কিংবা হোক নারী উদ্যোক্তা সম্মিলন- সবটাতেই তানিয়ার থাকে উজ্জ্বল উপস্থিতি।

শুরুতে কারিগর নিয়ে কাজ হলেও এখন কারিগরের পাশাপাশি তানিয়া গড়ে তুলছেন নিজের একটা আলাদা ব্র্যান্ড ট্যান(TAN)। চামড়া ওচামড়াজাত পণ্যের ব্র্যান্ড। আমমি যে বেল্টগুলো পড়ি সেগুলো সবই ট্যানের। ইমেডিয়েট আগের মানিব্যাগটাও তাই ছিল। ট্যানের পন্য যাচ্ছে পৃথিবীর প্রায় ১৫টা দেশে। অস্ট্রেরিয়াতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ডিলারের। ওরা খেয়াল করবে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বাজারের। বাহরাইন, জর্দানসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে ট্যানের পন্য প্রশংসিত হচ্ছে। তবে, নিজের ব্র্যান্ডের পাশাপাশি কাস্টোমাইজড পণ্য বানানো অব্যাহত রেখেছে।

বছর দুয়েক আগে ওর ফ্যাক্টরিতে গিয়েছিলাম। সেসময়ের একটা ছবি দিলাম এখানে।

“বাংলাদেশ সারাজীবন অন্যের ব্রান্ডেই কাজ করল” এই দু:খ ঘুছিয়ে ” আমাদের স্বপ্ন নিজেদের ব্রান্ড নামেই পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠা পাওয়া”।

আগেই বলেছি আমাদের সব আয়োজনে তানিয়া ওয়াহাব থাকে। কখনো স্পন্সর হিসাবে, কখনও অংশগ্রহণকারী হিসাবে। াবার যদি আমি দেখি আমাদের লোগোর সংখ্যা কম, তখন আমি ওর লোগো বসিয়ে দিয়ে ইনভয়েসটা পাঠিয়ে দেই।

বিশ্বের বুকে লাল-সবুজের নতুন ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠার তানিয়ার সংগ্রাম জয় যুক্ত হোক।

Leave a Reply