ই-উদ্যোক্তা হাটের উদ্যোক্তা-১ : নিয়াজ ও তাঁর লাভ গরু

Spread the love

নিয়াজ আহমেদকে আমি চিনি কয়েক বছর ধরে। তবে ওর কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারি যখন ও আমাদের মার্কেটিং গিল্ডে যোগ দেয়। মূলত যারা বেটার ক্যারিয়ার অপরচুনিটি খুজছে, তাদের নিয়েই নিয়াজের কাজ। যারা একটি কোম্পানি থেকে অন্য কোম্পানিতে আরও ভালো সুযোগ সুবিধা নিয়ে জব সুইচ করতে চান, তাদের রিজুমি আপডেট করে দেয় এবং ক্যারিয়ার বিষয়ক নানান রকমের দিক নির্দেশনা দেয়। কিন্তু যখনই করোনাকাল শুরু হয় তখনই অন্য অনেক উদ্যোক্তার মতো ও বিপদে পড়েছে। তারপরই আমি লক্ষ করলাম নিয়াজ শুরু থেকে ভিন্নভাবে এই কাল মোকাবেলার উদ্যোগ নিয়েছে। ও দ্রুত নিজের অফিস ছেড়ে দিয়েছে। বাসায় চলে এসেছে এবং কর্মীদের হোম অফিসের সুযোগ দিয়েছে। তারপরই ও একটা অন্যরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা এই সময়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। সেটি হলো ব্যবসাতে বৈচিত্র যোগ করা।

এরপরই আমি দেখলাম নিয়াজ শুরু করেছে লাভ গরু নামে একটি আয়োজন। এবং এই উদ্যোগ নিয়েই ও যোগ দিয়েছে ই-উদ্যোক্ত হাটে। এই নিয়ে নিয়াজের সঙ্গে সম্প্রতি আমার কিছু কথা হয়েছে। এখান তার নির্বাচিত অংশ –

মুনির হাসান‘লাভ গরু’ নামে নতুন এই উদ্যোগের কাজ কী? কেন এটা শুরু করলে?

নিয়াজ আহমেদ – এখন করোনার কারনে অনেকেই বাইরে বের হতে পারছে না। সকলের নিরাপত্তার জন্যে আসলে ঘরে থাকাটাই উত্তম, আগের মত জনসমাগম করা এখন বেশ ঝুঁকিপূর্ণ, তো এরকম একটা অবস্থায়, আসলে ঘরে সবাই বসা। তো তখনই মনে হলো, যদি এই সময়ে কিছু একটা করে আয় করা যায়। রান্নার প্রতি এবং খাওয়া দাওয়ার প্রতি একটা বাড়তি ঝোক সব সময়ই কাজ করতো, তাই মনে হলো এটাকে নিয়ে যদি কোন বিজনেস প্ল্যান করা যেতো।

আমার স্বপ্নটার নাম দিয়েছি “লাভ গরু”, স্বপ্নটার কাজ বাস্তবে, চুইঝাল দিয়ে গরুর গোস্ত রান্না করে বাড়ি বাড়ি হোম ডেলিভারি দেয়া। আমরাও উদ্যোগতা হাটে অংশ নিচ্ছি। আমাদের চুইঝাল আনা হয় খুলনা থেকে, ঘরে রান্না করে আমরা হোম ডেলিভারি দেই। আমরা বেশ অল্প তেলে সুস্বাদু করে রান্না করি। প্রতি কেজিতে ১২-১৪ পিস গোস্ত থাকে, প্রতি কেজি চুইঝাল দিয়ে রান্না গরুর গোস্তের দাম ১৬০০টাকা, তবে মেলা উপলক্ষে আমরা ১২৫০টাকা দাম রাখছি, আমরা প্রতি বুধবার রাধি এবং ঢাকার ভেতরে প্রায় সব জায়গায় আমরা ডেলিভারি দেই। ডেলিভারি ফি রাখি ১০০টাকা।

মুনির হাসান – বাহ! তবে তোমার বিরুদ্ধে আমার একটা অভিযোগ হলো তুমি এই কাজটা শুরু করলে যখন কিনা আমার গরুর মাংস খাওয়ার ব্যাপারে সুযোগ কমে গেল। যা হোক। আমি দেখলাম তুমি ই-উদ্যোক্তা হাটে যোগ দিয়েছো। তোমার তো বলতে গেলে মাত্র শুরু। এমন সময়ে এমন হাটে যোগ দেওয়াটা কী ঠিক হলো?

নিয়াজ আহমেদ– একজন উদ্যোক্তা টিকে গেলে কমপক্ষে ১০ জনের কর্মসংস্থান হয়। এই টিকিয়ে রাখার জন্যে একটু ঠেলা দরকার, একটু প্রমোট করা দরকার। চলমান সময়ে, “তুমি পারবে”, এটুকু বললেও অনেক সাহস পাই। সবার একটু সহযোগিতা দরকার। নতুনদের জন্যে একটু প্ল্যাটফর্ম দরকার। একা একা সব লাইন ঘাট তো চিনি না।

এই লাইনঘাট গুলোতে যাতে আমাদের মতো মানুষ যাদের, একেবারেই ঘরে থেকে কাজ করা ছাড়া যাদের আর তেমন কোন উপায় নেই, তারা যেন নিজেকে একটু তুলে ধরতে পারে, কাজগুলো একটু বলতে পারে, দেখাতে পারে, তার জন্যেই ই-উদ্যোক্তা হাটের এই আয়োজন। এখানে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি কোম্পানি (পড়ুন স্বপ্ন) নিজের পণ্য বা সেবা সবার সামনে উপস্থাপনার সুযোগ পাচ্ছে।

মুনির হাসান – হাট থেকে কী কী সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে?

নিয়াজ আহমেদ – এই মেলাতে আমরা যারা অংশ নিচ্ছি প্রত্যেকে ১০টা পোস্ট দিতে পারবো লাইভ করতে পারবো। মেলার প্রথম দুই দিন অনেককে দেখছি, পোস্ট দিয়ে প্রোডাক্ট সেল করেছেন, লাইভে এসছেন। পুরো ব্যাপারটা মনিটর করা হচ্ছে, আমাদের সাথে ফোনে কথা বলা হয়েছে। মেইলে প্রতিটি আপডেট আসছে। কোম্পানিকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে খুবই ভালো উদ্যোগ।

মুনির হাসান – হাটের দুইদিন গেলো। এই দুইদিনের কোন অভিজ্ঞতা শেয়ার করা যায়?

নিয়াজ আহমেদ – আজকে (১৮ জুলাই) হাটের দ্বিতীয় দিন গেলো। দিনে দিনে মানুষের অভ্যাসে যে কতো চেঞ্জ আসছে, তা এরকম আয়োজন থেকেই বোঝা যায়। ইভেন, গত বছরও আমরা কল্পনাও করিনি, এবছর অনলাইনে কোরবানির হাট বসবে, অথচ তাই বসেছে। আগামী ৪ বছরে দেশ যেটুক ডিজিটাল হতো, তা মনে হয় ৪ মাসে হয়ে গেছে। আগে মানুষ মার্কেটে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা ঘুরতো, প্রোডাক্ট কেনার জন্যে। এখন মানুষ অনলাইনে ঘোরে, আমি নিজেই ফুড ডেলিভারি সার্ভিস দেয়, এমন পেজগুলো প্রায়ই চেক করি। সামনে এরকম মেলা আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলে আশা করছি।

মুনির হাসান – এবার অন্য একটি প্রসঙ্গে কথা বলি। করোনাকালে ঠিকে থাকার জন্য ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য তোমার কোন পরামর্শ আছে?

নিয়াজ আহমেদ — যাদের আমাদের মতো ফিজিক্যালি কাজ করার সুযোগ বা সামর্থ্য নেই, তাদের তো আসলে বিকল্প পন্থায় যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। বাচতে হলে কিছু একটা তো করা লাগবে। আমার মনে হয়, যে বিজনেস একেবারেই জানেন না, বোঝেন না, তা না করাই উত্তম। আরেকজনের দেখাদেখি, হুট করে না জেনে, না বুঝে কিছু একটা করতে গেলে, সেখানে কখনওই সাফল্য আসে না। ভালো করে পরিকল্পনা করা দরকার। ব্রায়ান ট্রেসি বলেন, প্রোপার প্রায়োর প্ল্যানিং প্রিভেন্টস পুয়োর পারফর্মেন্স। বাজারে ভালো করতে হলে, টিকে থাকতে হলে, এই প্ল্যানিংটা খুবই দরকারি।

নিয়াজ আহমদের সিভি সহায়তা উদ্যোগের লিংক
এবং লাভ গরুর লিংক

 

One Reply to “ই-উদ্যোক্তা হাটের উদ্যোক্তা-১ : নিয়াজ ও তাঁর লাভ গরু”

Leave a Reply