ডিজিটাল অর্থনীতির এনালগ ভিত্তি

Spread the love

২০০৭ বা ২০০৮ সালের কোন এক সময়ে সেই সময়কার ভারতের নতুন রাজ্য ঝাড়খন্ডে গিয়েছিলাম। ঝাড়খন্ড হলো বিহারের অংশ, সব ডাকাত-দস্যুদের উৎপাত। তো,  কোন ডাকাত যখন জেল থেকে আদালতে হাজিরা দিতে আসতো তখন তার অনুসারীরা বোমা ফাটিয়ে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যেতো।
অনেক চিন্তা ভাবনা করে একটা সমাধান তারা বের করলো। খুব সহজ। আদালতের সঙ্গে কারাগারের ফাইবার অপটিক সংযোগ থাকবে। কাজে আদালতে হাজিরা দেওয়ার জন্য আসামীকে আর আনতে হবে না। ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমেই হাজিরা।
তো, ফাইবার ক্যাবল বসানো, জেলখানায় একটা হাজিরা রুম ইত্যাদি করে ফেলা হলো। কিন্তু, চাইলেই কি আর তা হয়? সিআরপিসিতে বলা আছে সশরীরে হাজির হতে হবে। আর সিআরপিসি সংশোধন? বাপরে বাপ। ঐটা ব্রিটিশদের করা। কেমনে চেঞ্জ করবে?
তো, আইসিটি সচিব আর আইটি মন্ত্রীর কী আর করা, চুপচাপ বসে থাকে।
এর মধ্যে একদিন রাজ্যসভার মিটিং চলাকালেই জানা গেল এক দুর্ধর্ষ ডাকাতকে তার অনুসারীরা আদালতে আসার পথে তুলে নিয়ে গেছে। সংসদে ব্যাপক হৈচৈ।  সবাই পারলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে একেবারে কাবু করে ফেলেন।
অনেকক্ষণ চুপ থেকে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাড়ালেন তরুণ আইটি মন্ত্রী। বললেন – এ সমস্যার একেবারে সহজ একটি সমাধান তার কাছে আছে।
সবাই হৈ হৈ করে উঠলো – কী সে সমাধান।
তখন আইটি মন্ত্রী বললেন – ডাকাতদের জেলখানার হাজতে রেখেই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতে হাজিরা দেওয়ানো সম্ভব। তারপর তিনি সংসদে ঘটনা কীভাবে হবে তার একটা নমুনা দেখালেন। সবশেষে বললেন – দেশের প্রধান প্রধান কারাগারগুলোতে ভিডিও কনফারেন্সিং সিস্টেম তিনি অলরেডি তৈরি করে ফেলেছেন। কিন্তু এই কাজটা সম্ভব নয়।
“কেন নয়। কেন আমরা পারবো না”।
-পারবেন না। কারণ এটা করতে হলে ব্রিটিশদের বানানো সিআরপিসিতে হাত দিতে হবে, হাত দিতে হবে আরও কিছু জরুরী আইনকানুনে। সেগুলো করার হিম্মত এই সংসদের নাই।
ব্যাস। যায় কোথায়। সবাই তখন সংসদের ক্ষমতা দেখানোতে নেমে পড়লেন। ঐ দিনই ছিল সংসদের সেই অধিবেশনের নিয়মানুযায়ী শেষদিন। কিন্তু সব সংসদ সদস্য মিলে সংসদ তিনদিনের জন্য মূলতবী ঘোষণা করে আইটি আর আইনমন্ত্রীকে দায়িত্ব দিল যেন কী করতে হবে সেটা নিয়ে তারা তিনদিন পরে সংসদে আসে।
আইটি মন্ত্রী তো জানেন কী করতে হবে। পরদিন তার মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রীপরিষদে ফাইল গেল প্রয়োজনীয় সংশোধনীর। প্রাদেশিক মন্ত্রীসভা সেটা অনুমোদন করে দিল। তিনদিন পরে সংসদে উত্থাপিত হলো কয়েকটি আইনের সংশোধনী। পাঠানো হলো স্থায়ী কমিটিতে। কমিটির সদস্যরা বলতে গেলে রাতদিন কাজ করলেন। সংসদ মূলতবী থাকলো কয়েকদিন।
এভাবে প্রথম থেকে ১০ দিনের মাথায় পাস হলো প্রয়োজনীয় সংশোধনী। এবং তারপর থেকে ঝাড়খন্ডে আর যাই হোক আদালতে হাজিরা দিতে আসার বা যাওয়ার পথে কোন ডাকাতকে আর তুলে নেওয়া যায় না!
গত বছর ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট রিপোর্টের বিষয়বস্তু ছিল – ডিজিটাল অর্থনীতির এনালগ ভিত্তি। এ বছরেরটা পড়তে শুরু করতে গিয়ে গতবছরের কথা মনে পড়লো। আর মনে পড়লো এই ঘটনার কথা।
এক জেলখানায় সে ভিডিও সিস্টেম দেখেও এসেছি।
ফেরার দিন আমাদের হোস্টকে বললাম, ২০০৩ সালে আমাদের জেলখানার জন্য এরকম একটা সিস্টেমের প্রস্তাব দিয়েছিলাম আমরা বুয়েট আইআইসিটি থেকে। কিন্তু কেউ সে কথা শোনেনি।
এবারের বাজেট নিয়ে কিছু লেখালেখি করার জন্য পড়ালেখা করছি। সেটা করতে গিয়ে মনে হল ডিজিটাল দেশের জন্য যে এনালগ ভিত্তি লাগে সেটা কি আমরা ভাবি?

শুভ রাত্রি।

 

Leave a Reply