ডেলিভারিং হ্যাপিনেস – দ্বিতীয় খন্ড- পর্ব ২:  বিশ্বাসে মিলায়…

Spread the love

ডেলিভারিং হ্যাপিনেস – দ্বিতীয় খন্ড- পর্ব ১:  যোগ্যরাই টিকে থাকে...

জাপ্পোসের হিসাবের খাতার দিকে তাকিয়ে আমরা বুঝলাম কেবল খরচ কমালে আমরা কখনো মুনাফার দেখা পাবো না। যে কোন মূল্য আমাদের বিক্রি বাড়াতে হবে। এটি খুবই কঠিন বিষয়। কারণ এরই মধ্যে আমরা আমাদের মার্কেটিং বাজেট ছেঁটে দিয়েছি। এবং জোর দিয়েছি পুরাতন কাস্টোমারের দিকে। কিন্তু সেটি দিয়ে আমাদের গ্রেথ কিন্তু হচ্ছে না।

আমাদের আসলে দরকার একটা চেরাগ। আলাদিনের চেরাগ!

একদিন আমি আর ফ্রেড গ্রোথ বাড়ানোর প্ল্যান করার জন্য গেলাম আমাদের রেস্তোরার বারে। আমি একটা সোডা আর ফ্রেড একটা বিয়ারের অর্ডার দিলাম।
তারপর ফ্রেডের কাছে জানতে চাইলাম, “কীভাবে আমরা দ্রুত আমাদের বিক্রি বাড়াতে পারি? কোন ধারণা?”
ফ্রেড বললো, “আমি মার্চ্যান্ডাইজিং ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছি। আমি জানি যদি আমরা ঠিক সময়ে ঠিক প্রোডাক্ট ঠিক পরিমাণে দিতে পারি তাহলে বিক্রি নিজের মতোই বাড়বে। ঝামেলা হলো যে সব ব্র্যান্ড বা স্টাইল বিক্রি বাড়াবে বলে মনে করছি সেগুলো আসলে আমরা বেচিনা। আমাদের কাস্টোমারদের দেওয়ার জন্য আমাদের আসলে রাইট প্রোডাক্টই নাই!”
“আমরা কীভাবে, তোমার ভাষায়, এই রাইট প্রোডাক্ট পেতে পারি”
“সমস্যা হলো অনেক ব্র্যান্ড আসলে ড্রপ শিপিং করে না। কিন্তু সেগুলো যদি আমরা রাখতে পারতাম তাহলে বিক্রি বাড়তো।” ফ্রেড তার মতামত দিচ্ছে, “তাদের ওয়্যারহাউসগুলো অন্যরকম। আমাদের কাস্টোমারদের অর্ডার গ্রহণ করে সেগুলো শিপ করার কোন সক্ষমতা তাদের নেই। তার ইচ্ছেও তাদের নেই। অন্যদিকে যারা ড্রপ-শিপিং করে তারা নিজেরাই নিজেদের সেরাগুলো বেচতে চায়। আমাদের দেয় তলানির গুলো।”
ফ্রেডের কথাগুলো আমার চিন্তার জগৎকে অন্যদিকে নিয়ে গেল। আমি অবাক হয়ে জানতে চাইলাম, “তাহলে। কীভাবে তাহলে রাস্তার দোকানগুলো তাদের স্টোরে সব ভাল ভাল ব্র্যান্ডের জুতা রাখে এবং বিক্রি করে?”
“কারণ, তারা ইনভেন্টরি কেবল নিজের কাছেই রাখে না, তারা সেটা ওউনও করে”। ফ্রেড ব্যাখ্যা করলো, “দোকানগুলো তাদের ভবিষ্যতের বিক্রির একটা ফোরকাস্ট করে এবং ব্র্যান্ডের কাছ থেকে কোন একটা দরে সে জুতাগুলো কিনে নিজেরাই মজুত করে। সময় মতো সেই জুতা বিক্রি করার দায় তার। জুতা কোম্পানির বা পাইকারের নয়।কিন্তু আমরা সেটা করতে পারি না। কারণ সেটা আমাদের ব্যবসার মডেল নয়।”

আমাদের ড্রিঙ্কও শেষ হয়ে গেল।

‘আর একটা নেই?” আমি ফ্রেডের দিকে তাকালাম। ফ্রেড কথা না বলে বারটেন্ডারকে আরও এক রাউন্ডের জন্য অনুরোধ করলো।
“আমরাও যদি তাই করি।” আমি উচ্চস্বরে আমার চিন্তাটা প্রকাশ করলাম। “আমরা যদি নিজেদের মজুত রাখি, দায়িত্ব নেই এবং তোমার পছন্দের জুতা যদি তুমি নিতে পারো তাহলে আমাদের বিক্রি কেমন বাড়বে?” আমি ফ্রেডের দিকে তাকিয়ে আছি।

“আমাদের বিক্রি তিনগুণ বাড়বে”। কোনো চিন্তা না করেই ফ্রেড বললো। “এমনকী এরচেয়েও বেশি বাড়তে পারে।”

“তাহলে সেটা করার জন্য আমরা ভাবি। কী কী করতে হবে তার একটা লিস্ট বানাই। বেঁচে থাকার জন্য যদি বিজনেস মডেল চেঞ্জ করতে হয় তাহলে তাই আমাদের করতে হবে”।

পরের এক ঘন্টা আমি আর ফ্রেড মিলে আমাদের করণীয় ঠিক করার চেষ্টা করলাম। ড্রপ-শিপিং যা আমরা করছি তার বাইরে যদি আমাদের নিজস্ব মজুত রাখতে হয় তাহলে আর কী কী করা দরকার। ঘন্টা খানেক পরে আমরা দুজনে মিলে একটা তালিকা করতে পারলাম

১) আমাদের একটা টিম লাগবে যারা কোন্ জুতা কেনা হবে সে সিদ্ধান্ত যেমন নেবে তেমনি সেগুলোর হিসাবও রাখবে। ইনভেন্টরির কাজ হবে তাদের। শুরুতে ফ্রেড এটা নিজে করতে পারবে, পরে একটা ডেডিকেটেড টিম লাগবে।

২) বিভিন্ন ব্র্যান্ড যেন আমাদের কাছে তাদের জুতা বিক্রি করে সে জন্য চেষ্টা করতে হবে। কারণ বেশির ভাগ ব্র্যান্ড ফিজিক্যাল স্টোর ছাড়া জুতা বিক্রি করে না।

৩) আমাদের ওয়েবসাইট সফটওয়্যারকে পরিমার্জন করতে হবে। এতদিন আমরা কেবল প্রোডাক্ট বিক্রি করেছি যার ইনভেন্টরি আমাদের কাছে নেই। কিন্তু এখন মজুত মালও বেচতে হবে।

৪) আমাদের একটা গুদামের বন্দোবস্ত করতে হবে। সেই সঙ্গে টিমে সে সকল লোকও লাগবে যারা এখান থেকে মাল কাস্টোমারকে কুরিয়ার করবে।

৫) ২ নম্বর পয়েন্টকে মোকাবেলা করার জন্য আমাদের একটা ফিজিক্যাল স্টোর খুলতে হবে। আমাদের টেকা-টুকার যে অবস্থা তাতে কেউ আমাদের কোন জায়গা ভাড়া দেবে না এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়।

৬) যে মজুত আমরা গড়ে তুলতে চাই, সেটা কেনার জন্য টাকার যোগানের ব্যবস্থা করতে হবে। ফ্রেডের হিসাবে আমাদের মাত্র দুই মিলিয়ন ডলার লাগবে এই কাজে। আমরা বুঝলাম এ অতিরিক্ত টাকা আমাদের হাতে নেই।

৭) ওপরের সবকিছু দ্রুত এবং মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে আমাদের করতে হবে।

ফ্রেড আর আমি কাজ ভাগ করে নিলাম। ফ্রেড ১ আর ২ নিজের কাঁধে নিল। টিমের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে কাজ করে আমি ৩ নম্বরের একটা গতি করতে পারবো বলে মনে করলাম। জুতা মজুত করার জন্য আমাদের জায়গা দরকার। আমরা বের করলাম যদি আমরা সবাইকে অফিসের এক কোণে চাপায় দেই, তাহলে কমবেশি অর্ধেক জায়গা আমরা বের করতে পারবো। আপদকালীন হিসাবে এতে চলবে।

“৫ নম্বরের কী করবে?” ফ্রেড জানতে চাইলো।

“কী হয়, যদি আমরা আমাদের অফিসের রিসেপশন স্পেসটাকে একটা টেম্পোরারি দোকানে রূপান্তরিত করি?” আমি প্রস্তাব করলাম। “কয়েকজন ডেডিকেটেড থাকলো জুতা বিক্রির জন্য! দিন শেষে যদি সেখানে এক জোড়া জুতা বিক্রি হয় আর বাকী জুতা আমরা ইন্টারনেটে বিক্রি করি, তাহলে কী আমাদের দোকান সত্যিকারের দোকান হিসাবে বিবেচিত হবে?”

“আমার ধারণা অনেক ব্র্যান্ডই এটা মেন নেবে। তবে নাক উঁচু ব্র্যান্ডগুলো রাজি নাও হতে পারে” বললো ফ্রেড।

“তাহলে আমরা এটা দিয়ে শুরু করতে পারি। তারপর আমরা খোঁজ নেই, আশে পাশে কোন শহরে ছোট-খাটো কোন স্টোর ব্যবসা করতে পারছে না দেখে বিক্রি হবে। তখন আমরা সেটা কিনে নিলাম। তখন ঐ স্টোরে যারা মাল দেয় তাদেরগুলোও আমার বেচতে পারবো। অনলাইনেও পারবো।”

ফ্রেডের দৃষ্টিভঙ্গি দেখে মনে হলো ও খুব একটা কনভিন্স নয়। তারপর ও প্রশ্ন তুললো ৬ নম্বর নিয়ে। “টেকা? টেকা কই পাবো?”

আমি বললাম – এটা আমাকে ভাবতে দাও। তুমি ভাবো। যদি তুমি কোন ব্র্যান্ডকে আমাদের কাছে জুতা বিক্রি করতে রাজি করাতে পারো, তাহলে মনে করো তুমি টাকা পেয়ে গেছো। ডান?

আমার কোন ধারণা নেই এই স্বল্প সময়ে ফ্রেড কীভাবে ব্র্যান্ডগুলোকে রাজি করাবে। একইভাবে ফ্রেডও জানে না, কীভাবে আমি এতো এতো টাকা যোগাড় করবো। কিন্তু আমরা দুজন দুজনকে বিশ্বাস করি।

এ ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কী করার আছে। এই পদ্ধতির ফলে হয় জাপ্পোস ধীরে ধীরে মাথা তুলে দাঁড়াবে অথবা দ্রুতই মরে যাবে। যা আছে কপালে!

শুধু ফ্রেড ভাবতে পারেনি কথা বলতে বলতে আমি ২ মিলিয়ন ডলারের একটা পরিকল্পনা দাঁড় করিয়ে ফেলেছি মনে মনে। কিন্ত সেটা আমি ফ্রেডকে জানাইনি।আমি ঠিক করে ফেলেছি আমার নামে যতো সহায় সম্পত্তি আছে সব আমি বিক্রি করে ফেলবো। কার আমি জাপ্পোসে বিশ্বাস করি এবং আমি ফ্রেডেও বিশ্বাস রাখি।

আল্লাহ ভরসা!

পরের পর্ব – মজুত নিয়ে মজুতামি

[জাপ্পোসের সিইও টনি সেই-এর বিখ্যাত বই ও দর্শন সুখ বিতরণের কিছু অংশ আমি অনুবাদ করছি আমার মত করে, আমাদের উদ্যোক্তাদের জন্য। এটি আক্ষরিক অনুবাদ নয়]

One Reply to “ডেলিভারিং হ্যাপিনেস – দ্বিতীয় খন্ড- পর্ব ২:  বিশ্বাসে মিলায়…”

Leave a Reply