ডেলিভারিং হ্যাপিনেজ ১৬ : গেট সেট গো

Spread the love

আগের পর্ব ডেলিভারিং হ্যাপিনেজ- পর্ব-১৫ : চাকরিটা আমি ছেড়ে দিচ্ছি, বেলা শুনছো

ওরাকলের চাকরি ছাড়ার কয়েকদিনের মধ্যে আমাদের এডভেঞ্চারের স্বপ্ন ফিকে হতে শুরু করলো। আমরা যে ফ্যান্টাসির কথা ভেবেছি তার কিছুই হচ্ছে না। আমি আর সঞ্জয় এপার্টমেন্ট বসে উথাল পাথাল চিন্তা করি কিন্তু তেমন কিছু করতে পারি না। আমার বাবা আগেই আমাকে বলেছিল – কাজটা ঠিক হচ্ছে না। ওরাকল একটা বড়ো কোম্পানি। ওখানেই থাক। এক সময় অনেক উন্নতি হবে। বাড়ি গাড়ি হবে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে আমার আর সঞ্জয়ের মনে হতে শুরু করলো কাজটা মনে হয় ঠিক হয়নি। 

পরের কয়েক সপ্তাহ আরও খারাপ গেল। হতাশারও। দেখা গেল আমরা সারাদিন ইন্টারনেটে ঘাটাঘাটি করি কেমন করে নিজেদের চাঙ্গা রাখবো তা জানার জন্য! এর মধ্যে আমরা আবিস্কার করলাম ওয়েব ডিজাইন করতে আমাদের ভাল লাগে না। কী যে ভাল লাগে, আল্লাহ মালুম। টেকা-টুকা নিয়ে আমাদের সেরকম তেমন চিন্তা ছিল না। কারণ আমাদের যথেষ্ট সঞ্চয় ছিল। বছরখানেকের জন্য এপার্টমেন্ট ভাড়া আর খাবারের টাকা আমাদের আছে। 

এ সময়ের মধ্যে একমাত্র ভাল দিক হলো আমরা বের করেছি আমাদের কী ভাল লাগে না। আমাদের ওরাকলের চাকরি ভাল লাগে না। আমাদের ওয়েব ডিজাইন ভাল লাগে না। আমাদের সেলস কল ভাল লাগে না।

আমরা ভাবলাম তাহলে আমরা খুঁজি কী করা যায়। নতুন কী করলে ভাল হবে।

এরকম একদিন অবসাদ কাটানোর জন্য আমরা ঠিক করলাম একটা নতুন কোডিং করা যাক। ইন্টারনেট লিঙ্ক এক্সচেঞ্জ (ILE) নামে একটা আইডিয়া আমরা কোড করলাম। পরে এখান থেকে ইন্টারনেট কথাটা ফেলে দিলাম (LE)।

এই আইডিয়া খুবই সহজ। যাদের ওয়েবসাইট আছে তারা আমাদের সাইটে সহজে রেজিস্টার করতে পারবে, নিখরচায়। তখন আমরা তাকে কিছু স্পেশাল কোড সেগমেন্ট দিয়ে দেবো। তাহলে তাদের ওয়েবসাইটের নির্দিষ্ট স্থানে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আমাদের ব্যানার বিজ্ঞাপন দেখা যাবে। তাদের ওয়েবসাইটে যতোবার একজন ভিজিটর ব্যানার এডটা দেখবে ততোবার সেটি হাফ-ক্রেডিট আর্ন করবে। এভাবে যদি ১০০০ জন আসে তাহলে ঐ সাইট ৫০০ ক্রেডিট পাবে। আর এই ৫০০ ক্রেডিট দিয়ে আমরা তার ওয়েবসাইটের বিজ্ঞাপন দিয়ে দেবো আমাদের লিঙ্ক এক্সচেঞ্জ সাইটে। ৫০০ ইমপ্রেশন। এভাবে যে সব সাইটের বিজ্ঞাপনের বাজেট নাই, তারা আমাদের মাধ্যমে নিজেদের প্রচার করতে পারবে। বাকী ৫০০ ইমপ্রেশন আমরা আমাদের জন্য রেখে দেবো।

আমরা ধারণা করলাম যদি আমরা অনেক বেশি পপুলার হতে পারি তাহলে এই বিজ্ঞাপনের ইমপ্রেশন আমরা কর্পোরেটদের কাছে বেচতে পারবো। কাজে সপ্তাহান্তে আমরা সাইটটা বানিয়ে ফেললাম এবং ছোট ছোট ৫০টি সাইটকে ই-মেইল করলাম যে ওরা এই সুযোগ নিতে চায় কিনা। এই ৫০ সাইট আসলে আমরা বিভিন্ন সময়ে লক্ষ করেছি ইন্টারনেটে ঘোরাঘুরি করার সময়।
এবং আমাদের আশ্চর্য করে দিয়ে ২৪ ঘন্টার মধ্যে এর অর্ধেকের বেশি আমাদের সঙ্গে সাইন আপ করে ফেললো!

ঐ সব ছোট ছোট ওয়েবসাইটে লোকজন আসতে শুরু করলো এবং আমাদের ব্যানার এড দেখতে থাকলো। তখন একটা মজার ব্যাপার হলো। যারা দেখলো, তাদের মধ্যে অনেকেরই ওয়েবসাইট আছে এবং তারাও আমাদের সাইটে এসে নিবন্ধন করতে থাকলো। সপ্তাহখানেকের মধ্যে আমরা বুঝলাম লিঙ্ক এক্সচেঞ্চ একটা বড় ব্যবসা হতে পারে এবং আমাদের উচিৎ এ নিয়ে কাজ করা। 

কাজে পরের পাঁচ মাস আমরা উদয়াস্ত পরিশ্রম করতে শুরু করলাম। প্রতিদিনই নতুন নতুন নিবন্ধন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা। এ সময় আমরা মোটেই কীভাবে টাকা কামাবো সেটা নিয়ে ভাবি নাই। আমরা কেবল আমাদের সার্ভিসটাকে ঠিক রাখার ব্যবস্থা করলাম।
আমি আর সঞ্জয় নিজেদের কাজ ভাগ করে নিলাম। আমাদের অর্ধেক সময় থাকতো সাইটের মান উন্নয়ন, কোডিং-এর উন্নয়ন এবং বাগ ফিক্সিং ও স্কেলাবিলিটি বাড়ানো। আর বাকী অর্ধেস সময় আমরা সাপোর্টে আসা সব মেইলের জবাব দিতে শুরু করলাম।
মেইলের জবাব দেওয়াটা আমরা রিলিজিয়াসলি নিলাম। মানে প্রত্যকেটা ই-মেইলের জবাব দেওয়া। এবং আমরা চেষ্টা করতাম ১০ মিনিটের মধ্যে জবাব দিতে। ফলে যারা সাপোর্টে মেইল দিচ্ছে তারা সবাই বিস্মিত হতেও বাকী থাকলো না।অচিরেই আমরা এমন জায়গায় পৌঁছালাম যে, আমাদের পক্ষে ই-মেইলের জবাব দেওয়া কঠিন হয়ে গেল। সে সময় শহরের বাইরে থেকে এক বন্ধু আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসে। আমাদের অবস্থা দেখে সে তখন ই-মেইলের জবাব দেওয়া শুরু করে। ঐ ব্যাটা আর কখনো আমাদের ছেড়ে যায় নি। 

আমরা এতো পরিশ্রম করতে শুরু করলাম যে কখনো কখনো বুঝতে পারতাম না ঐ দিন কী বার! কিন্তু আমরা তখনো জানতাম না আমাদের ব্যবসাটা কেমন করে হবে। খালি জানতাম বড় কিছু হবেই হবে। 

এর মধ্যে ১৯৯৬ সালের আগস্টের একদিন আমরা নিউ ইয়র্ক থেকে লেনি নামের একজনের ফোন পেলাম।

পরের পর্ব – বেঁচবো না কি বেঁচবো না

[জাপ্পোসের সিইও টনি সেই-এর বিখ্যাত বই ও দর্শন সুখ বিতরণের কিছু অংশ আমি অনুবাদ করছি আমার মত করে, আমাদের উদ্যোক্তাদের জন্য। এটি আক্ষরিক অনুবাদ নয়]