ডেলিভারিং হ্যাপিনেস-২৩ : আয়েস করে আলসেমিতে

Spread the love

ডেলিভারিং হ্যাপিনেস ২২ : পোকার পোকার পোকার

নতুন কী করবো এটা ঠিক করার জন্য ভাবতে শুরু করলাম। এর মধ্যে আমি শেয়ার বাজারেও প্রচুর টাকা নিয়ে খেললাম। শেয়ার বাজারে এমন সব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলাম যাদের সম্পর্কে আমি তেমন একটা জানি না। ফলে সেখানে প্রচুর টাকা হারলাম। ক্রিসমাস ইন অ্যা ক্লাউড নামে একটা সিনেমাতেও বিনিয়োগ করি। সেখানে একটা ছোট চরিত্রে অভিনয়ও করি এবং শেষমেষ প্রচুর টাকা সেখানেও গচ্চা দিলাম।

 

এগুলো সবই আমার জন্য শিক্ষা, এক্সপেন্সিভ শিক্ষা। আমার শিক্ষা হলো –

  • যে শিল্প সম্পর্কে কোন ধারণা নেই সেখানে বিনিয়োগ করে বোকারা,
  • যে কোম্পানির ওপর কন্ট্রোল সেই সেখানে বিনিয়োগ করার কোন কারণ নেই, এবং
  • চিনিনা বা বিশ্বাস করি না এমন কারও সঙ্গে ব্যবসা করাটা ঠিক নয়।

এই সময় জুড়ে আমি নিজেকে ক্রমাগত প্রশ্ন করেছি। কেন আমি বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করছি? এসব কি টাকার জন্য? তাইবা হবে কেন? কারণ মাইক্রোসফট ছেড়ে আসার সময়তো আমি প্রচুর টাকা এমনিতেই ছেড়ে দিয়ে এসেছি! তাহলে?

আমি বুঝলাম যে শেয়ার মার্কেটেরর বেচাকানা আর ফান্ডিং ব্যবসা আমাকে মোটেই স্যুট করছে না। আমার কখনো মনে হচ্ছে না আমি একটা কিছু করছি। মনে হচ্ছে জুয়া খেলছি। শেষমেষ একদিন ঠিক করলাম শেয়ার বাজার আমার জন্য নয়। শেয়ার মার্কেট থেকে আমার সব বিনিয়োগ তুলে নিলাম। আর নিজের জন্য একটা কিছু খোঁজা অব্যাহত রাখলাম।

এ সময় আমি সপ্তাহে একবার আবার কখনো কখনো দুইবার জাপ্পোসের টিমের সঙ্গে কথা বলতাম। বিশেষ করে ওদের কোন কারিগরি সহায়তা দরকার হলে দেওয়ার চেষ্টা করতাম। ওরা মাত্র কয়েকজনের একটা টিম। কিন্তু ভাল করছে।

এর মধ্যে আমি আর আলফ্রেড ওদের সঙ্গে সিকুইয়ার মিচেল মর্টিজকে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছি। জাপ্পোস টিম সম্পর্কে আমাদের ভাল অভিজ্ঞতা এবং ধারণাও শেয়ার করেছি। আমি ধারণা করেছি সিকুইয়া ওদের ব্যাপারে আগ্রহী হবে। কারণ আমি আর আলফ্রেড দুজনই আছি এমন একটা কোম্পানিতে ৩ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে মাত্র ১৭ মাসে ৫০ মিলিয়ন ডলার কামিয়েছে সিকইয়া। তাহলে ওরা নিশ্চয় আমাদের কারণে জাপ্পোসে আগ্রহী হবে।

——————–

এর পর কী হলো সেটার বর্ণনা দিয়েছে ফ্রেড

এটি মোটেই আনন্দের বিষয় নয়। আজ ডিসেম্বরের ১০ তারিখ। আমাদের হাতে আর মাত্র ৫ দিন আছে। এর মধ্যে আমাদের ফান্ড যোগাড় করতে হবে। নতুবা জাপ্পোসের ব্যবসা লাটে উঠবে।

আমি আছি নিউইয়র্কে। সেখানে জুতাওয়ালাদের কাছে গিয়ে তাদেরকে জাপ্পোসের পার্টনার  হওয়ার জন্য রাজি করানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আর আশা করছি নিক আমাদের জানাবে ফান্ডিং-এর কী হলো।

নিক যখন নিউজ ব্রেক করলো তখন আমি একটা রেস্তোরায় ডিনারে ছিলাম। নিকের ফোন ভালমতো শোনার জন্য রেস্তোরায় বাইরে গেলাম এবং জানলাম দুসংবাদ – সিকুইয়া আমাদের ফান্ডের আবেদন নাকচ করে দিয়েছে। ফোনে কথা বলে আমি যখন আবার খাবারের টেবিলে ফিরলাম তখন একজন ওয়েটার দুর্ঘটনাবশত আমার কোলে পানি ফেলে দিল। আমি হাসলাম। করুণ হাসি। বৃষ্টি হলে না ভিজে উপায় কী!

নিউইয়র্ক থেকে ক্যালিফোর্নিয়ায় ফেরার পর আমি আর নিক অনেক দৌড়াদৌড়ি করলাম। কিন্তু কিছুই করতে পারলাম না। কেউ আমাদের ওপর বাজি ধরতে রাজি নয়।
কী আর করা ১৫ তারিখ দুপুরে আমি, নিকসহ জাপ্পোসের ১২ জন কর্মী মদের বোতল নিয়ে বসলাম। আর বিকেলে অফিসে গিয়ে নিজেদের টেবিল গোছানো শুরু করলাম।

===========

আলফ্রেড আর আমি, আমরা দুজনই একটু অবাক হলাম যখন জানলাম সিকুইয়া জাপ্পোসে বিনিয়োগ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা সিকুইয়াতে যোগাযোগ করলাম বিষয়টা জানার জন্য। জানলাম যদিও জাপ্পোসের অগ্রগতি ভাল, কিন্তু তারপরও সিকুইয়া ব্যাপারটা দেখতে চায় কারণ জাপ্পোসের বয়স মাত্র কয়েকমাস। সেজন্য ওরা কয়েকমাস পরে আবার বিবেচনা করবে।

ভেঞ্চার ফ্রগে আমাদের লক্ষ্য ছিল বিভিন্ন কোম্পানিতে ছোট ছোট সীড ফান্ড দেওয়া এবং তারপর তাদেরকে কোন বড় ভেঞ্চার ফান্ডের সঙ্গে ট্যাগ করে দেওয়া। এতে কোম্পানিগুলো এগিয়ে যেতে পারবে। কাজে জাপ্পোস নিয়ে আমরা একটা আসলেই ঝামেলায় পড়ে গেলাম। হয় আমাদের টাকা দিয়ে জাপ্পোসকে টিকিয়ে রাখতে হবে অথবা তাদেরকে লালবাতি জ্বালাতে বলতে হবে।
ভেঞ্চার ফ্রগের অরিজিনাল প্ল্যান অনুসারে জাপ্পোসকে লালবাতি জ্বালাতেই বলা উচিৎ। কারণ আমাদের প্ল্যান ছিল আমাদের বিনিয়োগ করা প্রতি তিনটি কোম্পানির একটি ভাল করবে, ,একটা ধুকে ধুকে কোন মতে টিকে থাকবে এবং প্রতি তিনটাতে একটা লাটে উঠবে। জাপ্পোসের বেলায়  তিন নম্বরটাই সত্য হলো।

সেদিন আলফ্রেড  আমার কাছে জানতে চাইল – জাপ্পোস নিয়ে আমার ভাবনা কী?
আমরা বুজলাম আমরা যদি চারমাসের জন্য টেকাটুকা দেই তাহলেও চারমাস পরে একই সিচুয়েশন হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কারণ তখনও সিকুইয়া হয়তো কোন বিনিয়োগ করবে না। 

এটি একটি কঠিন সিদ্ধান্ত। কারণ আমরা যদি জাপ্পোসে আরও বিনিয়োগ করি তাহলে আমরা আর কোন নতুন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে পারবো না। 

নতুন কোন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করার চেয়ে বরং এখানে রিস্ক বেশি। আমি বললাম – কিন্তু আমি সেখানকার লোকেদের যথেষ্ট পছন্দ করি। ওরা প্যাশনেট এবং ধৈর্য ধরে একটি দীর্ঘমেয়াদী জিনিষ করার চেষ্টা করছে। আমার মনে হয় ওদের দ্রুত বড়োলোক হওয়ারও কোন প্ল্যান নেই। 

“হুম। যদি তুমি তাই ভাবো” আলফ্রেড বললো “তাহলে আমাদের ওদের পেছনে আরও বেশি সময় দিতে হবে। সবচেয়ে ভাল হয় যদি তারা আমাদের ইনকিউবেটরে চলে আসে”।

আমাদের ইনকিউবেটর!!!

ফান্ডিং কোম্পানির একটি কৌশল হিসেবে আমরা ভেবেছিলাম আমরা নিজেরা একটা ইনকিউবেটর বানাবো যেখানে আমাদের কয়েকটা কোম্পানিকে আমরা স্পেস আর ইন্টারনেট সংযোগের ব্যবস্থা করে দিবো। এতে কোম্পানিগুলো আমাদের কাছাকাছি থাকতে পারবে। আমরা যেখানে থাকি সেখানে আরও অনেক বাণিজ্যিক স্পেস খালি ছিল। আমরা এই ইনকিউবেটর বানানোর জন্য অনেকখানি জায়গা ভাড়া নিয়ে নিলাম। তাতে আমরা আর আমাদের কোম্পানিগুলো একই ছাদের নিচে থাকতে পারি। কিন্তু ঝামেলা হলো সেটা এখনও তৈরি হয়নি!

“সেটা একটা ভাল আইডিয়া। কিন্তু আমাদের ইনকিউবেটর রেডি হতে হতে ওরা মারা যাবে। আগামী কয়েকমাস ওদের জন্য খুবই ক্রিটিক্যাল সময়।

:তাহলে কী করতে চাও?” জানতে চাইলো আলফ্রেড।

“এই সপ্তাহান্তে আমার বার্থ ডে পার্টি আর তারপরই নববর্ষের বন্ধ। আমি ওদেরকে আমার এপার্টমেন্টে নিয়ে আসি। এটাকে একটা অফিস বানিয়ে নেবো। যতদিন না আমাদের ইনকিউবেটর রেডি  হচ্ছে।

‘সেটা করা যায়’ – সায় দিল আলফ্রেড

============================

দ্যা ফোন কল – ফ্রেড

সেদিন অপরাহ্নে আমরা যখন আমাদের জিনিষপত্র গোছগাছ করছি, তখনই আমরা একটা অপ্রত্যাশিত ফোন পেলাম। ফোন করেছে টনি। টনি আমাদের তিন থেকে চারমাসের জন্য বিনিয়োগ করতে রাজী হয়েছে তবে তার সঙ্গে শর্তও আছে।

“তোমাদেরকে সানফ্রান্সিসকোতে আমার এখানে চলে আসতে হবে এবং আমি নিজে তোমাদের কোম্পানিতে অনেক বেশি ইনভলভ হবো”। টনি জানালো।

টনির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বেশ ফরম্যাল। সপ্তাহে তাঁকে আমরা একটব এক্সেল শীট পাঠাই – বেচাবিক্রির। একবার অ্যালফ্রেড সহ আমাদের অফিসে এসেছে। আমরা আমাদের জিনিষ নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকি। কিন্তু  তাঁর এই ফোন কল থেকে বোঁঝা গেল টনি জাপ্পোসকে সম্ভাবনাময় ভাবছে।

আমাদের জন্য সিদ্ধান্তটা তাই সহজই।

আমরা প্যাকডআপ করে টনির আস্তানায় উঠে পড়লাম। পরবর্তী ১২ মাস টনি জাপ্পোসে বিনিয়োগ করেছে। তবে, একবারে নয়। প্রতিবারই চারমাস চারমাস করে। 

কল্পনা করুণ, চারমাস পর আপনার চাকরি থাকবে কি না আপনি জানেন না।
প্রতিবারই শেষ মুহুর্তে টনি সায় দিতো। আর আমরা ঝাপায় পড়তাম আমাদের অবস্থানকে আর একটু ভাল করতে।
পুরো বছর জুড়ে আমরা এই কাজটাই করেছি। 

========================

 

দিনশেষে একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো বন্ধু খুঁজে পাওয়া যারা শুধু মদের টেবিলে থাকবে না, অন্য কাজেও সঙ্গে থাকবে।

আমি মনে করি এমন সম্পর্কই টিকিয়ে রাখা দরকার।

পরের পর্ব -নেটওয়ার্কিং???

[জাপ্পোসের সিইও টনি সেই-এর বিখ্যাত বই ও দর্শন সুখ বিতরণের কিছু অংশ আমি অনুবাদ করছি আমার মত করে, আমাদের উদ্যোক্তাদের জন্য। এটি আক্ষরিক অনুবাদ নয়]

 

3 Replies to “ডেলিভারিং হ্যাপিনেস-২৩ : আয়েস করে আলসেমিতে”

  1. স্যার আসসালামু আলাইকুম। আমি আপনার লেখা নিয়মিত পড়ি। জাপ্পোসের সব গুলো পর্ব পড়েছি এবং পড়ছি।।আশা করি এই রকম আরো ভালো কিছু বই নিয়ে লিখবেন।।

Leave a Reply