ঝড়ের বক, রোনালদোর কোক এবং ৪ বিলিয়ন ডলার নাই হয়ে যাওয়ার গল্প

Spread the love

গত ১৫ জুন কোমল পানীয় কোম্পানি কোম্পানির শেয়ারের দাম ১.৬% কমে ৫৬.১০ ডলার থেকে ৫৫.২২ ডলারে নেমে যায়। আর এতে কোম্পানির বাজার তহবিলের ৪ বিলিয়ন ডলার পতন হয়!

অনেক মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই পতনের জন্য পর্তুগীজ ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর একটি ঘটনাকে দায়ী করেন। কারণ একই দিন ইউরো ২০২০ –এর সংবাদ সম্মেলনে রোনালদো তাকে দেওয়া দুইটি কোকের বোতল সরিয়ে দিয়ে পানির বোতল হাতে নেন। একই সঙ্গে তিনি সবাইকে বেশি পানি খাওয়ার (Drink more water) পরামর্শ দেন। সংবাদ সম্মেলনের এই ভিডিও কিছুক্ষণের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টিকটকে ভাইরাল হয়ে যায়।

এর পরই স্প্যানিশ খেলার পোর্টাল মার্কা এই ঘটনার রিপোর্ট করার সময় কোকাকোলার ২৪২ বিলিয়ন ডলার থেকে ২৩৮ বিলিয়ন ডলারের দরপতনের সঙ্গে এই ঘটনার সংযুক্ততা আবিস্কার করে প্রথম। তারপরই পুরো ব্যাপারটাই অন্য মাত্রা পেয়ে যায়। বিশ্বের অনেক মিডিয়া রোনালদোর কারণেই কোকাকোলার ৪ বিলিয়ন ডলার হারানোর গল্প প্রচার করে। কোন মিডিয়া এ থেকে পিছিয়ে থাকতে চায়নি। ফলে, কারোরই আর মনে হয়নি ব্যাপারটি একটু খতিয়ে দেখার।

প্রকৃতপক্ষে রোনালদোর সংবাদ সম্মেলনের আগেই কোকাকোলার এই দরপতন শুরু হয় এবং সেটি একটি স্বাভাবিক ঘটনা ছিল। কারণ হলো এর আগের শুক্রবার অর্থাৎ ১১ জুন ছিল কোকাকোলার ডিভিডেন্ট পাওয়ার জন্য শেয়ার কেনার শেষ দিন। মানে ১১ জুন যাদের কাছে কোকাকোলার মেয়ার থাকবে তারাই কেবল ডিভিডেন্ট পাবে। শেয়ার বাজারে এই ডেটলাইন যতই এগিয়ে আসে ততই শেয়ারের দাম বাড়ে এবং ডিভিডেন্ট ঘোষণার পরই সেটি কমতে থাকে। এর মধ্যে কোন অস্বাভাবিকতা নেই। আমাদের দেশের শেয়ার বাজারেও একই ঘটনা ঘটে।

১৬ জুন এন্ট্রিপ্রিনিয়র ডট কম দুই ঘটনার সময়ের ব্যাপারটা সামনে আনলেও তখন আর কেউ সেটি নিয়ে ভাবেনি। যারা প্রকাশ করেনি তারাও সেটি প্রকাশ করা অব্যাহত রাখেন এবং কেউ দুই ঘটনার সময়ের ব্যাপারটি মাথায়ও রাখেনি। ১৭ জুন ভারতীয় ‘সায়েন্স ডিকোডার’ অনির্বান মহাপাত্র  (টুইটারে ‘ভালমানুষ’ নামে পরিচিত) টুইট করে এটিকে আরও খোলাসা করেন –

I know you all love cockamamie stories, but unless Cristiano Ronaldo broke the laws of physics and went back in time to make the price of Coca Cola drop BEFORE he moved the two bottles, there is no way he causes $4B drop in share prices.

His press conference was at 9:45 AM ET.

এখন এটি পরিস্কার যে, রোনালদোর কোকাকোলার ঘটনার জন্য কোক ৪ বিলিয়ন ডলার হারায়নি। শেয়ারের ঐ দরপতন একটি সাধারণ ঘটনাই ছিল। কিন্তু টিকটক ও অন্যান্য মিডিয়া মিলে এটিকে একটি নতুন মাত্রায় রোনালদোকে এই কান্ডের হিরো বানিয়ে দিয়েছে।

আজ (২০ জুন) বাংলাদেশ সময় সকাল ৯টায় কোকাকোলার শেয়ারের দরের খোঁজ করেছি।

গতকাল ১৮ জুন কোকাকোলার মেয়ারের দাম ৫৪.৬২ ডলার পর্যন্ত উঠেছে এবং দিনশেষে আরও কমেছে। শেয়ার বাজারে এটি অস্বাভাবিক নয় মোটেই।

প্রশ্ন হচ্ছে সামান্য সময় চেক করার ব্যাপারটা কেন কারও মাথাতে আসে নি!!!

মনে হয় ইন্টারনেট এটাই সায়েন্স!!!

Leave a Reply