আনসিঙ্কেবল স্যাম – জলে ডুবে না যে বিড়াল

Spread the love

বিড়ালের ৯ জীবনের কথা আমাদের দেশেও প্রচলিত। ওপর থেকে ফেলে দিলে বিড়াল সব সময় চার পা দিয়ে মাটিতে নামতে পারে। ফলে, কখনোই ওপর থেকে পরে ব্যাথা পায় না। আবার কারও কারও ধারণা বিড়াল ব্যস্ত রাস্তাও অবলীলায় পার হয়ে যেতে পারে। যে কারণে চলন্ত গাড়ির ধাক্কায় মৃত কুকুর দেখা গেলেও বিড়াল সহসা চোখে পড়ে না।

বিড়ালের ৯ জীবনের সপক্ষে তেমন কোন বৈজ্ঞানিক যুক্তি প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু এমন বিড়ালের সন্ধান পাওয়া গেছে যেটি কিনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তিন তিনবার জাহাজ ডুবি থেকে প্রাণে রক্ষা পেয়েছে। এ কারণে সেটির নামই হয়ে গেছে ‘আনসিঙ্কেবল স্যাম (Unsinkable Sam)।

জার্মান যুদ্ধ জাহাজ বিসমার্ক

কথিত আছে এই বিড়ালের জন্ম জার্মানীতে, ১৯৩৯ সালের আগে কোন এক সময়ে। তার পালক একজন জার্মান নৌসেনা। মালিকের সঙ্গে সঙ্গে জার্মান নৌবাহিনীতে তার “ক্যারিয়ার” শুরু। নাজী জার্মানরা দুটো যুদ্ধ জাহাজ তৈরি করে তাদের নাম দেয় চ্যান্সেলর অটো ভন বিসমার্কের নামে। এদেরই একটি ১৯৩৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি পানিতে ভাসে। সেখানেই স্থান হয় আমাদের বিড়ালের। জাহাজটি ছিল লম্বায় ২৪১ মিটার, ওজনে ৪১ হাজার ৭০০ টন। পানিতে ভাসার কিছুদিন পরই মিত্র বাহিনীর যুদ্ধবহর প্রিন্স অব ওয়েলসের সঙ্গে এক সম্মুথযুদ্ধে ভিশনভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। শেষ পর্যন্ত ডুবেই যায়। এর ২ হাজার ২০০ জন সৈনিকের মধ্যে মাত্র ১১৮ জনকে জার্মানরা উদ্ধার করতে পারে। বিসমার্ক ডুবে যাওয়ার ঘন্টাখানেক পর একই পথ দিয়ে দেশে ফিরছিল ব্রিটিশ রণতরী এইচএসএম কোসাক। সেটারই এক নাবিক এক কাঠের টুকরার ওপর শাদা-কালো বিড়ালটিকে ভেসে থাকতে দেখে। জাহাজ থামিয়ে সেটিকে তুলে নেয় ঐ ব্রিটিশ সৈন্য।  বিড়ালটির নাম দেয় অস্কার। আর এভাবে্ই বিড়ালটি অক্ষ শক্তি থেকে মিত্র বাহিনীর পক্ষে চলে আসে।

কোসাক

পরবর্তী কয়েকমাস এইচএমএম কোসাকে আনন্দেই দিন কাটে অস্কারের। যুক্তরাজ্য হয়ে কোসাক চলে যায় ভূ-মধ্যসাগর ও নর্থ আটলান্টিকে উদ্ধারকারী অভিযানে। কিন্তু ‘বিধি হলে বাম কি করবে রাম’! ১৯৪১ সালের অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে কোসাক পরিণত হয় জার্মানদের টর্পেডোর সহজ শিকারে। অক্টোবরের ২৭ তারিখে জিব্রাল্টার উপকূল থেকে সামান্য দূরে সাগরে তলিয়ে যায় কোসাক। আর আশ্চর্য হলেও সত্য যে, অস্কার একটা তক্তার ওপর ভাসতে ভাসতে তীরে গিয়ে পৌঁছায়। সেখানে ব্রিটিশ সেনাদের একটি অস্থায়ী আস্তানায় তাকে খাইয়ে দাইয়ে সুস্থ করা হয়। এর মধ্যে অস্কারের কাহিনী জানা হয়ে যায় সবার। দুই দুইবার ডুবে যাওয়া জাহাজ থেকে বেঁচে যাওয়া অস্কারের নামকরণ করা হয় –আনসিঙ্কেবল স্যাম, ডোবে না যে স্যাম।

কিন্তু এখানেই শেষ নয়। জিব্রাল্টারে এসে হাজির হয় ব্রিটিশ রণতরী এইচএমএস আর্ক রয়্যাল। এটি প্রিন্স অব ওয়েলস যুদ্ধবহরের একটি যারা কিনা বিসমার্ককে ডুবিয়েছে। আর্ক রয়্যাল ততোদিনে “লাকী শিপ” হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে কারণ বেশিরভাগ যুদ্ধে সেটি কোন না কোন ভাবে রক্ষা পেয়েছে। আর্ক রয়্যালের এক সেনা অস্কারের কাহিনী শুনে তাকে নিজের কাছে নিয়ে যায়। আনসিঙ্কেবল স্যামের আবার জায়গা হয় জাহাজে। কিন্তু মাত্র ক’দিন পরে মাল্টা থেকে জিব্রাল্টার ফেরার পথে জার্মান ইউ-বোট নাগালের মধ্যে পেয়ে যায় আর্ক রয়্যালকে। ফলাফল আর্ক রয়্যালের সলিল সমাধি।

কিন্তও এবারও প্রাণে বেঁচে যায় অস্কার। উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন উদ্ধারের সময় বিড়ালটি রাগে গোঁ গোঁ করছিল।

জিব্রাল্টারের ব্রিটিশ সেনারা অস্কারকে আর জাহাজে না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। পাঠিয়ে দেয় গভর্নরের বাড়িতে। সেখান থেকে এক সময় এ সৈনিকের কোলে চড়ে যুক্তরাজ্যে ফেরত যায়। সেখানে ১৯৫৫ সালে “আনসিঙ্কেবল স্যাম” মারা যায়।

অনেক ঐতিহাসিক এই বিড়াল কাহিনীতে অনেক খুঁত খুঁজে পেলেও শিল্পী গিওর্গিনা শ-বেকারের আঁকা Oscar, the Bismarck’s Cat ছবিটি স্থান পেয়ে গেছে গেছে গ্রীনউইচে ন্যাশনাল মেরিটাইম মিউজিয়ামে। বিড়াল জায়গা করে নিয়েছে উইকিপিডিয়াতেও।

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version