ডেলিভারিং হ্যাপিনেস – দ্বিতীয় খন্ড- পর্ব ৬: সম্ভব, সম্ভব বেসম্ভব নয়

Spread the love

ডেলিভারিং হ্যাপিনেস – দ্বিতীয় খন্ড- পর্ব ৫: নির্ঝরের স্বপ্ন ভঙ্গ

পরের চারদিন জুড়ে কিলিমানজারো শৃঙ্গে আরোহন ছিল আমার শারিরীক, মানসিক ও আবেগীয় শক্তির চূড়ান্ত পরীক্ষা। আমরা প্রতিদিন ১২ ঘন্টা হাইকিং করেছি। পাঁচ রকমের আবহওয়া জোনের ভিতর দিয়ে যাওয়াটা একটা যা তা – রেইন ফরেস্ট, আলপাইন হিথ, মুরল্যান্ড, মরুভূমি ও তুষার। আমার ঠান্ডা লেগে গেল। সঙ্গে কফ আর সর্দি। আবার যতোই উপরে উঠছি ততোই আবহাওয়া শুস্ক হয়ে যাচ্ছে। কাজে আমার নাকও হয়ে গেল রক্তাক্ত। আধা রাস্তার বেশিরভাগ সময় আমার নাকে টিস্যুর পাহাড়। শ্বাস নেওয়াটাও কষ্টের হয়ে গেছে। যদিও আমি ওপরে ওঠার সমস্যা কাটাতে অনেক মেডিটেশন করেছি কিন্তু তারপরও মাথা ধরা, ডায়রিয়া আর বমি বমি ভাব কাটানো গেল না। আমার কাঁধে মাত্র একদিনের ব্যাকপ্যাক কিন্তু তারপরও আমার কাঁধ ও পিঠ ব্যাথায় কাবু হয়ে গেল।

শারিরীক ভাবে এমন পরিস্থিতিতে আমি আগে কখনো পরি নাই। কিন্তু মেন্টালি ও ইমোশনালি আমার মাথায় কেবল জাপ্পোস। আমি ভাবছি টাইম মতো পার্টি লফট বিক্রি করতে পারবো কিনা। আর যদি না পারি তাহলে কী হবে? শাওয়ার নেওয়ার বা বাথরুম নাই। সবই প্রকৃতির সঙ্গেই করতে হয়। লা মিজারেবল অবস্থা। মাঝে মধ্যে আমার মনে হয়েছে “ছেড়ে দে মা কেদে বাচি’।

সামিটের আগের রাতে আমাদের ৮টার মধ্যে শুয়ে পড়তে বলা হল কারণ সামিট শুরু হবে মধ্যরাতে। কিন্তু আমি বা জেন কারোরই ঘুম আসলো না। আমরা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এপাশ ওপাশ করে উঠে পড়লাম। তারপর রেডি হয়ে তাবুর বাইরে এসেছি।

মধ্যরাতে আমাদের সামিট যাত্রা শুরু হলো। মধ্যরাতে রওনা দেওয়ার উদ্দেশ্য হলো চূড়া থেকে সূর্যোদয় দেখা। আমরা সাত দিন ধরে হাইকিং করছি। কিন্তু রাতের আঁধারের হাইকিং-এর সঙ্গে দিনের আলোর হাইকিং-এর কোন মিলই নাই। নিকষ কাল। মাথায় যে লাইট সেটা দিযে সামনের মাত্র ফুট পাঁচেক দেখা যায়। আরও দূরে দৃষ্টি দিয়ে সামিট কতদূর সেটা বোঝারও কোন উপায় নেই। আমরা শুধু এক পা একপা করে আগাতে পারি। আসলেই কি আগাচ্ছি?

ঠান্ডা থেকে বাঁচার জন্য আমরা প্রত্যেকেই আট প্রস্ত করে জামাকাপড় পড়েছি। এবার বোঝেন ১০ মিনিটের একটা ব্রেকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়া্টা কেমন ছিল! আর শেষের সময়টা পাহাড়টাও কেন জানি খাড়া হয়ে গেছে। আমরা কেউ কোন শব্দ করছি না কারণ কথা বলতেও অনেক শক্তি লাগে। শুধু শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ শোনা যায়। আমি যদিও জানি ৬ ঘন্টাতে সামিট হয়ে যাবে কিন্তু কতো সময় গেল সেটা জানা আমার জন্য সম্ভব ছিল না।

আমি কল্পনা করলাম এ হচ্ছে স্যান ফ্রান্সিসকোতে আমার বাসা থেকে পলো আলটো’র আমার বন্ধুর বাড়িতে যাওয়া আসা। গাড়ি চালিয়ে যেতে আমার প্রতিবারে ৪৫ মিনিট লাগতো। আমি মনে মনে রাস্তার বিভিন্ন স্থাপনা ও এক্সিটগুলো কল্পনা করতে শুরু করলাম। সঙ্গে কদম গোনা। আমি ধরে নিলাম ১০০ কদম যাওয়া মানে পলো আলটোর দিকে ৫ মিনিট আগানো। এভাবে একবার পলো আলটোতে পৌছানোর পর আমি আবার মনে মনে সেখান থেকে স্যান ফ্রান্সিসকোতে রওনা হলাম। কিন্তু দুই রাউন্ডের পর মনে হলো এ দিয়ে হচ্ছে না। আমার আরও কিছু দরকার মানসিকভাবে ব্যস্ত থাকার জন্য।

এমনকি সামিটের কাছাকাছি জানলেও নিশ্চিত হতে পারছি না। গত পাঁচদিন ধরে আমি একটা ভাল গোছল দিতে পারি নাই। পাতে জুটে নাই কোন ভাল খাবার। হয়নি রাতে ভাল ঘুম। কাজে আমি ভাবতে শুরু করলাম জীবনভর কী কী আমি গ্রান্টেড ফর লাইভ ভেবেছি। দেখলাম একটু ঈষদুষ্ণ গরম পানিতে গোসলটা কতো আরাম দায়ক, মেল’স ডিনারে রাতের খাবারটা কতোটা আনন্দের। আমি পরিস্কার দেখলাম একটা মুরগীর স্যুপের মধ্যে টার্কি থাকলে সেটা খেতে কেমন লাগে। মনে মনে ঠিক করে ফেললাম ফিরে গিয়ে প্রথমেই এই ডিশ অর্ডার করবো।

আমি মনে করতে পারি এই পুরো ব্যাপারটা আমার জীবনের কঠিনতম কাজ ছিল।

এক সময় যেটিকে অনন্ত যাত্রা মনে হচ্ছিল সেটা এক সময় শেষ হলো্। সূর্য উকি দিতে শুরু করার মুহুর্তে আমার চূড়ায় পৌছালাম। নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে আমরা সফল হয়েছি। আমরা আফ্রিকার সবচেয়ে উচু চুঁড়ায় দাড়িয়ে। মেঘপুঞ্জ আমাদের নিচে। আর সোজাসুজি সূর্য রশ্মি আমাদের নতুন দিনের বার্তা দিচ্ছে। এটা এমন কিছু যা সব মানুষের অভিজ্ঞতায় কখনো জুটবে না। কিন্তু তারপরও আমরা সেটা করেছি।

আমার চোখ দিযে পানি নেমে আসলো। মুখ দিযে কোন শব্দ বের হলো না। আমি জেনকে জড়িয়ে ধরলাম। ছবি তুললাম। Things to do লিস্ট থেকে কিলিমানজারো কেটে দিলাম।

নিজেকে বললাম – যে কোন কিছুই করা সম্ভব।    

[জাপ্পোসের সিইও টনি সেই-এর বিখ্যাত বই ও দর্শন সুখ বিতরণের কিছু অংশ আমি অনুবাদ করছি আমার মত করে, আমাদের উদ্যোক্তাদের জন্য। এটি আক্ষরিক অনুবাদ নয়]

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version