উদ্যোক্তার শক্তি, উদ্যোক্তার ঝুঁকি

Spread the love

ক’দিন আগে এক উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলছিলাম। আমার বাসার কাছে তার একটি অত্যন্ত ছোট বাজেমালের দোকান আছে। একটি বাড়ির সিড়ির নিচে, ৫০ বর্গফুটও হবে না। আমি প্রায়শ তাঁর দোকান থেকে আমার সন্ধ্যাবেলার সওদা কিনি। তাঁকে আমি চিনি অবশ্য কয়েকবছর আগে থেকেই। একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে চাকরি করতো। সেই ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে তাঁর বেতন ছিল ৭ হাজার টাকা। থাকা-খাওয়া আর ঈদে বাড়ি যাওয়ার খরচ স্টোর মালিকই দিতেন। গ্রামসূত্রে তাকে চাচা ডাকতো সে।কাজ করতে করতে সে এই ব্যবসার কয়েকটা অংশের ব্যাপারে বুৎপত্তি অর্জন করে। তারপর থেকে ঠিক করে নিজেই একটা দোকান করবে। এজন্য টাকা জমাতে শুরু করে ৫০ হাজার টাকার মতো জমাতে সক্ষম হয়। এই সময় তার এলাকার আর একজন উদ্যোক্তা যিনি ছোট দোকান থেকে বড় দোকানে যাবেন তিনি তাঁকে এই দোকানটি নিতে অনুরোধ করে। তবে, দরকার ১ লক্ষ টাকা।
আমাদের উদ্যোক্তা তাঁর বোন জামাই-এর কাছ থেকে আরো ৫০ হাজার টাকা ধার করে এখনকার দোকানটি নেয়। স্টোরের চাকরির সঙ্গে সঙ্গে তার থাকা-খাওয়ার সুযোগটাও রহিত হয়ে যায়। কিন্তু সে হার মানেনি।
বোনের বাসায় গিয়ে উঠে আর আস্তে আস্তে নিজের ব্যবসার প্রসার ঘটাতে থাকে। প্রায়শ আমি তার ব্যবসার খোঁজ নিতাম। সে বলতো তার কী কী সমস্যা। স্টোরে চাকরি করার সময় সে লক্ষ্য করেছে এ সমস্ত দোকানে যারা কেনাকাটা করেন তাদের এটা অভ্যাসে পরিণত হয় এবং তারা এক দোকানেই মোটামুটি সব কিনতে চায়। শুরুতে তার দোকানে ফ্রিজ ছিল না। কিছুদিনের মধ্যে সে “ফ্রিজ না থাকাকে” তার দূর্বলতা হিসাবে চিহ্নিত করে এবং তারপর ফ্রিজ যোগাড়ে লেগে যায়। কিছুদিনের মধ্যে তার দোকানে একটা ফ্রিজ হয়েছে। এভাবে সে নিজের দূর্বল দিকগুলো প্রথমে চিহ্নিত করে এবং তারপর সেটা অবসানের চেষ্টা করে। ফ্রিজ কেনার সময় সে তাঁর সবলতাও এভাবে চিহ্নিত করে আমার কাছে “স্যার, আপনার মতো অনেকেই পাউরুটির সঙ্গে দুধটাও কিনতে চায়। পাশের দোকান থেকে আলাদা করে কিনতে চায় না। ফ্রিজ হলে দুধটা ওরা আমার কাছ থেকেই কিনবে”। আমি নিশ্চিত জানি, এই উদ্যোক্তার একদিন বড় একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর হবেই, হবে।

এই উদ্যোক্তা নিয়মিত যে কাজটা করেন সেটি হলো নিজের ব্যবসার একটা এসেসমেন্ট। এটি তাকে প্রতিনিয়ত আগানোর শক্তি যোগায়। সে তাঁর বুদ্ধিমত্তা দিয়ে যে কাজটা করে, সেটাকেই ম্যানেজমেন্টর ভাষায় বলা হয়  SWOT (Strength, Weakness, Opportunity, Threat)। শক্তিমত্তা-দূর্বলতা-সুযোগ-হুমকি। এ ধরণের বিশ্লেষন উদ্যোক্তাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। এই ধরণের কাজ করার জন্য দরকার কাগজ-কলম এবং কিছুটা সময়। ভাবতে হয় কিছু বিশেষ প্রশ্নের উত্তর।

যেমন ধরা যাক আপনার শক্তিমত্তা কী?

আপনি যখনই কোন বিনিয়োগকারীর দ্বারস্থ হবেন তখনই আপনাকে এই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে। তো, আপনি বললেন আপনি যে সেক্টরে কাজ করেন সেটার বাজার বছরে পাঁচশ কোটি টাকা। না, এটা আপনার শক্তিমত্তা নয়। আপনাকে ভাবতে হবে কী এমন বিষয় আছে যেটিকে আপনি ক্যাশ করতে পারবেন, যেটি আসলে আপনাকে আগাচ্ছে। যেমন আপনার ব্র্যান্ড ভ্যালু। স্বভাবতই নতুনদের এটা থাকে না। নতুনদের তাহলে কী থাকে? একটা হলো তার একাগ্রতা ও নিষ্ঠা। কিন্তু সেটা কাগজে কীভাবে লিখবেন – আমার পরিচিত একজন উদ্যোক্তা ঘন্টাখানেকের আলাপচারিতায় তার শক্তি বের করতে পেরেছেন – তার অনেক রিটার্নিং কাস্টোমার আছে। কেন? কারণ সে প্রতিটি কাস্টোমারকে আলাদা আলাদাভাবে সেবা দেয়। তাদের ছোটখাটো সেবা দিতেও পিছপা হয় না। এ কারণে অনেক সময় তার কোন লাভ হয় না।

নতুন উদ্যোক্তার আর একটা ভাল শক্তি হতে পারে তার নেটওয়ার্ক। এটা তাঁর মার্কেটিং-এ কাজে লাগবে। তবে, এটা আবার দূর্বলতাও হতে পারে। একজন উদ্যোক্তার দোকান বন্ধ করতে হয়েছে তার ব্যাপক পরিচিতির কারণে! অনেকেই তার থেকে পন্য নিয়ে বাকী ফেলেছে এবং বলেছে, ” আরে, মাত্র দুই হাজার টাকার জন্য কী তোমার দোকান বন্ধ হযে যাবে?” বেচারা তাদেরকে বলতে পারে নাই যে, এরকম দুই হাজার টাকা বাকী আছে কমপক্ষে আশি জনের কাছে। আপনার জন্য দুই হাজার, আমার জন্য একলক্ষ ষাট হাজার!!!

একটা হুমকির বিষয় বিনিয়োগকারীরা সব সময় জানতে চান। মার্কেটে বড় কোন প্লেয়ার আসলে তুমি কী করবে? ভারতে এসে পড়েছে আমাজন, বাংলাদেশেও আসবে। ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের তাহলে এই হুমকি মোকাবেলায় কী করার দরকার?

তো, এই ধরণের বিশ্লেষন ক্ষমতা অর্জন করা যায় দুই ভাবে। নিজে নিজে পড়ালেখা করে আর নিরন্তর চেষ্টা  করে। আর একটা হলো যারা এই কাজটা ভাল পারেন, তাদের মাধ্যমে এক দুইবার কাজটা করে।

এ সব চিন্তা করে আমাদের চাকরি খুঁজব না, চাকরি দেব গ্রুপের উদ্যোগে আমরা একটা কর্মশালার আয়োজন করেছি। কর্মশালাটা হবে ২ এপ্রিল শনিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে।

আগ্রহীরা নিয়মমতো নিবন্ধন করে সেখানে যোগ দিতে পারেন।

উদ্যোক্তাদের জন্য শুভ কামনা।

 

 

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version