আয়েস করে আলসেমিতে

Spread the love

হীরক রাজার দেশে নামে সত্যজিৎ রায়ের একটা সিনেমা আছে। এটি গুপী গাইন বাঘা বাইনের দ্বিতীয় পর্ব, ১০ বছর পরের ঘটনা। সবগুলো ডায়ালগ সুরে সুরে। তো, সেখানে গুপী বাঘা তাদের আলসেমির কথা বলতে গিয়ে বলে – আয়েস করে আলসেমিতে ১০টি বছর পার। আজকে কিছু হিসাব নিকাশ করে দেখলাম আমার নিজেরও মেলা সময় পার হয়ে গেছে, বেহুদাই। অসমাপ্ত কাজের একটা লিস্টি করে ভয় পেয়েছি। এর মধ্যে আধা খেচড়া বইগুলোর তালিকাটা করার চেষ্টা করেছি-

১. গণিতের হাতে খড়ি –  শিক্ষক ডট কমে একটা প্রাথমিক গণিতের ক্লাস শুরু করেছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল দুইটা সেটা হলো যারা গণিতে দুর্বল কিংবা যারা গণিতের ভিত্তি শক্ত করতে চায় তাদেরকে সহায়তা করা। প্ল্যান ছিল কোর্স শেষে এটা একটা বই হবে। ৮০% কাজ হয়ে বসে আছে। কোন অগ্রগতি নাই প্রায় দুই বছর।
২. বাংলার বিজ্ঞানী সিরিজ – এটা শুরু করেছিলাম সীমু নাসেরের পাল্লায় পড়ে। উদ্দেশ্য ছিল বাংলার বিজ্ঞানীদের জীবনী ভিন্ন ভাবে লেখা। যা যা লিখেছিলাম তাতে একটা বই হয়। কারণ আমার মতো করে লিখেছি জগদীশ চন্দ্র বসু, সত্যেন বসু, মেঘনাদ সাহা, অমর গোপাল বসু, গোপাল ভট্টাচার্য,  জাহিদ হাসান, মাকসুদুল আলম এরকম অনেকেরটাই লিখেছি। বই করতে গিয়ে মনে হলো প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, কুদরাত-ই-খুদা, আবদুল জাব্বার না থাকলে কেমনে হয়। ব্যাস গেল আটকে।
৩. ময়াল – আমার প্রথম উপন্যাস। কল্পবিজ্ঞান। অনেক খেটে-খুটে লিখতেছি প্রায় আড়াই বছর ধরে। এমন এক গিট্টু লেগেছে যে সেটা আর ছোটানো যাচ্ছে না। যদিও ঠিক করে রেখেছি বেঁচে থাকলে এবছরের ডিসেম্বরে প্রকাশ করবো।

৪. ওরা ১২ জন : আমাদের দেশের প্রায় সকল নায়কই এমন সব ক্ষেত্রের যার সঙ্গে আয় বরকতের সম্পর্ক কম। সফল উদ্যোক্তাদের নিয়ে তাই বলতে গেলে তেমন কোন বই নেই। এটা ভেবে বছর দেড়েক আগে দেশের ১২ জন উদ্যোক্তাকে নিয়ে যৌথভাবে বই লেখার একটা মিশন নেই। টার্গেট ছিল প্রত্যেকের জন্য ৩৫০০-৪০০০ শব্দ করে লিখবো। একটা ঘোষণা দিয়ে দুইজন সহ-লেখকও নেওয়া হল। দুইজনকে দুইটা এসাইমেন্টও দেওয়া হলো। তালিকায় ছিল রণদা প্রসাদ, আকিজ মিয়া. নুরুল কাদের, স্যামসঙ চৌধুরী, ইউসুফ চৌধুরী, ইকবাল কাদের সহ মোট ১২ জন। কাজটা আর আগালো না।

৫. ১০১ গাণিতিক সমস্যা ও সমাধান – এটি প্রাথমিক ও জুনিয়র ক্যাটাগরির শিক্ষার্থীদের জন্য একটা অনুশীলনীর বই। শুরুতে কিছু টেকনিক থাকবে। তারপর কয়েকটা প্রবলেম এটাকিং দেখানো হবে। তারপর অনুশীলনী ও শেষে সমাধান। এটার পরিকল্পনা হইছে। আর কিছু হয় নাই।

৬. খেরো খাতার কয়েক পাতা – এটি আমার ভ্রমণ কাহিনী। যখন যেখানে গেছি, সেখানে ডায়েরী লিখে রেখেছি। কিছু লেখা আগে প্রথম আলোর ছুটির দনে প্রকাশ হয়েছে, কিছু ব্লগে প্রকাশ করেছি, কিছু ফেসবুক। আর বাকীগুলা আছে আমার কাছে। খুঁজলে পান্ডুলিপি মনে হয় পাওয়া যাবে।
৭. দুনিয়াকে জানলো যারা – এটাও বিজ্ঞানীদের কাজ নিয়ে তবে এটা সত্যানুসন্ধানের একটা প্রয়াস। এখন দুনিয়ার যে কাঠামো আমরা জানি সেখানে কেমনে বিজ্ঞানীরা পৌছালো তার একটা বর্ণণাক্রম।

৮. ছোটদের বিজ্ঞানী সিরিজ – এটা ৩-৫ হাজার শব্দে ছোটদের জন্য নিউটন, আইস্টাইনের জীবনী। চারটা বা পাঁচটা লেখা হইছে। ওখানেই থেমে আছে।

৯. উদ্যোগ ও উদ্যোক্তা বিষয় কয়েকটি বই – এগুলো ই-বই আকারে পরিকল্পনা করা। যেমন ইনোসেন্টের শরবত, স্টিভ জবসের পথ, ফেসবুক কেন ফেসবুক। এগুলো মূলত কোন একটা বই-কে ঘিরে লেখা যেখানে জীবনীর চেয়ে কাজের ব্যাপারটা বেশি আসবে। এচাড়া গ্রোথ হ্যাকার মার্কেটিং আর ডেলিভারী হ্যাপিনেস। ডেলিভারী ১৫ পর্ব মনে হয় লিখেছি। ওখানে থামছে।

এগুলো তো বই-এর কথা।

এর বাইরে কিছু জরুরী কাজও করবো করবো ভাবছি। যেমন ক্লোজ মেন্টরিং করা। ১০ জনকে ক্লোজ মেন্টি হিসাবে নিতে চাই। ৫ জন উদ্যোক্তা আর ৫জন চাকরিজীবী। আমার জ্ঞান-বুদ্ধি (নিতাইন্ত অল্প) সেগুলো দিয়ে তাদের পরের স্টেপে যাবার জন্য সহায়তা করা। এটা অবশ্য হয়নি কারণ কেউ মেন্টি হতে চায়নি। কারণ সবাই নিজেরাই মেন্টর, মোটিভেশনাল স্পিকার।
এলান ব্রাউন নামে আমার একজন ই-মেন্টর আছে। তিনি কয়দিন আগে হতাশ হযে লিখেছেন – মুনির তুমি কী কোন মেন্টি পাচ্ছো না। আমি চেপে গেলাম।

ডি-মোটিভেশনাল স্পিচ নামে একটা ট্রেন্ড চালু করার ইচ্ছে। এটা নেতৃত্ব দেবেন কায়কোবাদ স্যার। তার সঙ্গে আমি থাকবো।

আর না লিখি। এই লিস্টটা যারা পড়ছে তারা মুখ টিপে হাসছে। পাগলামি কাকে বলে।

তো সেই পাগলামিই করতে থাকবো। কিছু কাজ হবে। বাকীগুলো হবে না। এভাবে একদিন চলে যাবো।

সবার মঙ্গল হোক।

 

 

 

 

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version