গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং-৫: খুঁজো তোমার গ্রোথ হ্যাক!

Spread the love

গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং-৪: কাজের জিনিষ কেমনে বানাই?

গ্রোথ হ্যাকিং-এর একটা বড় ব্যাপার হলো কনফিডেন্স খুঁজে পাওয়া। সেটার জন্য শুরু থেকে কাজ করতে হয়। শুরু করার প্রাথমিক পর্যায় শেষে যদি সত্যিকারের পিএমএফ না পাওয়া যায় তাহলে কিন্তু ভিন্নকিছু ভাবতে হবে।
রেডিট-এর অ্যারন সোয়ার্য-এর কথা অনেকেই জানে। তবে, যেটা অনেকেই জানে না সেটা হলো রেডিটের আগে অ্যারন আরো দুইটা চেষ্টা করেছে। ১৯৯৯ সালে, উইকিপিডিয়ার আগেই, একটি কোলাবোরেটিভ বিশ্বকোষে সে হাত দেয়। আর একটা সাইট ওয়াচডগ.নেটও তার হাতে শুরু। দুটোই ফ্যানটাসটিক আইডিয়া। দুটোর পরের ভার্সন, অন্যের করা, এখন তুমুল জনপ্রিয়। কিন্ত অ্যারণ তো পারেনি। পারেনি কারণ শুরুর দিকের যতো ইউজার পেলে পরের ধাপে যাওয়া যায় সেটা কিন্তু অ্যারন যোগাড় করতে পারেনি। ফলে, সেটা নিয়ে আর আগানোও হয়নি। তার এই ব্যর্থতার কারণ হলো অ্যারণের বিশ্বাস। অ্যারন মনে করতো একটা ভাল প্রোডাক্ট  বানালে কাস্টোমার নিজে থেকে তাঁকে খুঁজে নেবে। পরে লারিসা (নিউইয়র্কারের রিপোর্টারের) কাজে সে স্বীকার করেছে – কাস্টোমার নিজে থেকে আসে না, তাঁকে ধরে আনতে হয়।

গ্রোথ হ্যাকারের কাজ হলো, অন্য সব মার্কেটিয়ারদের মতো, এই টেনে আনার কাজটা করা।

প্রশ্ন হচ্ছে কী ভাবে?

একটা ছোট স্টার্টআপ নিশ্চয়ই বিশাল অংকের টাকা খরচ করে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে, পাঁচতারকা হোটেলে অনুষ্ঠান করে শুরু করতে পারে না। কারণ তার সে বাজটে তো নাই। কাজে লাইনতো সেটা নয়। কিন্তু তুমি যদি বাজারের জন্য আদর্শ প্রোডাক্ট বানায় ফেলতে পারো, তোমার প্রোডাক্ট যদি কাজের হয় তাহলে দৈনিক পত্রিকায় বিশাল কভারেজ তোমার দরকার নাই। তুমি অন্যভাবে কাজটা করতে পারো।
প্রথমত ভাবো শুরুতে তোমার কতোজন কাস্টোমার দরকার। একটি বহুল প্রচলিত পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে তুমি কি তাদের কাছে পৌছাতে পারবে?

একটা দেশীয় উদাহরণ দেই। সরকার একটি হাই প্রোফাইল আইসিটি ফেলোশীপ দেবে যার মাসিক হার দুই লক্ষ টাকা। এ জন্য বিজ্ঞাপন দেওয়া হল একেবারে সামনের সারির পত্রিকায়। কিন্তু একজনকেও পাওয়া গেল না যে কিনা এই ফেলোশীপের ব্যাপারে খোঁজ খবর নিল। কাজে দিনক্ষণ বাড়াতে হল। কারণ কী? কারণ দুইটা জিপিএ ৫ আর ৩.৭৫ ওয়ালা কেউ পত্রিকার বিজ্ঞাপন দেখে না!

তারমানে যে পদ্ধতিতে তুমি লাখ লাখ লোকের কাছে যেতে পারো, সেটা হয়তো তোমার জন্য নয়। তোমার দরকার প্রথম ১০০ বা ৫০০ কাস্টোমার। সংখ্যাটা খুব বেশি বড় না।

বাঁচা গেল। না কি?

তবে, পুরোনো মার্কেটিয়ারদের মতো তোমারও একই ধান্ধা। কাস্টোমার ধরে আনা। তবে, এর জন্য তুমি ব্যয়বহুল, লাখ লাখ লোকের থেকে মাত্র ১০০ জনকে না খুঁজে অন্য কোথাও সেটা খুঁজতে পারো। যেখানে খরচ কম, কস্ট কম।

ড্রপবক্সের কথা ধরা যাক। এখন তাদের প্রায় বিলিয়নের কাছাকাছি ব্যবহারকারী। কিন্তু যখন এই ফাইল-শেয়ারিং সার্ভিসটা  চালু হয় তখন কিন্তু এটি এমনকি পাবলিকও ছিল না। আপনি মাথা খুটে মরলেও ড্রপবক্সের একাউন্ট নিজে থেকে পেতেন না। নতুনদের একটা লিস্টে নাম লিখতে হতো যেন একটা ইনভাইটেশন পাওয়া যায়। আর এই লিস্টে নাম লেখানোদের সংখ্যা বাড়ানোর বৃদ্ধি করে ড্রপবক্স একটা ফানি ভিডিও তৈরি করে।
না এই ভিডিওটা বানানোর জন্য তারা কোন গ্রে-ম্রেকে হায়ার করে নাই। নিজেরা একটা ফানি ভিডিও বানায়। জোক, ছবি, রেফারেন্স এসব দিয়ে টিয়ে। আর এটা তারা রিলিজ করে ডিগ, স্ল্যাশডট আর রেডিট-এ।

ঐ তিন কমিউনিটির লোকেরা সেটি খুব দ্রুত গ্রহণ করে। ফলে সেটা চলে আসে ঐসব কমিউটিনিটটর সামনের কাতারে। সেখান থেকে হাজার হাজার লোক নাম লেখানোর সাইটে  (getdropbox.com) এসে নিজেদের নাম-ধাম লিখতে থাকে। প্রথম রাতেই প্রায় ৭০ হাজার নতুন নাম যুক্ত হয়। এদের সবাইকে ট্র্যাক করা সম্ভব, সবাই দৃশ্যমান এবং ব্যপক সংখ্যক।

ড্রপবক্সের এটাই চাওয়া ছিল। তারা কিন্তু পত্রিকার লোকজনকে ডেকে কিছু বলে নাই। বলে নাই আমরা নতুন একটা কিছু বানাইছি আপনারা নিউজ করেন। আমাদের ইয়াং নাইটে নিয়ে যান। আমাদের দাওয়াত দেন আমরা মোটিভেশনাল স্পিচ দেই। কারণ তাদের এসবের দরকার নাই। তারা ঐ লিস্টেই নজর দিছে যা কিনা সপ্তাহখানেকের মধ্যে ৪০ লক্ষে পৌছে আর এখনকার কথা তো বললামই।

এটা তো সিলিকন ভ্যালির উদাহরণ। আমাদের ঝংকার মাহবুব তার বলদ টু বস বই-এর জন্য ঠিক এমন ধারা একটা কাজ করেছে। আর ১০ জন লেখকের মতো তার বই-এর বিজ্ঞাপন পত্রিকায় দেওয়ার জন্য ক্যা-কু করে নাই। কয়েকজন কাছের লোকের কাছে পাণ্ডুলিপি পাঠিয়েছে যেন তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এটা নিয়ে কথা বলে। আমার সাইটে একটা বিজ্ঞাপন দিয়েছে আর নিজের পেজ আর প্রোফাইল থেকে প্রচারণা চালিয়েছে। আর সেখানে তার অনুসারীরা আগে থেকেই জানতো তার একটা বই বের হবে এবারের মেলায়।  কাজেই মেলায় আসার কয়েকদিনের মধ্যে প্রথম লটটা বিক্রি হয়ে যায় এবং বই-এর কথা অনেক মানুষের কাছে পৌছে যায়।

প্রশ্ন হচ্ছে যে পদ্ধতি ড্রপবক্সের জন্য কাজ করেছে সেটা কপি করলে কী কাজ হবে?
হতেও পারে নাহও হতে পারে। ড্রপবক্সের পর মেইলবক্সও এই কাজ করে সফল হয়েছে। তবে, অন্য অনেকে এই কাজটা করে সুবিধা করতে পারেনি। দেশেও অনেক লেখক ফেসবুকে ব্যপকভাবে তাদের বই-এর বিজ্ঞাপন দিয়েছে, টাকা খরচ করেছে কিন্তু কাঙ্খিত বিক্রি হয়নি। তার একটা কারণ হলো হয়তো ঐ বইগুলো মার্কেট ফিট ছিল না, অথবা ওরা ঠিক লোকের কাছে খবরটা পৌছাতে পারে নাই।

আবার ২০১২ সালে ই-বে গোগো-র সঙ্গে একটা পার্টনারশীপ করে। গোগো হলো একটা ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার যারা ফ্লাইটে ওয়াইফাই দিতো। ই-বে একটা চুক্তি করলো গোগো’র সঙ্গে। চুক্তিটা হলো ইনফ্লাইটে গোগোর ব্যবহারকারীরা ফ্রিতে ই-বে ব্রাউজ করতে পারবে!!!এটা হলো ফেসবুকের ফ্রি-বেসিকের মতো। গোগো তাদের সার্ভিসটা ফ্রিদিলো খালি ই-বের জন্য। ই-বের লাভ কী হলো। ডেল্টা আর ভার্জিন আমেরিকার ফ্লাইটগুলোতে ওরা ল্যাপটপওয়ালা এমন লোকদের পেতে থাকলো যারা কিনা প্লেনে বিরক্ত হয়ে বসে আছে। কোন কাজ নাই। তখন তারা ই-বে তে ঢুকে কেনাকাটার ফন্দি করতে থাকলো।

দুইটা লাভ হলো। ডিজিটাল বলে ই-বে ট্র্যাক করতে পারলো কারা গোগো হয়ে আসছে। তারা কেনাকাটা করছে কী না সেটাও টের পেল। কাজে কাস্টোমার একুইজিশন কস্ট বের করে ফেললো। কাজটা কন্টিনিউ করা হবে কিনা সে সিদ্ধান্ত নেওয়াটাও সহজ হয়ে গেল।

 

পরের পর্ব – নট অল পিপল, রাইট পিপল

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version