শেষ করার আনন্দ!

Spread the love

বিশ বছর বয়সে ক্রিস গার্ডনার, নেভি থেকে বের হয়ে সান ফ্রান্সিস্কোতে হাজির হোন। উদ্দেশ্য মেডিসিনে ক্যারিয়ার গড়া। তাকে বলা হতো সায়েন্টিফিক রিসার্চে একজন প্রডিজি। এ কাজে তার খুবই দক্ষতা ছিল। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে একটা কোন বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের এন্ট্রি লেভেল পোস্টের পরিবর্তে তাকে দেখা গেল একটি ছোট্ট বাচ্চা নিয়ে গৃহহীন হয়ে পড়তে। নিজে পিতৃহীন বলে তিনি ঠিক করেছেন তার ছেলেকে কখনো ফেলে যাবেন না।কাজে বছর খানেক ধরে বাপ-বেটার আস্তানা হয় পাবলিক স্পেসে। এমনকী সাবওয়ের পাবলিক রেস্টরুমেও তাদের ঘুমাতে দেখা গেছে।

এতো কিছুর পরও গার্ডনার কিন্তু ঠিকই ফিনান্সিয়াল সেক্টরে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হোন।প্রথমে স্টক ব্রোকার হোন। তারপর নিজেই প্রতিষ্ঠা করেন গার্ডনার রিচ এন্ড কো নামের ব্রোকারেজ হাউস। এক সময় উনি মিলিয়নিয়ারও হয়ে যান।

২০০৬ সালে তিনি তার স্মৃতিকথা প্রকাশ করেন The Pursuit of Happyness নামে। পরবর্তী সময়ে এটি একটি চলচ্চিত্র হয়েছে। এই বই-এ এবং সিনেমাতে দেখা যায় সুখের জন্য সাধনা কতো না জরুরী, কতো না প্রচেস্টার।

 

আমরা যখন গণিত অলিম্পিয়াড শুরু করি, তখন আমি একটা ভিন্ন বিষয় আবিস্কার করি। সেটা হলো সাধনার সুখ!
সাফল্য আসবে কিনা ঠিক নাই, কাজ হবে কিনা তারও কোন লক্ষণ নাই, কিন্তু আমরা আনন্দের সঙ্গে এক শহর থেকে অন্য শহরে ঘুরে বেড়াচ্ছি। নানা রকমরে পরিকল্পনা করছি। কোনটা হচ্ছে কোনটা হচ্ছে না। আমাদের এসব নিয়ে কোন মাধা ব্যথা নেই। আমরা ঘুরছি। ভাল মন্দ খাচ্ছি এবং ফেসবুকে সেটা শেয়ার দিচ্ছি। খাওয়ার ব্যাপারটা আমরা একটা আর্টের পর্যায়ে নিয়ে গেলাম, গড়ে উঠলো আমাদের বাংলাদেশ খাইদাই নেটওয়ার্ক
তারও ঠিক অব্যবহিত আগে প্রথম আলো’র বিজ্ঞান প্রজন্ম পাতায় ছাপা হচ্ছে জাফর স্যারকায়কোবাদ স্যারের যৌথ প্রযোজনায় নিউরনে অনুরণন – গণিত অলিম্পিয়াডের ৫টি প্রশ্ন। মেকাপের কারণে দেখা গেল, কিছুটা ফাঁকা জায়গা থাকে। ব্যাস জায়গা ভরার জন্য আমি নানা কিছু ওখানে লিখতে শুরু করলাম। লিখলাম এক সময় আমাদের একটা গাড়ি থাকবে। সে গাড়ি নিয়ে আমরা এক শহর থেকে অন্য শহরে যাবো। প্রত্যেক শহরে আমরা গণিত অলিম্পিয়াড করবো। এরকম নানা কিছু।
অচিরেই স্যাররা ছাড়াও আমার সঙ্গে জুটে গেল একদল ছেলে-মেয়ে। ওরাও সুখের জন্য লড়তে চায় না, ওরা লড়ার সুখ পেতে চায়। সবার নাম লিখতে গেলে আমার হয়তো ভুল হয়ে যাবে, শেষে আমার চাকরি থাকবে না! তাই নাম লিখছি না।
সে সময়েই আমরা সুখের একটা নতুন তরিকা আবিস্কার করি। সেটা হলো লক্ষ্য পূরণের জন্য প্রাণপন চেষ্টাতে যেটা করা হয় সেটাই ফল। ওতেই আনন্দ।
কাজে গণিত উৎসবের নেপথ্যের ট্যাগ লাইন হয়ে গেল – লেগে থাকো, লেগে থাকো, লেগে থাকো।

এই শিক্ষা আমি কাজে লাগাতে চাই আমার জীবন জুড়ে। তাই আমি আত্মজীবনী লিখি, ইঞ্জিনিয়ার হয়ে মার্কেটিং-এর বই লিখি। এই সবই আমি করি আনন্দে। লেখার আনন্দ, বকার আনন্দ। আনন্দের সঙ্গে পড়াই। গাঁয়ে মানে না, আপনি মোড়ল টাইপ। আমি জেনে গেছি, পাওয়ার চেয়ে করাতেই আনন্দ বেশি।

এখন যখন একটু সিনিয়র হয়েছি, একটু বস বস ভাব হয়েছে, তখন চারিদিকে তাকিয়ে দেখি আমি ২০ বছর আগে যেমন ছিলাম, সেরকম অনেকেই আছে। কিন্তু ওরা গোমড়া হয়ে থাকে, আনন্দ বলতে ওদের কাছে সিনেমা দেখা, ফেসবুকিং করা বা খেতে যাওয়া। আমার চারপাশে অনেকেকেই দেখছি তারা কাজটাকে আনন্দের সঙ্গে নিতে পারছে না। চাকরি করতে হবে বলে করা, কাজ করতে হবে বলে করা। কিন্তু কেন?

অনেকেই বলে- এটা আমার ড্রিম জব না। তাই কোন মতে সময় কাটাই। বটে। এ যদি হয় তাহলে তোমার কখনো ড্রিম জব করা হবে না।

ক’দিন ধরে ভাবছি ওদের কী কোন ভাবে সাহায্য করা যায়? আমি বলতে গেলে যে কোন কিছুই আনন্দের সঙ্গে করতে পারি। অন্তত বেজার হই না। আমি কি করি সেটা কি শেয়ার করা যায়? আসলে এমন কি কিছু নিয়মিত চর্চা করা যায় যাতে কিনা আনন্দের সঙ্গে কাজ করা যায়?

এসব ভাবনা থেকেই একটা কর্মশালা পরিকল্পনা করেছি। দুই ঘন্টার, কিন্তু দুই দিনে হবে। আপাতত আমার সঙ্গে যারা কাজ করে তাদেরকে নিয়ে করবো। সঙ্গে ১/২ জনকে হয়তো ইনভাইটেশন পাঠাবো। যদি দেখা যায় এটা কাজের তাহলে হয়তো পাবলিক ইভেন্টও করবো।

দেখা যাক কোন কাজে আসে কি না।

 

 

One Reply to “শেষ করার আনন্দ!”

Leave a Reply