দিন বদলের স্বপ্নটাকে হারিয়ে ফেলো না

Spread the love
ছবি- প্রথম আলো

সব মানুষেরই ছোটবেলা থেকে একটা স্বপ্ন থাকে। আমাদের পড়ালেখার পদ্ধতিটা এমন যে আমরা সব সময় কিছু প্রচলিত স্বপ্ন দেখারই চেষ্টা করি। তবে যত দিন যায়, ততই কিন্তু স্বপ্নরা ডালপালা মেলতে থাকে। আমাদের শিক্ষার্থীদের স্বপ্নগুলো আকাশ ছোঁয়, যখন সে এইচএসসির বৈতরণি পার হয়। আমি নিজে যে ব্যতিক্রম ছিলাম তা নয়। ফলে এইচএসসি পরীক্ষা শেষের মাত্র এক সপ্তাহ পরেই পড়ার টেবিলে ফেরত গিয়েছিলাম। আমার দাদি খুব অবাক হয়ে জানতে চেয়েছিলেন, আমি কি পরীক্ষায় ফেল করব যে রেজাল্টের আগেই আবার পড়তে বসেছি? আমার সময়টা আজ থেকে ৩১ বছর আগের। আর এখন?
এখন এইচএসসি পরীক্ষার আগেই স্বপ্নপূরণের প্রত্যাশায় কোনো না কোনো কোচিং সেন্টারে ছুটতে হয় কিংবা নিজের মতো করে প্রস্তুতি নিতে হয়। আর মেডিকেল, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ নিজের স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি না হওয়া পর্যন্ত এই দৌড় চলতে থাকে। যারা এই দৌড়ে সফল হয়, তারা তাদের স্বপ্নপূরণের ট্রেনে উঠে পড়ে, আর যারা পারে না!
বেশির ভাগই আসলে নিজের স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয় বা স্বপ্নের বিভাগে ভর্তি হতে পারে না। তারা ভর্তি হয় অন্য কোনো বিভাগে, অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাদের কী করা উচিত?
অনেকেরই মন ভেঙে যায়, আবার অনেকেই পরের বছরের প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু এখন বুয়েট বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় পরের বছরে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ নেই। কাজেই এই সুযোগও এখন বন্ধ হয়ে গেছে। তাহলে?
তাহলে রাস্তা আসলে একটা, সেটা হলো যে রাস্তায় উঠে পড়েছ, সেটায় ভালো করার চেষ্টা করা। পড়ার ইচ্ছে ছিল প্রোগ্রামিং, কিন্তু ভর্তি হয়েছ মেডিকেলে। ভাবছ, স্বপ্ন থেকে সরে যাবে কি না? তাহলে আমাদের মেহদী হাসানের কথা মনে রেখো। মেডিকেল কলেজে পড়েও কিন্তু নেতৃত্ব দিয়েছে অভ্র নামের জাদুকরি বাংলা লেখন-পদ্ধতিটি বানানোর।
কাজেই তুমি কোন বিষয়ে, কোন কলেজে ভর্তি হলে, স্বপ্নপূরণের জন্য সেটি খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। দরকার একাগ্রতা, নিষ্ঠা ও ভালোবাসার শক্তি।
কয়েক দিন আগে বাংলাদেশ ঘুরে গেলেন চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হ্যারল্ড ভারমাস। তিনি চিকিৎসাবিজ্ঞান পড়তে শুরু করলেও ভালো না লাগায় দর্শন হয়ে ইংরেজি সাহিত্যে প্রথমে ডিগ্রি করেন। পরে আবার চিকিৎসাশাস্ত্রে ফিরে এসে এমন কাজ করলেন যে শেষ পর্যন্ত নোবেল পুরস্কারই পেয়ে গেলেন। লক্ষণীয়, তিনি কিন্তু ইংরেজি সাহিত্যের পড়াটা শেষ করেছেন!
তার মানে হচ্ছে, স্বপ্নপূরণ একটি নিরন্তর চেষ্টা। সেটা সবার ক্ষেত্রে সোজা রাস্তায় হয় না। কাউকে কাউকে ভিন্ন পথে ঘুরে লক্ষ্যে পৌঁছাতে হয়। আবার কারও কারও মাঝপথে স্বপ্ন বদলে যায়। তখন নতুন গন্তব্যে পৌঁছানো সহজ হয়ে যায়।
কাজেই তুমি কোথায় ভর্তি হলে আর কোন বিষয়ে পড়ছ, সেটির একটি গুরুত্ব আছে, তবে সেটিই কিন্তু তোমার স্বপ্নপূরণের একমাত্র বিবেচ্য নয়। তোমার স্বপ্নপূরণের চেষ্টা তোমাকে নানানভাবে জিইয়ে রাখতে হবে, কখনো মুলতবিও রাখতে হতে পারে। কারণ, তুমি তোমার স্বপ্নের বিভাগে পড়তে পারছ না। কিন্তু যেখানে ভর্তি হয়েছ, সেখানেই তোমার অনেক ভালো করার সুযোগ আছে, যদি তুমি করতে চাও, যদি এগিয়ে যেতে চাও। আর সেটা করতে গিয়ে তোমার এমনও হতে পারে যে তুমি তোমার ছোটবেলার স্বপ্নটা বদলে ফেলতে পারো। আমাদের দেশের জনপ্রিয় স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান নাভিদ মাহবুবের কথা ভাবতে পারো। বুয়েট থেকে আর আমেরিকা থেকে ডিগ্রি নিয়ে প্রথমে প্রকৌশলী হিসেবে কাজ, পরে নকিয়া ও আইবিএমের কান্ট্রি সিইও হিসেবে কাজ করার পর নাভিদ তাঁর স্বপ্ন খুঁজে পেয়েছেন কমেডিয়ান হয়ে। বাংলা সাহিত্যে পড়ার পরও মোস্তাফা জব্বারের পরিচিতি এখন তথ্যপ্রযুক্তিবিদ হিসেবে। তাঁর হাত ধরেই তৈরি হয়েছে কম্পিউটারে সবচেয়ে জনপ্রিয় বাংলা কি–বোর্ড ও সফটওয়্যার ‘বিজয়’।
কাজেই তোমার স্বপ্নকে হারিয়ে যেত দিয়ো না। নতুন স্বপ্ন না পেলে প্রথমটাকেই আঁকড়ে ধরে রাখো। পথ যদি পাল্টেও যায়, লক্ষ্যে কিন্তু অটুট থাকা চাই। তাহলেই তোমার মুক্তি। কোন বিভাগে, কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছ, তা যেন তোমার স্বপ্নপূরণে বাধা না হয়।
হাল ছেড়ো না, বরং কণ্ঠ ছাড়ো জোরে।

 

[৩ জানুয়ারি’১৬ প্রথম আলো’র স্বপ্ন নিয়ে’তে প্রকাশিত]

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version