এ যে রাত্রি, এখানে থেমো না

Spread the love

 

জহুরুল হক স্যার, আল-মুতী স্যারদের যে সংগঠনটার সঙ্গে আমি প্রথম যুক্ত হই সেটির নাম বিজ্ঞান সংস্কৃতি পরিষদ। আমি যখন বুয়েটে চাকরি শুরু করি তখন একবার বইমেলাতে একটা স্টলও নিয়েছিলাম। সে এক অভিজ্ঞতা (অন্য কোনখানে বলবো)। তবে, একটা প্রশ্নের জবাব খুব দিতে হতো- বিজ্ঞান আর সংস্কৃতির সম্পর্ক। আমি সহজ করে বলতাম – বিজ্ঞানই হল সংস্কৃতি! মানে যে মানুষটি বিজ্ঞানাবর্তী, বিজ্ঞান মনষ্ক সেই আসলে সংস্কৃতিবান। এই যেমন রবীন্দ্রনাথ। তাঁর বিজ্ঞানবোধটা এতই আলোকিত যে, সেটি অনেকসময় আমাদের পশ্চিম ক্যাম্পাসের অনেক তথাকথিত প্রায়োগিক বিজ্ঞানচর্চাকারীদের দীনতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিযে দেয়। আর তাই সত্নয সন্ধানী বিজ্ঞান যেমন সংস্কৃতির থেকে দূরে থাকতে পারে না, সংস্কৃতির পূর্ণতার জন্য সেটিরও উচিৎ নয় বিজ্ঞান থেকে দূরে থাকা।

গতকালের আমাদের বছর শুরুর প্রথম আয়োজন যা কিনা আলোর বছরের শেষ আয়োজন তা নিয়ে কেবল এই কথাটাই বলা যায়

গোলাপের দিকে চেয়ে বললুম ‘সুন্দর’ ,

সুন্দর হল সে ।

তুমি বলবে , এ যে তত্ত্বকথা ,

এ কবির বাণী নয় ।

আমি বলব , এ সত্য ,

তাই এ কাব্য ।

এ আমার অহংকার ,

অহংকার সমস্ত মানুষের হয়ে ।

মানুষের অহংকার – পটেই

বিশ্বকর্মার বিশ্বশিল্প ।

আলোর কথামালা কিংবা আলোর ঝিলিকের সমাপ্তির জন্য এ্র থেকে চমৎকার আয়োজন আর কী হতে পারে। রবীন্দ্রনাথের গান, পাঠ এবং তাঁর সঙ্গে আইনস্টাইনের সেই কথোপকথন দিয়ে সাজানো ছিল দুই পর্বের আয়োজনের দ্বিতীয় পর্বটি। প্রায় দেড় ঘন্টার এই আয়োজন শুরু হওয়ার পর আড়াইজন ছাড়া আর কাওকে আমি আর মিলনায়তন ত্যাগ করতে দেখিনি।

আলো নিয়ে আশ্চর্য এই গ্রন্থণার গ্রন্থিকদ্বয় সেঁজুতি বড়ুয়া​ আর সোমা চৌধুরীর প্রতি তাই অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন। আর দূর থেকে সর্বোতভাবে  সঙ্গে থাকার লোকটি সুকান্ত চক্রবর্তী​কে আমরা সরাসরি পাইনি বটে, তবে তার উপস্থিতি অনুক্ষনই আমরা উপলব্দি করেছি। না-গান গাওয়ার দলের জন্য বিনম্র কৃতজ্ঞতা।

আর আমাদের বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির যে ভলান্টিয়াররা এই চমৎকার অনুষ্ঠানের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য সারারাত জার্নি করে এক শহর থেকে আর এক শহরে গিয়েছে,  থাকার টাকা বাঁচানোর জন্য রাতের বেলা শহরান্তর করেছে, নিজেদের পড়া-পাঠকে সঙ্গে করে দেশের ১৬টি জেলার ৩৮টি স্থানে আলোর ঝিলিক করেছে তাদের জন্য তিন উল্লাস। বিশেষ কৃতজ্ঞতা এএপবিডি এবং বিজ মোশনের জন্য। তাদের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা বছর উদযাপনে আমাদের অনেক সাহস জুগিয়েছে।

আলোর কথামালার চার কথক দীপেন ভট্টাচার্য, আরশাদ মোমেন, ফারসীম মান্নান  ও সৌমিত্র রায় জয় – সবার জন্য কৃতজ্ঞতা। দীপেন দা মাত্র কয়েকদিনের নোটিশে আমাদের প্রথম কথক হয়েছেন।

ইউনেস্কোর জন্যও একটা হাততালি কারণ আলোকে নিয়েও যে একটা বছর হতে পারে সেটিতো ওরা দেখিয়েছে, তাইনা।

আলোর বছর উদযাপনে আমাদের মটো ছিল একটা – অন্ধকারের বিরুদ্ধে অন্ধকার দিয়ে লড়াই করা যায় না। যতই আমরা দুই হাত উঁচিয়ে অন্ধকারের বিরুদ্ধে লড়ি না কেন, অন্ধকার দূর করার জন্য আসলে আলো জ্বালাতে হয়। আর একটা মোমবাতি যদি জ্বলে ওঠে তাহলে সেটি জ্বালিয়ে ফেলতে পারে লক্ষকোটি আলোর শিখাকে।

বছরজুড়ে এই আযোজনের পরিকল্পনা করার সময় এ আর খান স্যার আমাদের সঙ্গে ছিলেন। স্যারের সঙ্গে আমার একটা কথাও ছিল এমন যে, আরোর বছরের সমাপনীর আন্তর্রজাতিক আয়োজনটিতে তিনি আমাদের একজন কনিষ্ঠ ভলান্টিয়ারকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন (আমার প্ল্যান ছিল স্যারের ঘাড়ে খরচটা তুরে দেওয়া)। সে সুযোগটা আর আমরা পা্ইনি। ওপার থেকে স্যার নিশ্চয়ই গতকাল অনেক খুশি হয়েছেন কারণ বিজ্ঞান আর সংস্কৃতির মেলবন্ধনের যে কাজটার কথা তিনি বলেন ঠিক সেই পথেই তো এগুচ্ছি আমরা।

আলোর বছর হয়তো শেষ, কিন্তু আমাদের আলোর পথে চলাতো শেষ নয়।  আলোর পথের যাত্রা অনন্তকালের, অসীমের পথে। তাতেই আমাদের আগামী দিনের আশা ও আনন্দ। আর তাই সবাই মিলে জাতীয় সংগীত গাওয়ার আগের গানটি ছিল সলিল চৌধুরীর আলোর পথযাত্রী।

অনুষ্ঠানে বছর জুড়ে করা আয়োজন নিয়ে একটা ভিডিওচিত্র ছিল।

বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির ফেসবুক পেজে অনুষ্ঠানের অনেক ছবিও দেখা যাবে।

 

 

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version