ডিজিটাল সেন্টারের চার বছর

Spread the love

কাল ১১ নভেম্বর দেশের সকল ইউনিয়ন পরিষদে তথ্য সেবা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার চার বছর পূর্তি। এই উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে একটি উদ্যোক্তা সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে যা আগামীকাল প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠিত হবে। শুরু দিকে এগুলোর নাম ছিল ইউআইসি, পরে সেবা যোগ করে ইউআইএসসি এবং এখন এগুলোকে ডিজিটাল সেন্টার করা হয়েছে। ৪৫৪৭টি ইউনিয়ন ছাড়াও ৩২১টি পৌরসভা কেন্দ্র এবং ১১টি সিটি কর্পোরেশনের ৪০৭টি এরকম ডিজিটাল সেন্টার রয়েছে।

 

 

গতকালের সংবাদ সম্মেলনের তথ্য থেকে জানা গেছে এই সেন্টারগুলো এই চার বছরে ৫ কোটি সেবা দিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটা হল –
• চার লক্ষ ভূমি পর্চার আবেদন
• এক লক্ষ তরুন-তরুনীর কম্পিউটার প্রশিক্ষণ
• ২০ লক্ষ বিদেশ যেতে ইচ্ছুকের রেজিস্ট্রেশন
• ৯০ হাজার মোবাইল ব্যাংকিং সেবা
• ৫০০ সেন্টারে নিয়মিত স্বাস্থ্য সেবা

তবে, এই সেন্টারগুলোর সেবা বা তথ্য দেওয়ার যে হিসাব তার চেয়েও একটা বড় হিসাব আছে যেটা কখনো কেও বলে না। কেন বলে না আমি ঠিক জানি না। সেটি হল প্রদর্শনের ইফেক্ট – ডেমোনেস্ট্রেটিভ ইফেক্ট। এই কেন্দ্রগুলো আমাদের একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যাপারটাকে পৌছে দিয়েছে।
তবে, মাত্র চার বছরে দেশের আনাচে কানাচে এই সেন্টারগুলোর সাফল্যের আর একটি কারণ হল এর আগের কযেক বছরে কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এই ধরণের সেন্টারগুলো নিয়ে নানান কাজ করেছে। আমাদের গ্রাম প্রকল্পের রেজা সেলিম ভাই, ডি-নেটের অনন্য রায়হান, গ্রামীণ ফোণের সিইসি ইত্যাদি এখনকার ডিজিটাল সেন্টারগুলোর ভিত্তি তৈরি করেদিয়েছিল। তখন অবশ্য এগুলোকে ডিজিটাল সেন্টার বলা হত। সেই সময় ২০১১ সাল নাগাদ ২টি গ্রামের মধ্যে ১টিতে করে মোট ৪০ হাজার সেন্টারের চিন্তা করা হয়েছিল বিটিএন নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে যেটি আর শেষ পর্যন্ত হয়নি। কিন্তু, বেসরকারি একটি উদ্যোগ চড়াই উৎরাই পেরিয়ে একটি সরকারি উদ্যোগে পরিণত হওয়াটাও একটা বড় সাফল্য।
এই সেন্টারগুলোর কারণে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের কাছে প্রযুক্তির ব্যাপারটা অনেকটা খোলাসা হযেছে। অনেকেই বুঝতে পেরেছেন – প্রযুক্তির ব্যবহার যত বেশি হয়, কাজের সময় বাড়ে, কমে আসে নষ্ট সময়।
এই সেন্টারের যারা উদ্যোক্তা (প্রতিটিতে একজন নারী ও একজন পুরুষ), তারা প্রায় সবাই ব্যপক কস্ট এবং সংগ্রাম করে চলেছেন। পত্রিকা আর রিপোর্ট পড়ে বুঝতে পারি অনেকেই বেশ ভার আছেন। আবার অনেকের সংগ্রাম কঠিনতর।সেটই বাস্তব। সব জায়গার অগ্রগতি একই রকম হওয়ার কথা নয়, হবেও না। তবে, তেমে থাকা যাবে না।
২০০৭-২০০৮ সালে দিনাজপুরের মুশিদহাট আর সিরাজগঞ্জের মাধাইনগর ইউনিয়ন পরিষদ তথ্য কেন্দ্র থেকে এই বড় কর্মকাণ্ডটা সূচিত হয়েছিল। বোঝা যাচ্ছিল এই ধরণের সেন্টার একই সঙ্গে প্রদর্শণীমূলক এবং প্রযুক্তি সাফল্যের যুগপৎ উদাহরণ তৈরি করবে।
এবং সেটা সত্য হয়েছে।
আমি জানি এটুকু পড়ে অনেকেই হৈ হৈ করে উটভেন যে, অনেক সেন্টার কাজ করে না। এটি কিচুই হয়নি। ডিজিটাল সেন্টার দিয়ে কিছু হবে না ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি আগেই বলেছি সব সেন্টারের আর্তিক এবং বাস্তব অগ্রগতি সমান নয়। সেটা নিয়ে আমার কোন সমস্যা নাই। আমি খারি জানি এই সেন্টারগুলোর যে ইফেক্ট সেটা দেশের কম্পিউটারায়নের আগের দুইটা বড় উদাহরণের চেয়েও বড়। ১৯৯৪ সালে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ওএমএর প্রযুক্তির ব্যবহার এবং কম্পিউটারে ফলাফল দেওয়ার উদ্যোগ ছিল তৃণমূলে তথ্যপ্রযুক্তিকে নিয়ে যাওয়ার প্রথম বড় উদ্যোগ। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা আমাদের সমাজের একটা বড় অংশকে ছুঁয়ে যায়। কাজে সেবারই প্রথম কম্পিউটার শব্দটাকে একেবারে তৃণমূলে পোছে দেওয়া গেছে। তারপর অনেক বছর দরে ইন্টারনেটকে জনপ্রিয় করার নানান কৌশল নেওযা হয়। কিন্তু যে বার বলা হল ডিভি লটারীর আবেদন ইন্টারনেটে করতে হবে সেবার উপজেলা পর্যায়ে ডায়াল আপ ইন্টারনেট সেবা পৌছে গিয়েছিল।
এই সেন্টারগুলো আরো অনেকদূর যাবে বলে আমার ধারণা।

আজকে ডেইলি স্টার একটি চমৎকার প্রতিবেদন করেছে সেন্টারগুলোকে নিয়ে।

আজ সকালে বসে বসে ব্রডব্যান্ড কমিশন রিপোর্ট পড়ছিলাম। এর প্রকাশের পর আমি প্রায় একমাস ইন্টারনেট থেকে বাইরে ছিলাম যে কারনে সেটা আর পড়া হয়নি। আজ পড়তে পড়তে মনে হল – আহা, যদি এই সেন্টারগুলোতে আমরা ব্রডব্যান্ড সেবা পৌঁছে দিতে পারতাম! তাহলে কতই না ভাল হতো। কে না জানে ব্রডব্যান্ড হচ্ছে পরিবর্তনের একটি বড় হাতিয়ার। আমি বলি – অন্ন বস্ত্র বাসস্থান এবং ব্রডব্যান্ড।

সব কথা কি সবাই শুনতে পায়?

ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের সমাবেশ সফল হোক।

[ছক দুইটি ডেইলি স্টারের সৌজন্যে]

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version