ডেলিভারিং হ্যাপিনেজ – মুনাফার সন্ধানে-১: কেঁচোর খামার

Spread the love

প্রথমে তারা তোমাকে অগ্রাহ্য করবে,

তারপর তারা হাসবে,

এরপর তারা তোমার বিরুদ্ধে লড়বে,

শেষমেষ তুমি জিতবে।

– গান্ধী

 

 

আগের পর্ব

আমি নিশ্চিত যে আমার যখন নয় বছর বয়স তখন আমার সম্পর্কে গান্ধীর কোন ধারণাই ছিল না। এবং আমিও আসলে জানতাম না গান্ধী কে! কিন্তু গান্ধী যদি জানতেন যে, কেঁচো বিক্রি করে আমি কোটিপতি হওয়ার চিন্তা করেছি তাহলে তিনি আমাকে অনুপ্রাণিত করার জন্য ওপরের উক্তিটাই করতেন।

দুর্ভাগ্যবশত গান্ধী আমাদের বাড়িতে কখনো পা রাখেননি।আমার সবম জন্মদিনে আমি আমার বাবা-মা’র কাছে একটা অদ্ভুত আবদার করেছি। আমাদের বাসা থেকে উত্তরে ঘন্টাখানেকে দূরত্বে, সনোমাতে একটি কেঁচোর খামারে আমাকে নিতে হবে। তারা সেখান থেকে ৩৩.৪৫ লারে আমাকে এক বাক্স কাঁদা কিনে দিলেন। খামারীরা নিশ্চয়তা দিল যে ওখানে কমপক্ষে ১০০টা কেঁচো আছে।

আমি বই এ পড়েছি যদি একটা কেঁচোকে কেটে দুই টুকরা করা যায় তাহল সেটি না মরে দুইটা কেঁচোতে পরিণত হয়। এভাবে আমার কেঁচোর সংখ্যা কয়েকগুন বাড়ানোর কথা আমি ভেবেছি। তবে, কেঁচো কাটাকাটি যথেষ্ট সময় ও শ্রমসাধ্য। তাই আমি একটা বুদ্ধি করলাম। আমি আমাদের বাড়ির পেছনে একটা কেঁচোর বাক্স বানালাম যার নিচি দিলাম চিকন তার। তারপর বাক্সটাকে কাদা দিয়ে ভর্তি করে সেখানে ১০০ কেঁচোকে ছেড়ে দিলাম। একন যতবারই কেঁচোগুলো নিচে চিকন তারকে অতিক্রম করতে যাবে এমনিতেই টুকরা হয়ে যাবে। কাজে অচিরেই আমার খামারে অনেক কেঁচো পাওয়া যাবে। প্রতিদিন আমি একটা ডিমের কুসুম নিয়ে বাক্সের কাঁদার মধ্যে ছেড়ে দিতাম। কারণ আমি দেখেছি যারা এতলেট তারা কাঁচা ডিমের কুসুম খায় শক্তির জন্য। কাজে আমি ভেবেছি আমার কেঁচোগুলোও ডিম খেয়ে স্বাস্থ্যবান হবে।এ নিয়ে আমার বাবা-মা আসলে মোটেই চিন্তিত হতেন না। কারণ হল মা ভাবতেন এর ফলে আমি আর আমার ভাই ডিমের শাদা অংশটা খাচ্ছি আর তাতে আমাদের কোলেস্টেরলটা বাড়বে না।

এভাবে মাসখানেক যাবার পর আমি ভাবলাম আমার খামারের কী অবস্থা যাচাই করা যাক। আমি খুব সন্তর্পনে বাক্সের কাঁদা সরাতে শুরু করলাম যাতে ছোট ছোট কেঁচোগুলো ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।

এ কি! কিছুক্ষণের মধ্যে আমি টের পেলাম ওখানে কোন বাচ্চা কেঁচো নাই। এমনকী বড় যে ১০০টা ছেড়েছিলাম সেগুলোরও কোন অস্তিত্ব নাই!!!
হয় সেগুলো বাক্স ছেড়ে চলে গেছে না হলে ডিমের কুসুমের লোভে আসা কোন পাখির পেটে গেছে।

কেঁচোর সাম্রাজ্য গড়ে তোলার ব্যাপারটা এভাবেই শেষ হল। আমি বাবা-মাকে বললাম কেঁচোর খামারের কাজটা খুবই বোরিং। আমি আর ওতে নাই। আসলে আমি আমার ব্যর্থতার কথা আসলে বলতে চাইনি। আমার খুব খারাপ লেগেছে।
যদি টমাস আলভা এডিসন যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে হয়তো তিনি আমাদের বাসায় এসে বলতেন – আমি সাফল্যের পথে ব্যর্থ হয়েছি।

উনি মনে হয় অন্য কোন বিষয় নিয়ে ব্যস্ত। কারণ গান্ধীর মত উনিও কোনদিন আমাদের বাসায় আসেননি! মনে হয় তারা দুজনই ব্যস্থ আছেন নিজেদের নিয়ে!!!

[জাপ্পোসের প্রধান নির্বাহী টনি সেই-এর বিখ্যাত বই ডেলিভারিং হ্যাপিনেজ পড়ছি। সঙ্গে তাঁর অংশবিশেষ সবাইকে জানাচ্ছি। কতদূর যেতে পারবো আল্লাহ মালুম। এই পর্বটি ছোটই!]

পরের পর্ব – বেড়ে ওঠা

 

2 Replies to “ডেলিভারিং হ্যাপিনেজ – মুনাফার সন্ধানে-১: কেঁচোর খামার”

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version