অভিনন্দন সওগাত নাজবিন খান

Spread the love
সওগাত নাজবিন খান ছবি-প্রথম আলো

১৮ বছর পূর্তিতে প্রথম আলোর শ্লোগান ছিল – আঠারো আসুক নেমে। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার লাইন দিয়ে বাংলাদেশে আঠারোর আহবান ছিল সেটা। এ নিযে আমাদের মধ্যে মাতামাতিও কম ছিল না। দেশে-বিদেশে, অতীত-বর্তমানে যারা আঠারোর গুনে গুনান্বিত তাদের নিয়ে আমরা চার চারটি সংখ্যাও করেছি। এর মধ্যে একটি ছিল যারা মধ্য তিরিশের আগে বিদায় নিয়েছেন দুনিয়া থেকে। ওখানে গৌরবের গণিতবিদ রামানুজনকে নিয়ে আমার একটা লেখাও ছিল।
৬ নভেম্বর ২০১৬-তে প্রকাশ হয় শক্তির তারুন্য নামের বিশেষ সংখ্যা। সেই বিশেষ সংখ্যার প্রথম পাতায় একটি তরুনী ট্রেনে উঠছে এমন একটি ছবি ছাপা হয় যার সঙ্গে তার লেখা, “প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষাব্যবস্থার এই মডেলটি দেখুন”। লেখাটা পড়ে জানতে পারি এক তরুন ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স প্রকৌশলীর চেষ্টা। অন্য অনেকের মতো ছোটবেলা ঐ তরুনী, সওগাত নাজবিন খান লক্ষ করেছে গ্রামের ছেলে-মেয়েরা ক্রমশ পিচিয়ে পড়ছে নানান প্রতিযোগিতায়। ঐ লেখায় সওগাত লিখেছে, “এ দেশের অধিকাংশ মানুষ গ্রামাঞ্চলে বসবাস করে। প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে রয়েছে প্রচুর শিক্ষার্থী, যারা মানসম্মত শিক্ষালাভের সুযোগ পায় না। স্কুল-কলেজ পর্যায়ে অসম্পূর্ণ জ্ঞান লাভ করায় পরবর্তীকালে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েও প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না এই শিক্ষার্থীরা। কেউ–বা মাঝপথে পড়াশোনা বন্ধ করে দেয়। ফলে যুবসমাজে বাড়ছে বেকারত্ব, বাড়ছে হতাশা”।
এ বোধ প্রায় আমাদের সবার আছে। তবে সবার সঙ্গে সওগাতের পার্থক্য হলো সে কেবল লক্ষ করে সে বিষয়ে কোন রচনা লেখেনি। রাজধানী ঢাকার চাকচিক্যেও নিজেকে আটকে রাখার কথা ভাবেনি। বরং নিজের গ্রামে গিয়ে এমন এক স্কুল বানানোর উদ্যোগ নিয়েছে যা নজর কেড়েছে বিশ্ববাসীর। গড়ে তুলেছে দাদী ও দাদার নামে একটি ফাউন্ডেশন যার একটি উদ্যোগ হলো ঐ স্কুল।
ঐ লেখা পড়ে স্কুলটা দেখতে যাবার একটা ইচ্ছে আমার হয়েছিল তবে যথারীতি ভুলে গেছি।
এবারের বই মেলাতে আমার পড়ো পড়ো পড়োর জন্য কয়েকবার গিয়েছি। ওখানে আমারে করিন একটা বই উপহার দেয় ‘দেখা হবে বিজয়ে” শিরোনামের। সেটিতে আবার সওগাতের একটি লেখা পড়েছি।

প্রতিদিন ভোর বেলাতে কিছুক্ষণ মোবাইলে ইন্টারনেটে ঘোরাঘুরি করা হয়। গতকাল ভোরবেলা ফোর্বসের ঢুকে দেখি তাদের “এশিয়ার ৩০ এর নীচে ৩০” তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। এরকম তালিকা দেখলে আমার প্রথম কাজ হয় সেখানে আমাদের কেউ আচে কী না তা খুজে দেখা।  সেখানেই সওগাতের নাম খুঁজে পেলাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ওর সঙ্গে কথা বলে অভিনন্দন জানিয়েছি।
মুষ্ঠিমেয় একদল তরুন বিভ্রান্ত হযে যখন আমাদের বৈশাখী ঐতিহ্য মোবিল ছুড় দিচ্ছে, ফেসবুকে রাজা-উজির মেরে ফেসবুক বিপ্লব সাধন করছে তাদের বিপরীতে সওগাতের মতো তরুনরাই বিশ্বের কাছে অন্য বাংলাদেশকে তুলে  ধরছে। শুম্ভ-নিশুম্ভের এ লড়াই-এ সওগাতদের জিততেই হবে।
আজ বৈশাখের প্রথম সকালে প্রথম আলোর ৩ নম্বর পাতায় ফোর্বসের তালিকায় সওগাতের নামের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। সেখানে সওগাত পরিস্কার করে বলেছে, যে কথাটা আমরা ভুলে থাকতে চাই – বাংলাদেশতো গ্রামই।

নতুন বছর আমাদেরকে শেখড়ে ফিরতে উ্জ্জীবিত করুক, সওগাতের মতো তরুনদের পাশে দাড়ানোর সাহস দিক।

শুভ নববর্ষ।
 

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version