সহজ ভাষায় পাইথন

Spread the love


গতকাল বইমেলাতে ছিলাম কিছুক্ষণ। স্টলের ভেতরে বসা যায়নি। বাইরে দাড়িয়ে থেকে কারও সঙ্গে কথা বলেছি, গল্প করেছি আর এক দুইজনকে পড়ো পড়ো পড়ো তে অটোগ্রাফ দিয়েছি। এক ফাকঁ দেখলাম একটা হালকা পাতলা ছেলে একটা বই এগিয়ে দিল।
গণিত উৎসবের ঘটনার পর থেকে আমি একটু সাবধান হয়েছি। দেখলাম এটি মাকসুদুর নহমান মাটিনের সহজ ভষায় পাইথন ৩। ৩ শুনে মনে হতে পারে আরও দুইটা বই আছে। আসলে ৩ হলো পাইথনের বর্তমান চালু সংস্করণ, বই-এর তৃতীয় খন্ড নয়।

আমি বললাম – আমাকে দিচ্ছো কেন। মাটিন হয়তো মেলায় আছে। ওর অটোগ্রাফ নাও।
ছেলেটি বললো – স্যার আমিই মাটিন।
আমি ওর দিকে তাকালাম। হালকা-পাতলা, সঙ্গে একজন বন্ধুও আছে।
আমার প্রশ্নসূচক দৃষ্টি দেখে সে বললো- স্যার, বইটা আপনার জন্য।
“বাহ, লিখে দেবা না?”
সলজ্জ লেখক তখন আমাকে অটোগ্রাফ দিলেন!

 

মাটিনের এই বইটাতে আমরা সবাই, মানে আমরা যারা মুক্ত দর্শনের অনুসারী তারা সবাই আছি। কারণ বইটা ও আমাদেরকে উৎসাহিত করেছে।
আমার মনে পড়লো ২০০৭ সালে একটি স্প্যানিশ কোম্পানি আমার কাছে ১০০ পাইথন প্রোগ্রামার চেয়েছিল আর আমি বলেছিলাম ১ জন আছে! এখন সে সময় আর নেই। বাংলাতেই এখন অনেক বই লেখা হচ্ছে। হাইস্কুলের ছেলে-মেয়েদর জন্য আর মেয়েদের জন্য আলাদা করে প্রোগ্রামিং কনটেস্ট হচ্ছে। পিছিযে পড়া তথা হাবলুরাও যেন পারে সেজন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। কাজে সামনে প্রোগ্রামারদের দিন।

পাইথন প্রোগ্রামিং ভাষা দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে কারণ এর সহজবোধ্যতা।  পাইথন এখন বিশ্বের ষষ্ঠ জনপ্রিয় ভাষা।
গুগল যে কয়টা ভাষাকে প্রমোট করে পাইথন তার একটা। মাটিনের বইটা শুরু হয়েছে গুগলের কোয়ালিটি টিম লিডের একটা কোটেশন দিয়ে। সেখানে তিনি বলছেন, “শুরু থেকেই গুগলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে পাইথন ব্যবহৃত হচ্ছে। গুগলের সিস্টেমের বিস্তার আর উন্নয়নের ফলে এর চাহিদাও ক্রমাগত বেড়ে চলেছে।” সেই সঙ্গে তিনি আরও উল্লেখ করেন পাইথন দক্ষদের গুগল খুঁজছে।
পাইথন একটি প্রোগ্রামিং ভাষা। তবে সি-এর মতো সনতানী ভাষা নয় বরং এটি একটি ওওপি মানে অবজেক্ট অরিয়েন্টেড প্রোগ্রামিং ভাষা। তবে, শুরু করার জন্য পাইথন খুবই ভালো কারণ এর সহজ থেকে ধীরে ধীরে ভেতরে যাওয়ার জন্য এটি খুব ভাল। মাটিনও এই পদ্ধতি অনুসরণ করেছে তার বইতে।
কানিংহাম ও রিচির সি প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ বইতে তারা প্রোগ্রামিং ভাষা শেখার একটা সার্বজনীন পদ্ধতির কথা বলেছেন। সেটা প্রায় সবকিছু শেখার সঙ্গে যায়। যেমন সাতার শেখা। যদি কাউকে ছবি একে, বড় বড় বর্ণনা মুখস্ত করে সাতরাতে পাঠানো হয় তাহরে তার কী পরিণতি হবে আমরা জানি। সাতার কিংবা প্রোগ্রামিং হলো – ‘গাইতে গাইতে গায়েন আর বাজাতে বাজাতে বায়েন’ হয়ে উঠা। কাজে প্রোগ্রামিং শেখার সহজ পথ হলো প্রোগ্রাম লেখা।
হ্যালো ওয়ার্ল্ড –এর মতো মাটিনের প্রধম কোড হলো স্ক্রিনে লেখা “ I am gonna be a Pythonist”)। কাজটা এতো সোজা যে এর জন্য মাত্র এক লাইন লিখলেই হয়

>>>Print (“I am gonna be a Pythonist”)
এই লেখাটি যখন লিখছি তখন আমার পাশের টেবিলে চা খাচ্ছে আমার ছেলে। ও মোটামুটি পাইথন পারে। ওর স্কুলে ও একটা পাইথন ক্লাব চালায়। কথা বলতে বলতে বললো- পাইথনটা শিখে ফেলা কিন্তু খুবই সহজ।   কাজে শুরুতে যদি পাইথন শেলকে ক্যালকুলেটর হিসাবে ব্যবহার করা যায়, তাহলে শুরু থেকে একটা মজার অনুভূতি থাকে। সেটি পুরোটা সময় জুড়েই থাকে। অর্থাৎ প্রতিটি ধারণা ও নিয়মকানুন জানার সঙ্গে সঙ্গে তা হাতে কলমে করে দেখার পদ্ধতি মাটিন বাতলে দিয়েছে। এ হচ্ছে লার্নিং বাই ডুইং।
এই বইতে ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হয়েছে পাইথনের ভিত্তি তথা মূল সিনট্যাক্স এবয় পর্যায় ক্রমে লজিক, ফাংশন, ক্লাস, অবজেক্ট ইত্যাদি। কিছুটা ডেটা স্ট্রাকচার ও এলগরিদমও আলোচনা হয়েছে।
মনে রাখা দরকার কেবল ওয়েব প্রোগ্রামিং-এ নয় ডেটা সায়েন্স, ডীপ লার্নিং-এর মতো জায়গাতেও পাইথনের ব্যবহার বাড়ছে।

কাজে যারা প্রোগ্রামিং আর পাইথন শিখতে আগ্রহী তাদের সবারই কাজে লাগবে এই বই।

মাটিন আর তার বই-এর সেকেন্ড ডিফারেন্সিয়াল নেগেটিভ হোক।

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version