মাইনাসে‌-মাইনাসে প্লাস!!!

Spread the love

বাসায় একটু তাড়াতাড়ি ফেরাতে রুবাইকে তার পড়ার টেবিলে পেলাম। বিদুষীকে এই সময় দেখা যায় তার ভাই‌এর পেছনে লাগতে। কিন্ত ওকে দেখলাম না। জানলাম মা’র সঙ্গে খালার বাড়িতে গেছে।

“কী হচ্ছে আজকে?” জানতে চাইলাম।

“কিছু হচ্ছে না বাবা। “ করুন মুখে বললো রুবাই। “আজকে আমরা শিখলাম মাইনাসে মাইনাসে প্লাস হয়। কিন্তু কেন হয় সেটা স্যার বলেননি! তারপর একটা অংক করতে দিয়েছেন যা এখন করার চেষ্টা করছি।“

খাতায় দেখলাম রূবাই ‌-১১কে ৩দিয়ে ভাগ করেছে। খাতায় সেটা এরকম

৩)‌-১১(‌-৩
‌    – ৯
‌‌‌‌   ——
‌      -২

“হয়নি তো!”
“কেন হবে না বাবা।“ রুবাই শুধালো, ভুলটা কোথায় হয়েছে।“

আমি বললাম, “তুমি একটা ছোট সংখ্যা থেকে বড় সংখ্যাকে বিয়োগ করেছ। ভাগের সময় সেটা করা যায় না। ”

রুবাই মাথা চুলকানো দেখে বুঝলাম ও -১১ যে ‌-৯ থেকে ছোট সেটা মেনে নিতে পারছে না।

ভাবলাম চেষ্টা করে দেখি ওকে বোঝানো যায় কী না।

বললাম, “প্রত্যেক সংখ্যার একটি যোগাত্মক বিপরীত (Additive Inverse) সংখ্যা আছে। মানে হলো প্রত্যেক সংখ্যার সঙ্গে এমন একটি সংখ্যা যোগ করা যায় যার ফলে যোগফল হবে শূন্য। যেমন 5 এর সঙ্গে -5 যোগ করলে হবে শূণ্য। নেগেটিভ সংখ্যার এটিই কারণ।“
”মানে কোন সংখ্যার সঙ্গে যে সংখ্যাটা যোগ করলে যোগফল শূণ্য হবে?”

”হ্যা। একটু খেয়াল করলে বোঝা যাবে যে, একটি বিপরীত সংখ্যার বিপরীত সংখ্যা নেওয়া হলে মূল সংখ্যাটিই কিন্তু পাওয়া যাবে। ”
“সেটা কীরকম, বাবা?”
“যেমন” আমি বললাম, “-5 এর বিপরীত সংখ্যা কতো? “
“5“ বললো রুবাই।

“গুড। এটাকে আমরা লিখতে পারি -(-5)=5!!! বুদ্ধি করে বলা যায়, নেগেটিভ সাইন দুইবার নিলে পজিটিভ সাইন পাওয়া যাবে।“

“কিন্তু সেটা তো একটা সংখ্যার বেলায়” রুবাই‌এর সংশয় কাটে না।

আমি বললাম। “তাহলে এখন আমরা গুণের বেলায় এইটা খাটাতে পারি কিনা দেখি।
গুণফলের উৎপাদকগুলোর যে কোন একটির সাইন বদলালে গুণফলের চিহ্নও বদলাবে।

মানে হলো
(-কিছু একটা)(অন্যকিছু) হবে (কিছু একটা)(অন্যকিছু)-এর বিপরীত। নইলে দুই এর যোগে শুন্য পাওয়া যাবে না।
”একটা উদাহরণ দাও, বাবা।“

”হুম। উদাহরণ হিসাবে বলা যায় (-4)×(-5) হবে (4) ×(-5) এর বিপরীত! কারণ যদি তাদের যোগ করা হয় আর বিতরণ নীতি (distributive law) প্রয়োগ করা হয় তাহলে পাওয়া যাবে-

(-4) ×(-5) + (4) × (-5)
=(-4+4) × (-5)
=0×(-5)
=0
কাজে আমরা বলতে পারি (-4) ×(-5) হলো (4) × (-5) এর বিপরীত। (4) × (-5) কিন্তু আসলে (4) × (5) এর বিপরীত।
তার মানে, (-4) ×(-5) হলো (4) ×(5) এর বিপরীতের বিপরীত!!! অথবা 20 এর বিপরীত (-20) এর বিপরীত (20)!!

তার মানে হলো দুইটি নেগেটিভ সংখ্যাকে গুণ করে যে একটি পজিটিভ সংখ্যা পাওয়া যায় তার একটি ধনাত্মক সংখ্যার বিপরীতের বিপরীত হলো ঐ সংখ্যা নিজে!!!

”এতো। আরো জটিল হয়ে যাচ্ছে!!!” রুবাই একটু অবাক হয়ে বললো।

আমি ভাবলাম তাহলে একটু অন্যভাবে চেষ্টা করা যাক। “ প্রথমে আমরা জানি, 1 কী। এক হলো একক (1 এবং-1)। মানে হলো কোন সংখ্যাকে 1 দ্বারা গুণ করলে সেটিি থাকে। আর -1 দিয়ে গুণ করলে বিপরীত(নেগেটিভ) সংখ্যাটা পাওয়া যায়। মানে
-3= (-1) × (3)

তাহলে
(-2) × (-2)
= (-1) × (2) × (-1) × (2)
= (-1) × (-1) × (2) × (2)
=(-1) × (-1) × (4)

কাজে আমাদের বোঝা দরকার (-1) × (-1)=?
এবং আমরা মেনে নিয়েছি (-1) × (-1)= +1 !!!!!!!!

এটা যদি আমরা মেনে না নেই তাহলে নানা রকম উল্টাপাল্টা হতে পারে-
যেমন, ধরি (-1) × (-1)= -1
এখন বিতরণ নিয়ম প্রয়োগ করি
(-1) ×(1+ -1) = (-1) × (1)+(-1) × (-1)
বা, (-1) × (0) = -1 +(-1)
বা 0 = -2 !!!!! হাহাহা
কাজে (-1) × (-1)= -1 হতে পারে না। কাজে (-1) × (-1)= 1 হবে। ”

একটানে এটুকু বুঝিয়ে আমি একটু থামলাম। রুবাই মনে হচ্ছে মেনে নেবার মুডে চলে গেছে।
“তুমি সংখ্যা রেখা শিখেছো না?”
“জানি। জানি। সংখ্যা রেখায় সব সংখ্যারা থাকে।“ বললো রুবাই।
“সংখ্যা রেখার কোন দিকে বড় সংখ্যারা থাকে?”
“ডান দিকে যতো যাওয়া যায ততো সংখ্যার মান বাড়তে থাকে। ৩ থাকে ২ এর ডান দিকে। ”
আমি বুঝলাম ওকে বরং সংখ্যা রেখাতেই মাইনাসে মাইনাসে গুন টা বোঝানো যাক।

”সংখ্যা রেখায় 2 কে 3 দিয়ে গুণ করার অর্থ কী?
”কিন্তু আমাদেরতো সংখ্যারেখায় গুণ দেখানো হয়নি। কেবল যোগ আর বিয়োগ দেখানো হয়েছে। “
“তাতে কী। গুণ মানে তো কয়েকবার করে যোগ।“ আমি বললাম। “সংখ্যা রেখায় গুণের অর্থ হলো একজন লোকের সংখ্যা রেখা বরাবর লাফ দেওয়া। কতোবার লাফ দেবে আর এক লাফে কতোধাপ যাবে। 2 কে 3 দিয়ে গুণ মানে হলো 2 বার লাফ এবং প্রতিবারে 3 ধাপ যাওয়া! ”
“হুম। বুঝলাম। জোরে লাফ দিতে হবে।“ বললো রুবাই।
“ঠিক তাই। এখানে দুইটি বিষয়। প্রথমটি লাফের সংখ্যা আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে লাফের ধাপ। “
“কিন্তু গুনের কাজটা সংখ্যা রেখার কোন দিকে যেতে হবে আর কোথা থেকে শুরু করতে হবে?” জানতে চাইলো রুবাই।
”গুণের বেলায় শুরু করতে হবে শুণ্য থেকে। যদি পজিটিভ বার লাফ দিতে হয় তাহলে প্রথমে সংখ্যা রেখার দিকে এসে ডানদিকে (যোগবোধক সংখ্যার দিকে) তাকাতে হবে। আর যদি নেগেটিভ বার লাফ দিতে হয় তাহলে দাড়াতে হবে বামদিকে মুখ করে, মানে নেগেটিভ দিকে তাকিয়ে। এরপর প্রতিবারে লাফ দেওয়া।
এখানেও দুইটি ব্যাপার। যদি প্রতিবারে লাফের ধাপের সংখ্যা পজিটিভ হয় তাহলে সামনের দিকে লাফ দিতে হবে। আর যদি প্রতিবারে লাফের ধাপের সংখ্যা নেগেটিভ হয় তাহলে লাফটা দিতে হবে পেছনের দিকে!!!
তাহলে -2 কে -3 দিয়ে গুণ করলে কী করতে হবে। প্রথমে শূণ্যে এসে দাঁড়াতে হবে নেগেটিভ সংখ্যার দিকে তাকিয়ে। তারপর পেছন দিকে লাফ দিতে হবে দুই বার, প্রতিবারে 3 ধাপ করে। তাহলে সে কোথায় থামবে?”

”+6।“ চিৎকার করে উঠলো রুবাই।

“গুড। এতো বুঝে ফেলেছো।” আমি বললাম। “এখন বলো সংখ্যা রেখাতে -৯ কি -১১ এর ডানে না বামে”
“ডানে। তার মানে -৯ কি না -১১ থেকে বড়। আমার অংকের ভুল টা আমি ধরে ফেলেছি বাবা। ” আনন্দিত রুবাই তার খাতা নিয়ে ঝটপট ‌-১১ কে ৩ দিয়ে ভাগ করে ফেললো।

আমি দেখলাম এবারে ওর ফলাফল সঠিক হয়েছে।

 

 

 

ঠিক এই সময় বাসার কলিং বেল বেজে উঠলো। ঘরের দরজা খুলতেই বিদুষী দৌড়ে ভিতরে এসে আমাদের দুইজনকে দেখলো।
তেমন কিছুই হয়নি এমন একটা ভাব করে রুবাই পড়ার টেবিল থেকে উঠে নিজের রুমে চলে গেল!!!

 

5 Replies to “মাইনাসে‌-মাইনাসে প্লাস!!!”

  1. ভালো লেগেছে স্যার।সময় হলে শুন্য জোড় না বিজোড়, পজিটিভ না নেগেটিভ এর ব্যাখাটা শেয়ার করবেন প্লিজ

    1. শূন্য একটি জোড় । কিভাবে ?

      ১। যেকোন জোড় সংখ্যা ২ দ্বারা বিভাজ্য । শূন্যকে ২ দ্বারা ভাগ করলে আমরা শূন্য পাই, যা একটি পূর্ন সংখ্যা । সুতরাং শূন্য জোড় ।

      ২। আমরা যদি সংখ্যা রেখায় দেখি, তাহলে দেখব প্রত্যেকটা বিজোড় সংখ্যার আগের ও পরের সংখ্যাটি অবশ্যই জোড় । যেমন ঃ ৫ এর আগে ৪ এবং পরে ৬ জোড় সংখ্যা । আবার যেহেতু ১ বিজোড় এবং এর আগের সংখ্যা শূন্য । সুতরাং শূন্য জোড় ।

      আমি আমার মত করে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করলাম । স্যার অবশ্যই এর চেয়ে ভাল উত্তর দিতে পারবেন 🙂

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version