পিওন থেকে প্রকাশক

Spread the love

চট্টগ্রামের তামাকুন্ডি লেনের একটি কয়েক তলা বাড়ির দোতলায় আমার দাদা ইউনুস চৌধুরী থাকতেন। দাদা মানে আমার দাদীর ভাই। দাদীরা ছিলেন ১ বোন, তিন ভাই। তো সেই দাদার সবচেয়ে ছোট ছেলে, আনোয়ার হোসেন। আমাদের পিন্টু চাচা।
ঐ বাসাতে গেলে আমি আর আমার ভায়ের লোভ থাকতো পিন্টু চাচার রুমের দিকে। কারণ ঐ রুম ভর্তি বই। খাটটা শুধু দেখা যেতো। বাকী সবটা জুড়ে সেখানে কেবল বই বই বই। তো, আমি যখন ফোর বা ফাইভে পড়ি তখন একবার তার রুমে গিয়ে একটা ঈদ সংখ্যার মতো কিছু একটা দেখলাম। কিন্তু প্রচ্ছদের ছবিটা আমাদের ঈদ সংখ্যা বেগমের মতো না। হাতে নিয়ে দেখলাম এটির গায়ে লেখা পুঁজো বার্ষিকি আনন্দমেলা। চাচার কাছে জানলাম আনন্দমেলা নামে একটি কিশোর পত্রিকা বের হয় কোলকাতা থেকে। এটি তার পূজো বার্ষিকি। দাদাকে দিয়ে বলিয়ে সেই বইটা বাসায় নিয়ে আসলাম।
সেই প্রথম আমার ‘গোঁসাই বাগানের ভুত পড়া’। সেই প্রথম জানা  গোগোলের নাম, কাকাবাবুর নাম। সে সময় আনন্দমেলার পূঁজো বার্ষিকীতে সুনীল, শীর্ষেন্দু, তারাপদ, সত্যজিৎ (শঙ্কু কাহিনী) রায় – কে থাকতেন না। বাসায় আমি, ভাইয়া আর মা কয়েকদিনেই ঐ মোটা বইটা পড়ে ফেললাম। তারপর মার সঙ্গে আর একদিন হাজির হলাম পিন্টু চাচার ঘরে। সেবারে আরও দুইট পূজো বার্ষিকী নিয়ে আসলাম আর সেই সঙ্গে জেনে আসলাম কীভাবে আমরা নিয়মিত আনন্দমেলা পেতে পারি। ততোদিনে আনন্দমেলা কেনার জন্য মাসিক বরাদ্দ দিয়ে ফেলেছেন আমার মা! আমার ছোটবেলার জগৎটা গড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে আনন্দমেলা আর আনন্দ পাবলিশার্সের একটা ভাল ভূমিকা আছে।


ক’দিন আগে সম্পাদকের বাসা থেকে আনন্দবাজারের প্রকাশক বাদল বসুর ‘পিওন থেকে প্রকাশক’ বইটা নিয়ে এসেছি। সেটি পড়তে পড়তে আমার মনে পড়ছে শীর্ষেন্দু, সুনীল, শিবরামের সঙ্গে আমার পরিচয়ের কথা। সুনীল, শীর্ষেন্দুর সঙ্গে পরিচয় ঐ আনন্দমেলা দিয়ে। তবে, সত্যজিৎ রায়কে আগেই চিনে ফেলেছি  বাদশাহী আংটির জন্য। আনন্দমেলা পড়ে জানলাম প্রফেসর শঙ্কুর কথা।
বলা যায় প্রায় একই সঙ্গে সুনীল, দুই সমরেশ, সত্যজিৎ, শীর্ষেন্দু, মতি নন্দীর প্রেমে পড়ে যাই সে সময়। আর কে জানি সেখানে একটা ধাঁধার পাতা করতেন। সে পাতাটি আমাকে পরে অনুপ্রাণিত করেছে গল্পে গল্পে ধাঁধা লিখতে।

বাদল বসুর লেখা পড়তে পড়তে মনে হচ্ছে আমি আমার ছোটবেলায় ফিরে যাচ্ছি। আমার সঙ্গে দেখা হয়ে যাচ্ছে বুকুনের যে কিনা অঙ্কে তেরো পেয়েছিল। কেউ বাসার বেল বাজালে মনে হচ্ছে নকুড় বাবু মনে হয় বেড়াতে এসেছেন। এখনই হয়তো একটা অ্যানাকোন্ডাকে হাজির করবেন আমাদের বাসায়।
বাদল বসু পিওন থেকে আনন্দবাজারের প্রকাশক হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গে এখনো লোকে বই পড়ে। কাজে ওখানকার প্রকাশকদের অবস্থা আমাদের প্রকাশকদের মতো সঙ্গীন নয়। বই না পড়ার মনোবেদনা এই বই-এ নেই। কিন্তু আছে এক চমৎকার সময়ের বর্ণণা। পড়ছি আর ছোটবেলায় ফিরে যাচ্ছি।
ভাবছি তাড়াতাড়ি পড়ে শেষ করবো না। সময় নিয়েই পড়বো এই ৬০০ পুষ্ঠার বইটি।

#পড়োপড়োপড়ো

Leave a Reply Cancel reply