শুভ জন্মদিন জব্বার ভাই

Spread the love

আজ মোস্তফা জব্বার ভাই-এর জন্মদিন।

মোস্তফা জব্বার নামটি আমি প্রথম জানি আনন্দপত্র নামে একটা পত্রিকার সম্পাদক হিসাবে। সে সময় ঝকঝকে ছাপা, রঙ্গিন পত্রিকার ওপরে একদিকে লেখা থাকতো কম্পিউটার কম্পোজে ছাপা। মানে হল, লেটার প্রেস বা লাইনো নয়, এ পত্রিকার প্লেট বানানো হতো ট্রেসিং পেপার থেকে। আর ঐ ট্রেসিং পেপার বের হতো এপল কম্পিউটারে লাগানো লেজার প্রিন্টার থেকে! এসবই সে সময় কষ্ট কল্পনা ছিল। পত্রিকারটির চরিত্র আমার ঠিক মনে নেই কিন্তু সেটা যে কম্পিউটার কম্পোজে বের হতো এটাই মনে গেঁথে গিয়েছিল।

এরপর আমি যোগ দেই বুয়েটের কম্পিউটার সেন্টারে। সেখানে একদিন লেখক মোস্তফা জব্বারের নাম শুনি, নবম-দশম শ্রেণির কম্পিউটার শিক্ষা পাঠ্যপুস্তকের লেখক হিসাবে। ততোদিনে আমার রুটিরুজির সঙ্গে কম্পিউটার যুক্ত হয়ে গেছে। সে সময়কার ইন্টারেকশনটা ভাল ছিল না। আমি খালি শুনতাম বাংলার একটা লোক (জব্বার ভাই বাংলাতে মাস্টার্স করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে) কেন কম্পিউটারের বই লেখবে! ঠিকই তো। কম্পিউটারের লোকেরা কই? তাদেরইতো লেখার কথা। সে সময় আর একটা বই আমাদের মুজিবুর রহমান স্যার মূল্যায়ন করে বাতিল করেছিলেন যেখানে ইম্প্যাক্ট প্রিন্টারের বাংলা করা হয়েছিল – ধাক্কা প্রিন্টার!!! তবে সেটা আর আলোর মুখ দেখেনি।

আমি মাঝে মধ্যে ভাবতাম বাংলার লোকেরা কেন কম্পিউটারের বই লিখবে (সে সময় আমার নিজের ধ্যান-ধারণা খুবই সংকীর্ণ ছিল। এখনো এর জন্য লজ্জাবোধ করি)। পরে কফিল উদ্দিন স্যার যখন পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান হলেন তখন আমি গল্পটা জানলাম। কম্পিউটার শিক্ষার পাণ্ডুলিপি আহবান করে এনসিটিবি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়। সেখানে তিনটি পাণ্ডুলিপি জমা পড়ে। তিনজন বড় বড় স্যার সেগুলো মূল্যায়ন করেন এবং তিনটির মধ্যে জব্বার ভাই‌এর পাণ্ডুলিপিটি বেশি নম্বর পেয়ে পাঠ্য হিসাবে নির্বাচিত হয়। সে থেকে সেই বইটা পাঠ্য। আমার কাজের ব্যস্ততা কিংবা কোন বিষয় আষয়ে তখন জব্বার ভাই-এর সঙ্গে আমার কখনো সামনা-সামনি দেখা হয়েছে কিনা আমার মনে নেই।

ওনার সঙ্গে আমার সামনা-সামনি দেখা হওয়ার ব্যাপারটাও হয়তো সেরকম সুখকর নয়। সম্ভবত ১৯৯৯-২০০০ সালের দিকে ঐ পাঠ্যপুস্তকটি নতুন করে লেখা হয়। জব্বার ভাই-এর লেখা আমাদের একজন স্যার সম্পাদনা করে এনসিটিবিতে জমা দেন। ও বইটি একটি ব্যতিক্রমী ধারায় ছাপতে যাচ্ছিল। সব পাঠ্যপুস্তক প্রথম সম্পাদনার পর একটা যৌক্তিক মূল্যায়নের ভিতর দিয়ে যায়। সে সময় কম্পিউটার শিক্ষার বইটি সেরকম কোন মূল্যায়নের ভিতর দিয়ে যায়নি কারণ যাদেরকে দাওয়াত দেওয়া হয়েছিল তারা কেউ কুমিল্লা বার্ডে গিয়ে মূল্যায়নে রাজি হয় নি।

কাজে বইটি যখন ছাপার অনুমোদনের জন্য চেয়ারম্যানের কাছে যায় তখন তিনি আমাকে পাণ্ডুলিপিটি পড়ানোর জন্য বলেন, বিনে পয়সায়। পড়তে গিয়ে আমার তো আক্কেল গুড়ুম! কারণ প্রচুর পুরানো তথ্য এবং সাংগঠনিক কাঠামোতে গোলমাল। বললাম – বই-এর যৌক্তিক মূল্যায়ন কই? বললো – হয়নি। কারণ কেও ঢাকার বাইরে যাবেন না। ঠিক আছে – ঢাকায় এই মূল্যায়নের একটা ব্যবস্থা করলাম এবং ঢাবি, বুয়েট, কম্পিউটার কাউন্সিলের লোকজনকে দিয়ে মূল্যায়ন করা হল চ্যাপ্টার ওয়াইজ। বেশ কিছু পরিমার্জন, ছবি ঠিক করাসহ অনেক কিছু চিহ্নিত হলো। প্রশ্ন দাড়ালো সম্পাদনার কাজটা কে করবে?
– কেও সেটা করতে রাজী হলেন না কারণ সম্পাদনার জন্য যে সময় দিতে হয় আর বোর্ড যে টাকা দেয় সেটার মধ্যে কোন সাযুজ্য নাই। আর এই বই সম্পাদনার টাকা অলরেডি দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কাজেই ভলান্টারিলি কাজটা আমরাই করতে হয়েছে। সে সময় জব্বার ভাই-এর সঙ্গে আমার কয়েকবার সামনা-সামনি ও মুঠোফোনে কথা হয়েছে। তখনই আমি টের পেয়েছি এই মুক্তিযোদ্ধা মানুষটির বাংলার জন্য ভালবাসা কতো! সেই থেকে তার সঙ্গে আমার সখ্যতা, ঝগড়া এবং একত্রে কাজ করা!

এই মানুষটি বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তিকে জনপ্রিয় করার জন্য, একজন মানুষের পক্ষে সম্ভব, এরকম প্রায় সব কাজই করেছেন, করে যাচ্ছেন।

আমি এখনো ভাবি, জব্বার ভাই পাঠ্যবই লিখতে গেলেন কেন? আমি ওনাকে কখনো জিজ্ঞাসা করিনি। তবে, এখন বুঝি সেটি ভালবাসা জনিত ছিল। কম্পিউটারকে জনপ্রিয় করার জন্য তাঁর যে ভালবাসা সেটা।

জব্বার ভাই‌এর মতো কয়েকজনের হাত দিয়ে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি তৈরি হয়েছে যা কীনা দেশে কম্পিউটার ব্যবসায়ীদের সংগঠন এবং তা কম্পিউটারকে জনপ্রিয় করার জন্য কাজ করে। বেসিসের তিনি এক নম্বর সদস্যও বটে!জব্বার ভাই-এর বিপক্ষে আমাদের তরুন প্রজন্মের একটি অংশের অনেক রাগ। তাদের নিজেদের অনেক যুক্তি আছে এর পক্ষে। জব্বার ভাই‌এর সঙ্গে আমার নিজেরও অনেক বিতর্ক আছে, তবে সেসব আমি আজকে আলাপ করতে চাই না।

আজ জব্বার ভায়ের জন্মদিন ।

আজকের দিনটা সুন্দর ও আনন্দময় হোক।

আপনার আগামীদিনগুলো সুন্দর হোক। ঠিক হোক বেঠিক হোক, তথ্যপ্রযুক্তির পক্ষে আপনার লড়াই চিরন্তন হোক। নিত্য নতুন লড়াই-এ যোগ দিন। সে যুদ্ধে আপনি জয়ী হোন।

 

শেষ কমিউনিস্টদের  ভালবাসা আপনার সঙ্গে থাকুক।

 

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version