দ্যা মোমেন্ট অব লিফট-১: রোড এহেড থেকে মোমেন্ট লিফট
“আমি ওতদূর ভাবি না। বলতে পারবো না। আমি স্বতস্ফূর্ত সিদ্ধান্ত নিতে ভালবাসি। তখন যোগাযোগ করলে ভাল হয়।”
এ কথা বলে মেয়েটি তার ফোন নম্বর সিইওকে দিয়ে বেড়িযে গেল পার্কিং লট থেকে।
সেদিন সন্ধ্যাতে সিইও ফোন করে বললে- আজকে কি আমরা খেতে যেতে পারি? এটা কি বেশি স্বতস্ফূর্ত হয়ে গেল?
…
…
….
এই গল্পের নায়ক-নায়িকার নাম বিল ও মেলিন্দা গেটস। বিল-মেলিন্দা গেটস ফাউন্ডেশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা।
মাস কয়েক আগে আমি মেলিন্দার এই বই-এর খবর শুনি। এর আগে ফেসবুকের শেরিল স্যান্ডবার্গের লিয়েন ইন পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে। মেলিন্দার বই-এর দুই-একটা রিভিউ পড়ি আর অপেক্ষা করতে থাকি কখন বইটা হাতে বা মোবাইলে পাবো এবং পড়তে শুরু করবো। ৯ জুলাই’১৯ আমার অপেক্ষার অবসান হয়েছে।
মেলিন্দাকে আমি গত কয়েকবছর ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফলো করি। তাঁর কাজ এবং তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আমি প্রথম আগ্রহী হই যখন দেখি উনি আমাদের মতো চিন্তা করেন। “আমাদের মতো” মানে কি?
গবেষণা সংক্রান্ত কোন আলোচনায় আমি সব সময় বলি ম্যালেরিয়ার কোন ভ্যাকসিন আমেরিকাতে আবিস্কার হবে না। কারণ ওদের ম্যালেরিয়া হয় না। আমি শুনেছি ১৯৫৩ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পুত্র/কন্যা কেউ একজনের পোলিও হওয়ার কারণেই পোলিওর টিকা আবিস্কার হয়েছে। কাজেই পুরান ঢাকার বিজ্ঞানি প্রয়াত শাহাবুদ্দিন আহমেদ যখন “মশা কামড়াবে কিন্তু ম্যালেরিয়া-ডেঙ্গু হবে না” নিয়ে কাজ শুরু করেন তখন আমি তাঁকে ফলো করতে শুরু করি। যদিও তিনি কাজ শেষ করতে পারেননি কিন্তু তাঁর কাজটাই এখন গুগল করার চেষ্টা করছি।
এই বইটির পুরো নাম হলো The Moment of Lift: How Empowering Women Changes the World।
বোঝা যাচ্ছে এই বই-এর মুল লক্ষ্য হলো নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে মেরিন্দার মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা। এমন সময়ে তিনি বইটা লিখেছেন যখন আমাদের মতো দেশে মেয়েদেরকে “কেবল ভোগ্য পণ্য” হিসাবেই বিবেচেনা করা হচ্ছে। গত কয়েকবছরে আমাদের সামাজিক অবস্থা কতোটা নিম্নগামি হয়েছে তা হয়তো সমাজবিজ্ঞানিরা বলতে পারবেন।
প্রযুক্তিকে ঘিরে আমার যে কর্মজগৎ সেখানেও আমি এমনটা দেখি।
আমাদের আইসিটি বিষয়গুলোতে এখন ২৯% মেয়ে পড়াশোনা করলেও কর্মক্ষেত্রে তাদের অবস্থান ৯-১২% এর মতো। #মিসিংডটার নামে আমরা একটি কার্যক্রম পরিচালনা করে দেখেছি আর্থ-সামাজিক কারণ বিবেচনা না করেও নারীদের জন্য কর্মপরিবেশ যেমন ভাল করা সম্ভব তেমনি তাদের অংশগ্রহণও বাড়ানো সম্ভব। এ নিয়ে আমাদের কাজের একটি পেপারও প্রকাশিত হয়েছে। আমরা এখন আমাদের জানাশোনাকে একটা প্রকল্প আকারে বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি।
যাহোক, মেলিন্দার দৃষ্টিবঙ্গি এবং কাজের স্টাইল (টাকার অঙ্ক বাদ দিলে) আমাদের অনেকের সঙ্গে মিলে। এ জন্য মোমেন্ট অব লিফট পড়ার জন্য আমি উদগ্রীব হয়ে ছিলাম। কাল থেকে আজ পর্যন্ত যেটুকু পড়েছি তাতে মনে হচ্ছে এ এক আশ্চর্য অভিজ্ঞতা হবে।
মেলিন্দা যে সমাজ আর সংস্কৃতিতে মেয়েদের এমপাওয়ারমেন্টের কথা বলেছেন আমি সেই সমাজেই বড় হয়েছি। আমি আমার মাকে দেখেছি, চাচীদের দেখেছি। আমার বোনদেরও দেখেছি। আমার অন্যদেরও দেখেছি। এই সমাজে যারা লড়ে তাদেরও দেখেছি।
বই পড়তে পড়তে মনে হরো মেলিন্দার বৈশ্বিক অভিজ্ঞতার সঙ্গে আমার নিজের ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতার কথাও বরং আমার সাইটে লিখে রাখি। বই পড়তে গিয়ে আমার মা’র কথা, দাদীর কথা মনে পড়ছে। সঙ্গে আমার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতাসমুহও বটে।
অনেকদিন ধরে নিজের সাইটে লেখা হয় না।
দেখা যাক নিয়মিত হতে পারি কিনা।
5 Replies to “দ্যা মোমেন্ট অব লিফট-১: রোড এহেড থেকে মোমেন্ট লিফট”
Leave a Reply Cancel reply
You must be logged in to post a comment.
স্যার সালাম। আপনি যদি এইভাবে লিখেন অন্তত মিলিন্ডা গেটসের বইয়ের কলছুটা হলেও জানতে পারব নাহলে ওই ইংরেজি বই পড়ে আমি শেষও করতে পারব না
নিয়মিত লিখেন স্যার। আমরা প্রতিদিনই আপনার ব্লগে আসি নতুন লেখা পড়ার জন্য, নতুন বা পুরাতন জিনিস নতুন করে জানার জন্য।
আপনার এটা কাজে লাগতে পারে।
https://feedly.com/
Well Done Sir