ইনোসেন্টের শরবত ৬- মানুষই আসল তবু (ইটস অল এবাউট পিপল)

Spread the love

তোমার কোম্পানির কাজ কারবার নানান বিষয়ে হতে পারে। তুমি হয়তো কোন পণ্য তৈরি করো যা গ্রামে গঞ্জে পৌছে দিতে হয় অথবা তুমি কেবল কর্পোরেট কোম্পানিকে কোন সেবা দাও। হতে পারে তোমার কোম্পানিতে অনেক লোক কিংবা কর্মীর সংখ্যা খুবই কম। যাই হোক না কেন, তোমার উদ্যোক্তা জীবনের একটা বড় অংশ তোমার কাটবে মানুষকে ঘিরে, তাদের নিয়েই হবে তোমার কাজ- তাদের আশা, ইস্যু, প্রতিভা কিংবা ‘টেকা-টুকা’ নিয়ে দাবী দাওয়া। পুরো ব্যাপারটা কেমন হবে? উত্তেজনার না ভয়ের? সেটা অবশ্য পুরোটাই তোমার ওপরেই নির্ভর করবে। যদি ব্যাপারটা তোমার কাছে ভয়ের হয় তাহলে তুমি তোমার ব্যবসা গুটিয়ে কোন একটা চাকরির চেষ্টা করতে পারো!

পৃথিবীর সকল সাফল্য-ব্যর্থতার মূল কিন্ত মানুষ। “মানুষই আসল তবু, নইলে সবই অপচয়”। এই জন্য কিন্তু এন্টার্কটিকা মহাদেশ নিযে কেও তেমন আলাপ-আলোচনা করে না কারণ সেখানে মানুষ নেই। আর দেশ মানে তো ‘এক লোকের পাশে অন্য লোক’। ব্যবসাও কিন্তু তাঁর ব্যতিক্রম নয় – একটি মানব সম্প্রদায়। একটি বিশেষ সম্প্রদায়ের মধ্যে কোন একজন লোকের কিছু একটা করা বা না করাই তো শেষ পর্যন্ত ব্যবসা। তই না?

কাজে তোমার প্রতিষ্ঠানের সাফল্যের জন্য ঠিক মানুষের খোঁজ কর, তাদের পেছনে দৌড়াও, তাদের যত্ন নাও। শেষ পর্যন্ত তারাই কিন্তু তোমার প্রতিষ্ঠানকে দেখভাল করবে।

স্বপ্নের স্টার্ট আপ টিম

একেবারে শূণ্য থেকেও একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যায়, যেমনটি আমরা করেছি। তবে, এজন্য দরকার নানান দক্ষতা – পণ্য বা সেবার উন্নয়নের পাশাপাশি লাভ-লোকসানের হিসাব বোঝা, সকালে ব্যাংক ম্যানেজারের সঙ্গে পোলট্রি খামারের গুরুত্ব আলোচনা করা আর বিকেলে দোকানদারের কাছে নিজের খামারের মুরগী বিক্রি করা, সারাদিন নিজের হাতে ভ্যান আনলোড করে সন্ধ্যায় নানান চার্ট আর গ্রাফ দিয়ে বিনিয়োগকারীকে মুগ্ধ করার চেষ্টা করা। এর মানে হল ব্যবসা শুরু করে তা চালিয়ে নেওযার জন্য আমাদের অনেক লোকের প্রয়োজন যারা ঠিক ঠিক কাজটা করতে পারে।

স্টার্ট আপের জন্য আমাদের পরামর্শ হল সমমনা কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন দক্ষতার লোকদের একত্রিত হওয়াটা ভাল। যদি ঠিক ঠিক লোক একত্রিত হতে পারো তাহলে তোমাদের কাজের অনেকখানিই হয়ে যাবে।

আমাদের জন্য স্টার্ট আপ টিম নিয়ে ঝামেলা ছিল না। আমরা তিনজনই ঐ টিম। ব্যবসা করার সিদ্ধান্তের পরের শনিবারেই আমরা আমাদের কাজ ভাগ করে ফেলি। কাজটা আমরা করেছি জনের কোস্পানির অফিসে। অনুমতি ছাড়া কাজটা করা ঠিক হয়নি বটে, তবে কাজটা ভাল ছিল। বিশেষ করে জনের কোম্পানির ক্লায়েন্ট মিটিং রুমে অনেক বিস্কুট থাকতো। আমরা তিনজন তিনজনকে চিনি কাজেই পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমরা আমাদের কাজ ভাগ করে ফেললাম – রিচার্ড – মার্কেটিং; জন- অপারেশন; এডাম – বিক্রয় (আর বিস্কুট খাওয়া)। সেই সময় আমরা জানতাম না। পরে জেনেছি আমাদের স্টার্টআপ টিমটাকে আদর্শ বলা যায়। কারণ আমরা তিনজনের লক্ষ্য ও মনোভাব এক কিন্তু কাজের দক্ষতা আলাদা।

তোমার স্টার্টআপ টিমে এই বিষয়টা খেয়ালে রেখো। বাংলাদেশে অনেক স্টার্টআপে কেবল প্রোগ্রামিং-এ দক্ষ লোক থাকে। ফলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চোখে পড়ে না। স্টার্টআপ টিম মেম্বারের কাজ কিন্তু পেইড এমপ্লয়ী দিয়ে পূরণ হয় না!

বাসের নতুন যাত্রী

সব ব্যবসাতেই কিন্তু লোক লাগে, আগে হোক, পরে হোক। কাজে যে কোন নতুন কোম্পানির যদি কিছু সিরিয়াসলি করতে হয় তাহলে সেটা হল – নিয়োগ, রিক্রুটমেন্ট। একটা ব্যবসা সর্বোচ্চ সেই পরিমাণ ভাল হতে পারে, যেখানকার কর্মীরা যতোটা ভাল। কাজে নতুন কাউকে বাসে তোলার আগে ঘাম ঝড়াও, সিদ্ধান্ত নাও। মনে রেখ, যত ব্যবসা-সিদ্ধান্ত তুমি নেবে, এটি হবে তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।

এই বিষয়ে খালি আমাদের কথা শোনার দরকার নেই। গুগলের কথা ভাবো। আমরা একই সময়ে যাত্রা শুরু করি। এখন আমাদের ২৫০ কর্মী আর ওদের ১২,০০০। এই সাফল্যের কথা যখনই ভাবি তখনই খুব অবাক হই। কিন্তু বিস্মিত হই যখন জেনেছি এই ১২ হাজার কর্মীর প্রত্যকেকে হয় ল্যারি বা সের্গেইকে মোকাবেলা করতে হয়েছে, ইন্টারভিউ দিতে হয়েছে। (গুগলের এই নিয়মটা মনে হয় এখন আর নেই। মানে ইন্টার্ণশীপ সিনেমায় এটি দেখানো হয়নি)।

আমরা তাদের ধারণা চুরি করেছি। একটি ১২ হাজারের কোম্পানির প্রত্যকের ব্যাপারে যদি তার ফাউন্ডাররা সময় দিতে পারে তাহলে ২৫০ জনের একটি কোম্পানিতে আমরা সেটি পারবো না কেন?

 কী চাচ্ছো সেটা জানো?

গ্রেট লোকদের তোমার কোম্পানিতে আনতে চাইলে প্রথমে তোমার জানতে হবে তুমি আসলে কী চাও? আগে লোক ঠিক করে পরে যদি তার জন্য কাজ ঠিক করতে চাও তাহলে বিপদে পড়বে।

আমরা যখন লোক নিয়োগ করি তখন আমাদের একটা বুদ্ধি ছিল – ভ্যান টেস্ট। মানে ঔ লোকের সঙ্গে কি তিন ঘন্টা একটা ভ্যানে কাটানো যাবে? সেটি কি আনন্দময় হবে? এটা একটা ভাল মানসিক পরীক্ষা কারণ কর্মীর সঙ্গ যদি এক্সাইটিং না হয় তাহলে কিন্তু কাজটা আগাবে না। (ঠিক এরকম না হলেও, কো-ফাউন্ডার বাঁচাই-এর ক্ষেত্রে আমার নিজের একটা পরামর্শ আছে। সেটি হল তার সঙ্গে কোন লম্বা সফরে বের হয়ে পড়া। সেটি হতে পারে দুজন বা তিনজন মিলে লাউয়াছড়ার বনে যাওয়া বা কক্সবাজারে যাওয়া। ঢাকা থেকে যাওয়া এবং ফিরে আসার মধ্যে পদে পদে নানান সিদ্ধান্ত নিতে হবে, পরস্পরকে প্রটেক্ট করতে হবে এবং নিশ্প্রাণ জার্নিকে আনন্দময় করতে হবে। ঐ এক সফরেই বোঝা যাবে তারা তিনজন একসঙ্গে কতদূর যেতে পারবে?)

যত দিন যেতে থাকলো ততই আমাদের চোখ-কান খুললো এবং আমরা রিক্রুটমেন্টের একটা তরিকা বের করে ফেললাম। আমরা বুঝলাম ঝাঁক থেকে নিজেদের কই বের করার জন্য পর্যায়ক্রমে তিনটি বিষয় আমাদের দেখা দরকার-

ক. ভ্যালুজ – এরই মধ্যে আমাদের চমৎকার ভ্যালু ডকুমেন্ট হয়েছে- ন্যাচারাল, এন্টারপ্রিনিউরাল, রেস্পন্সিবল, কমার্শিয়াল, জেনারাস (আগের পর্ব)। এটা অবশ্য ভ্যানের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তবে, আমরা তাদেরকে খুঁজি যারা আমাদের ভ্যালুজের গানগুলো গাইতে পারে, হোক সেটা হেড়ে গলায় কিংবা গুন গুন করে। তবে এটা বোঝা কঠিনই। সিভির মধ্যে আমরা এক্সট্রাকারিকুলার একটিভিটিজ-এর হিসাব করি। আমাদের পছন্দ সক্রিয় লোকদের। যারা নিজের এলাকার একটি সমস্যা সমাধানের জন্য নিজেই চেস্টা করেছে, স্কুলে কোন টিমকে লিড করেছে কিংবা ছোট বেলায় কোন না কোন ব্যবসা করার ধান্দা করেছে্। আমরা এই লোকটারে খুজে বের করার চেষ্টা করি যে কমিটমেন্ট আর প্যাশনের জায়গা থেকে তার যাবতীয় কাজকরার চেষ্টা করে।

খ. ক্যাপাবিলিটিজ , সক্ষমতা – ইনোসেন্টের ভ্যালুজ ধারণ করে এমন কাউকে পাওয়ার পর আমরা তার সক্ষমতা যাচাই করি। আচ্ছা যে কাজের জন্য নিতে যাচ্ছি সেটা পারবে তো? সেলসের লোক হলে নেগোশিয়েন আর ফিনান্সের হলে লাভ-লোকসানের হিসাব? এর জন্য আমরা ব্যবহারিক পরীক্ষা (ইন্টারভিউ, টেস্ট)র ব্যবস্থা করি। আরো একটা বিষয়ে নজর দেই। সেটি হল ইনোসেন্টে তাকে এমন কাজ করতে হবে যা জীবনে সে কখনো করে নাই। এরকম পরিস্থিতিতে সে কেমন করে সেটিও আমরা ইন্টারভিউতে ‘বিরক্তিকর প্রশ্ন’ করে বের করার চেষ্টা করি।

গ. অভিজ্ঞতা : ভ্যালুজ আর সক্ষমতার ব্যাপারটা ইনোসন্টের দলে আসার জন্য যতটা দরকার, অভিজ্ঞতার ব্যাপারটাকে আমরা ঠিক ততোটা গুরুত্ব দেইনা। বলা বাহল্য কোন অভিজ্ঞতা ছাড়াই তো আমরা তিনজন কোম্পানিটা শুরু করেছি! তবে, সিনিয়র পজিশনে লোক নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা অভিজ্ঞতাকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেই। কারণ সেখানে এক্সপেরিমেন্টের সুযোগ কম। সিনিয়র পজিশনের লোকের কাজে কিন্তু এক্নপেকটেশনও বেশি থাকে। অর্থাৎ তাকে প্রায় পরদিন থেকেই ডেলিভারি দিতে হয়। কাজে পূর্ব-অভিজ্ঞতা না থাকলে এটি কখনো সম্ভব হবে না।

আমি কোথায় পাবো তারে?

ভালকথা কী চাচ্ছি সেটা না হয় বুজলাম। কিন্তু আদর্শ লোক কই পাবো? কেবল বাংলাদেশ নয়, সারা পৃথিবীতেই এটি একটি চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে যে সকল প্রতিষ্ঠান ক্রমাগত বেড়ে চলেছে সেখানে এ এক কঠিন পরিস্থিতি। আমাদের পরামর্শ সহজ – ২৪ ঘন্টা ধরেই তোমাকে নতুন আর গ্রেট লোকের সন্ধান করতে হবে, দরজা সব সময় খোলা রাখতে হবে এবং ফর্মাল আর ইনফর্মাল সব মাধ্যমকেই ব্যবহার করতে হবে।

আমরা আমাদের ‘২৪ ঘন্টা প্রমোশনের’ জন্য নানান কাজ করি।

১. ব্যবসা কথন – নিজেদের কাজের কথা বলতে আমরা কখনো লজ্জা পাই না। আমাদের ওয়েবসাইটে, যে কোন উদ্যোক্তা হাটে আমাদের স্টলে, মিডিয়াতে, প্রতিবেশির মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে, বন্ধুর ছেলের জন্মদিনে – কোথাও নয়! সব জায়গাতেই আমরা আমাদের ভ্যালুজ আর কাজের পরিবেশের কথা তুলে ধরার কোন চান্স মিস করি না। এটি অবশ্য একটি বড় সুযোগ কারণ বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আলাপের শুরুতে জানতে চাওয়া হয় – আপনি কী করেন? তখনই আমরা সুযোগটা নেই।

২. ইনোসেন্টের লেবেলে চাকরির বিজ্ঞাপন – আমরা আমাদের বোতলের লেবেলেও চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়েছি। মজার বিষয় হল এতে সাড়াও পেয়েছি।

৩. ইন্টারনাল হেড হান্টিং ফী – আমরা আমাদের কর্মীদের উৎসাহিত করি যাতে তারা নতুন কর্মী ধরে নিয়ে আসে। এরকম ক্ষেত্রে যদি কোন কর্মীর সুপারিশকৃত কারো চাকরি হয় ইনোসেন্টে, তাহলে তাকে আমরা একটা ফী দেই। অবস্থা ভেদে এটি ২০০০-৫০০০ পাউন্ড পর্যন্ত হয়। আমরা ব্যক্তিগত সুপারিশকে বিশ্বাস করি।

কইলজ্যার ভিতর বান্ধি রাইখ্যুম …

তো, কী চাই কারে চাই সেটা যেমন হল, সঠিক লোকটাকেও পেলাম। কিন্তু ব্যাটা-বেটি থাকবো তো? নাকি একদিন সকালে আমাকে গুড বাই বলে চলে যাবে? সকল উদ্যোক্তার এটি একটি বিশাল সমস্যা।

‘আমার লোক বাগায়া নিয়ে গেল অমুক’ এমন শোনাটাই প্রায় স্বাভাবিক।

এই কাজে আমরা যে সবসময় সফল হয়েছি তা নয়। তবে, দিনে দিনে আমরা কিছু কৌশল আয়ত্ব করেছি যা ভাল লোকদের ইনোসেন্টে বেশিদিন থাকতে সাহায্য করে। আমাদের সাত কৌশল –

১. কী চাও পরিস্কার করে বল – লোক ধরে রাখার সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে তার কাছে কী চাওয়া হচ্ছে সেটা পরিস্কার করে বলা। এজন্য প্রতিবছর জানুয়ারি মাসে সব ইনোসেন্ট কর্মী নিজ নিজ সুপারভাইজারের সঙ্গে মিটিং-এ বসে। কাজ হল বছরের পাঁচটি অবজেক্টিভ ঠিক করা – কোন কোন প্রজেক্টের পেছনে তারা দৌড়াবে, কী কী রেজাল্ট ডেলিভারি করবে। এই কাজে আমরা প্রচুর সময় দেই। আমরা চাই ব্যক্তির লক্ষ্য আর কোম্পানির লক্ষ্যের মধ্যে যেন একটি সমন্বয় থাকে, সমান্তরাল যেন না হয়। এটি কিন্তু একটা বড় কাজ করে সেটি হল মোটিভেশন। একজন নবীন কর্মীও বুঝতে পারে তার কাজের ফলাফলে কোম্পানি কীভাবে উপকৃত হবে। অন্যদিকে টপ-লেভেলের কর্মীরাও তাদের কাজের রেজাল্টের আপ-ডাউনটা বুঝতে পারে। ফলাফল ব্যক্তি আর কোম্পানির জন্য উইন-উইন সিচুয়েশন।

২. কেমন হল সেটা বলা – কর্মীদের কাজের যত বেশি ফীডব্যাক দেওয়া যাবে ততই সেটা তাকে উৎসাহিত করবে। আর এটিও করতে হবে তাৎক্ষণাৎ। কারণ সময়ের একফোড় অনেক বেশি মূল্যবান। কোন কাজে কোন ভুল হলে সেটি সঙ্গে সঙ্গে ধরিয়ে দিতে হবে আবার কোন কাজ ভাল হলে তার প্রসংশাও করতে হবে সঙ্গে সঙ্গে। কাউকে যদি তার দোষ-ত্রুটি ধরিয়ে দেওয়া না হয়, তাহলে সে দোষ-ত্রুটিগুলো নিজে নিজে সারিয়ে নেবে এমনটা ভাবা বোকামি।

৩. পারফরম্যান্স মেজারিং

অবজেক্টিভ ঠিক করা যেমন দরকার তেমনি দরকার সেগুলোর অগ্রগতি নিয়মিত মাপা। তাতে, কর্মীরা বুঝতে পারে যে, তাদের অগ্রগতি ঠিকমত হচ্ছে কী না। ইনোসন্টে আমরা বছরে দুইবার এই কাজটা করি। প্রত্যকেকে ১ থেকে ৫ এর মধ্যে নম্বর দেওয়া হয়। ৫ হলো অসাধারণ, গ্রেট আর ১ হল খারাপ, রাস্তা মাপার সময় হয়েছে। কটু শোনালেও এই কাজটা করতে হবে কারণ এর মাধ্যমে একজন বুঝতে পারে সে কোথায় আছে, কী করছে এবং তার সময় আসলে কোম্পানির কোন কাজ লাগছে কী না!

৪. শেখার সুযোগ : উন্নয়ন আর পরিবর্তন ভাল। এর বিপরীত হলো থেমে থাকা। ‘গতিতে জীবন মম, স্থিতিতে মরণ”। কাজে কর্মীদের নানান সুযোগ দিতে হবে যেন তারা তাদের দক্ষতা, জ্ঞান, কোম্পানি সম্পর্কে বোঝা এগুলো প্রতিনিয়ত বাড়াতে পারে। সত্যি কথা বলতে কি, এই কাজটা প্রত্যেক কর্মীর নিজেরই করতে হয় এবং তারা সেটি করেও। তবে, কোম্পানিকে সে সুযোগটা করে দিতে হয়।

শেখার সুযোগের একটা বড় অংশ আমরা করি ইন-হাউস প্রশিক্ষণের মাধ্যমে। দুইদিনের একটা আবাসিক ইনোসন্টে একাডেমি যাতে থাকে – আর্ট অব প্রেজেন্টিং, নেগোসিয়েশন, প্রবলেম সলভিং, প্রিন্সিপল অব ফিন্যান্স ইত্যাদি। সব ট্রেনাররা কিন্তু ইনোসন্টেরই কর্মী/ব্যবস্থাপকরা হোন। এর মূল মন্ত্র হল ‘শেখার সর্বোত্তম পন্থা হলো অন্যকে শেখানো’। আমরা এই নীতিটাই মেনে চলি।

এর বাইরে আমরা সব কর্মীকেই বিভিন্ন পেশাগত প্রশিক্ষণে পাঠাই। এমনকী উচ্চ শিক্ষায়ও উৎসাহিত করি – খন্ডকালিন এমবিএ, মার্কেটিং ডিপ্লোমা ইত্যাদি।

ছোট ছোট জিনিষও করি। যেমন কেও যদি একটা বিজনেজ বই পড়ে তারপর সেটি ইনোসেন্ট লাইব্রেরিতে দান করে তাহলে আমরা বই-এর দাম দিয়ে দেই!!!

৫. লভ্যাংশ শেয়ার করা – কর্মীরা যদি কঠিন পরিশ্রম করে এবং সেটার ফলে যদি কোম্পানি লাভবান হয়, তাহলে কর্মীদেরও তার একটা হিস্যা পাওয়া দরকার। এ ব্যাপারে আমাদের নীতি হল – সবাই কিছু না কিছু পাবে। যে বেশি অবদান রেখেছে সেই বেশি পাবে’। প্রতিবছর আমরা আমাদের মুনাফার একটা লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করি। যদি সেটা অতিক্রম করা যায় তাহলে কর্মীরা তার একটা ভাগ পেয়ে যায়।

৬. কীপ কমিউনিকিটিং – যে বিষয়ে লোকে জানে না সে বিষয়ে কারো কাছ থেকে কিছু আশা করা যায় না। কোম্পানি সম্পর্ক সবাইকে কমবেশি জানতে হবে নতুবা একটা কো-হেরেন্ট হবে না। প্রতি সোমবারে আমরা সবাই একত্রিত হয়ে ৩০ মিনিটের একটা মিটিং করি। সব বিভাগীয় প্রধান সেখানে বলে নতুন কী হচ্ছে, কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা হচ্ছে কিংবা কি কি করা যাবে। তারপর সবাই মিলে আলোচনা করে যার যার কাজে চলে যায়। এর বাইরে প্রতিমাসে প্রধানদের সঙ্গে বিজনেজ আপডেট মিটিং হয়। সেখানে প্রতিটি সেক্টরের খোঁজ খবর হচ্ছে। আর এর বাইরে রয়েছে আমাদের ইন্ট্রানেটে কোম্পানি উইকি। যেখানে যে কেও যা খুশী লিখতে পারে।

৭. ডু দ্যা সফট স্টাফ – কঠিন কঠিন সব কাজের পাশাপাশি কর্মীদের মনোরঞ্জনের জন্য নানান কিছু আমরা করি। ভাল খাবার দেই, ১০০০ পাউন্ডের বৃত্তি দেই যা দিয়ে সে সাইকেল কিনে শহরে একটা চক্কর লাগাতে পারে। রয়েছে ফ্রি হেলথচেকের ব্যবস্থা। রিচার্ডের গ্ল্যামারাস বউ প্রতি বুধবার কর্মীদের ফ্রি যোগ-ব্যায়াম শিক্ষা দেয়। আর রয়েছে অনেক ক্লাবের সঙ্গে যৌথ আয়োজন।

এই সবই আমাদের কর্মীদের ‘চার্জ’ করার জন্য যাতে তারা কোম্পানির জন্য আরো ভাল  কিছু নিয়ে আসতে পারে।

[এই চ্যাপ্টারটি অনেক বড়। ব্লগে একবারে পড়ার মত দৈর্ধে রাখার জন্য আমি কিছু খুটিনাটি ডিটেইলস বাদ দিয়েছি। আর আগের পর্বের অনুবাদের স্টাইল থেকে সরে এস ভাবানুবাদে ফেরৎ গেলাম। আমি ভাবছি বাকী চার পর্ব শেষ করার পর এটি একটি বই আকারে প্রকাশ করবো।]

পরের পর্ব : নাউ দ্যাটস হোয়াট উই কল মার্কেটিং

 

 

 

 

 

One Reply to “ইনোসেন্টের শরবত ৬- মানুষই আসল তবু (ইটস অল এবাউট পিপল)”

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version