গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং-২ : কাজের জিনিষ বানাও

Spread the love

আগের পর্ব: গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং – টু বি অর নট টু বি

বিগত কিছুদিন যাবৎ অনেক স্টার্টআপের সঙ্গে আমার ফান্ডিং নিয়ে আলাপ হচ্ছে। বেশিরভাগই হতাশ। কারণ সে অর্থ কোথাও ফান্ডিং পাওয়া যাচ্ছে না। আবার যা পাওয়া যাচ্ছে সেটা প্রত্যাশিত নয়। এ নিয়ে একজন ইন্টারন্যাশনাল কনসালটেন্টের সঙ্গে আলাপ করলাম। তিনি আমার কাছে জানে চাইলেন ওরা যা নিয়ে কাজ করে সে সমস্যাগুলো তারা কোথা থেকে খুঁজে নিয়েছে? সেগুলো কি কোন ন্যাশনাল রিপোজিটরি থেকে পেয়েছে না কি  নিজেরা আইডেন্টিফাই করেছে? বললাম বেশিরভাগই নিজেদের ইনোভেশন। বললো – ঐটাই সমস্যা। ওরা যেটাকে সমস্যা মনে করছে সেটাকে সমস্যা ভাবছে না ফান্ডাররা, আর ফান্ডাররা যেটাতে ফান্ড করবে সেটা কেউ বানাচ্ছে না।
বললাম – ওস্তাদ। তাহলে সমাধান কী?
ওস্তাদ হাসলেন। বললেন – পড়ো পড়ো পড়ো। পরেরবার এসে তোমার পড়াশোনার সঙ্গে আমার অভিজ্ঞতা যোগ করবো।

 

তো আমার একটা কাজ হলো পড়া। তো পড়তে পড়তে খেয়াল করলাম আমাদের সমস্যা খুঁজে পাওয়ার চোখ কই।

কেন বলছি? আচ্ছা আগে কয়েকটা ইনোভেশনের খোঁজ নেওয়া যাক।
উবার : উবার এখন আমার ইন্টারেস্টের কেন্দ্রে আছে। এর মার্কেট ভ্যালু হচ্ছে ৬০ বিলিয়ন ডলার। টাকার হিসাবটা করিনা। কিন্তু উবার কী এমন যুগান্তকারী ধারণা যেটা আমাদের কারও মাথা থেকে বের হলো না? এটার তো সকল উপাদান আমাদের সমাজেই। বরং আমেরিকা বা সিঙ্গাপুরে ট্যাক্সি অনেকটা এভেইলেবল। পাবলিক ট্রান্সপোর্টও ভাল। কিন্তু আমাদের দেশ হলুদ ট্যাক্সি দেখলেও চড়া যায় না, সিএনজিওয়ালারা তো রাস্তার রাজা। এবং এ দেশেও অনেক বেকার গাড়ি ছিল (এখন সেগুলো দেখা যাচ্ছে)। তাহলে রাইড শেয়ারিং-এর আইডিয়াটা আমাদের কারও মাথা থেকে বের হওয়ার দরকার ছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো হয়নি। কারণ কী – কারণ আমাদের যারা উদ্ভাবক হতে চায় তারা ‘আইডিয়া’ খোঁজে, সমস্যা খোঁজে না। খুঁজলে এখনও অনেক সমস্যা আছে যেগুলোর সমাধান দরকার তারা খুঁজে পেতো। আইডিয়ার পেছনে দৌড়ায় দেখে ফান্ডাররা টাকা দিতে চায় না, দিলেও এমন সব কাগজপত্র খুঁজতে থাকে তখন মনে হয় ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’।

মিনিপ্যাক: আমাদের দেশের একটি যুগান্তকারী উদ্ভাবন (কিংবা কাস্টোমাইজেশন, আমি সঠিক জানি না) হলো মিনিপ্যাক শ্যাম্পু। এটার উদ্ভাবন কেমন করে হয়েছে? হয়েছে যখন আমাদের শ্যাম্পুওয়ালারা আবিস্কার করেছে গার্মেন্টস কর্মীরা ১০০+ টাকা দিয়ে শ্যাম্পুর বোতল কেনে না কিন্তু তারা শ্যাম্পু ব্যবহার করতে চায়। কেন কেনে না সেটা এ আলোচনায় মুখ্য না তাই ওটাতে যাচ্ছি না। কিন্তু গার্মেন্টসের বিকাশ হচ্ছে কিন্তু তাদের কাছে শ্যাম্পু পৌঁছানো যাচ্ছে না – এ সমস্যাটা নিয়ে প্রায় একসঙ্গে ভাবতে শুরু করে দেশের শীর্ষ তিনটি কনজিউমার প্রোডাক্ট কোম্পানি। এবং সেখানেই এই আইডিয়াটা মাথায় আসে – ১/২ টাকায় শ্যাম্পু দেওয়া যাতে একেবারে তৃণমূলেও পৌছে দেওয়া যায়। এর ফলাফলটাও আমরা জানি। মিনি প্যাক শ্যাম্পুর জন্য বিশাল অংকের মার্কেটিং করতে হয়নি। কারণ এটা খুব দ্রুত ওয়ার্ড অব মাউথ হয়েছে। তারপর গার্মেন্টসের কর্মীরা যখন নিজের বাড়িতে গিয়েছে তখন গ্রামের গৃহবধুরাও এই ম্যাজিক শ্যাম্পুর প্রেমে পড়ে গেছে। এখন সব শ্যাম্পুওয়ালার এই মিনিপ্যাক আছে!

উবার আর মিনিপ্যাকের উদাহরণ থেকে বোঝা যায় এমন কিছু যদি করা যায় যা কী না একটা বিদ্যমান সমস্যার সমাধান করে তাহলে সেটার বিক্রি, বিপণন নিয়ে ভাবে হয় না। আমরা প্রায় সবাই উবারের মার্কেটিং করি। দেশের কোন দৈনিক পত্রিকায় উবারের বিজ্ঞাপন ছাপা হয় নি। কিন্তু তমা ট্যাক্সির চেয়ে বেশি লোক উবারের কথা জানে। উবারের মার্কেটিং পলিসিই হলো হট-মেইলের সেই গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং। উবার এমন সেবা দেয় (বা দিতে চায়) যা কী না সেবা গ্রহীতাকে উদ্বুদ্ধ করে তাদের মিনি/মাইক্রোমার্কেটিং করতে। যেমন – এই কোডটি আপনার কোন বন্ধুকে পাঠাতে পারেন যাতে সে একটা ফ্রি উবার রাইড পেতে পারে!!!

সহজ, নয় কি।

আমার গুরু, ওয়াইসির পল গ্রাহামের একটা চার শব্দের কোটেশন আছে, “Make stuff people want”। মানুষ চায় এমন জিনিষ বানাও।

তার মানে বোঝা যাচ্ছে যে, এমন জিনিষ বানাতে হবে যেটা মানুষে চায়। প্রশ্ন হচ্ছে মানুষ কী চায় সেটা কীভাবে জানা যাবে?

সেটাই আমরা জানবো পরের পর্বে।

তার মধ্যে  উদ্ভাবনের কলকব্জা নিয়ে আমার কিছু লেখা আর কাজের জনিস কারা বানায় তাদের কথা জেনে নেওয়া যায়।

পরের পর্ব – কাজের জিনিষ কোথায় পাই?

 

One Reply to “গ্রোথ হ্যাকিং মার্কেটিং-২ : কাজের জিনিষ বানাও”

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version