ই-উদ্যোক্তা হাটের উদ্যোক্তা-৫ : তানিয়া হকের নন্দন কুটির

Spread the love

আজ মনে হয় তানিয়াদের দিন। সকালে লিখেছি তানিয়া ওয়াহাবের কথা। এখন মুগ্ধ হচ্ছি “ নন্দন কুটির”-এর গল্প। ১৯৯৩ সাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া তানিয়ার পড়াশোনা, পড়াশোনার খরচের জন্য টিউশনি ছাপিয়ে ওর কাজ। নিজ হাতে হ্যান্ড মেইড পেপার দিয়ে কার্ড তৈরি ও  বিক্রি করা। বিভিন্ন মেলায়, একুশে ফেব্রুয়ারী, ১লা বৈশাখ,  ১৬ই ডিসেম্বর ইত্যাদি।

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে কর্মজীবন। ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ও পরে ডানকান ব্রাদারসের ইউনাইটেড ইন্সুরেন্সে। কিন্তু পোকাটা মাথার মধ্যে গুন গুন করে। চাকরির জন্য নিজের বেচাবিক্রি কঠিন। তাই  শুরু হলো পন্য বিভিন্ন দোকানে সরবরাহ ও বিক্রি। পরিচয় হলো শহরে ও গ্রামের কিছু অবহেলিত মানুষের সঙ্গে। সমাজ বাস্তবতা দেখে চমকে ওঠা। ঠিক করা হলো ওদের জন্য কিছু করার।

কাজে ৭ বছরের চাকরি জীবন শেষ ইস্তফা। এবার অর্থ উপার্জনের সঙ্গে সঙ্গে অবহেলিত মানুষের আর্থ -সামাজিক উন্নয়নে নিজেকে নিয়োজিত করা।সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে শুরু  এসিডভিকটিম, শিশু পল্লীর বেশ কিছু এতিম মেয়েদের কমসংস্থান এবং গ্রামের বেশ কিছু মহিলা ও আদিবাসীদের নিয়ে কাজ করা শুরু।  সাভার, ফরিদপুর, ঝিনাইগাতি বিভিন্ন জেলায় হতে থাকলো কাজ। তবে, “কাজের জন্য শুধু কাজ নয়” বলছেন তানিয়া, “পরিবেশের কথাও মাথায় থাকলো”। কাজে পরিবেশ বান্ধব পন্য তথা হ্যান্ড মেইড পেপার, মাটির তৈরী বিভিন্ন সামগ্রী, হাতে তৈরি গহণা ও কটন-ক্যানভাস কাপড়ের ব্যাগ। সরবরাহ শুরু হলো ঢাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। সেই সঙ্গে পন্য চলে গেলো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে – যুক্তরাজ্য,  যুক্তরাষ্ট্র,  জাপান,  নেদারল্যানড,  নেপাল ইত্যাদি ।
এর মধ্যে সুযোগ হলো নিজেকে তৈরি করে নেওয়ার। ২০০৩ সালে ব্রিটিশ কাউন্সিলের মহিলা উদ্যোক্তা মেলায় “ Best Woman Entrepreneur of the Year “ পুরষ্কার লাভ করে যুক্তরাজ্য ভ্রমন ও ওখানকার বিভিন্ন সফল মহিলা উদ্যোক্তার  সঙ্গে মত বিনিময়ের সুযোগ।
২০০৫ সালে মার্কিন সরকারের আইভিএলপিতে  অংশগ্রহণ।ষ্টেট গেস্ট হিসাবে  যুক্ত রাষ্ট্র ভ্রমন। দেখা ও মতবিনিময় হলো  বিশ্বের বিভিন্ন মহিলা উদ্যোক্তাদের  সঙ্গে।তাদের কাজের অভিজ্ঞতা জানার ও জানানোর সুযোগ। বিভিন্ন দেশভ্রমণ ও আন্তর্জাতিক মেলায় অংশগ্রহণের শিক্ষা যুক্ত হলো কাজে।
২০০৭ সালে নন্দনের প্রথম শো-রুম “নন্দন কুটিরের“ যাত্রা শুরু হলো ধানমনডিতে, দ্বিতীয় শো  রুম আজিজ সুপার মার্কেট ও এরপর মীরপুর শপিং সেনটারে। হস্তশিল্পের পাশাপাশি যুক্ত হলো পোশাক ও অন্যান্য সামগ্রী । দেশীয় মান সম্পন্ন  কাপড় ও সামগ্রী ব্যবহার করে যুগোপযোগী পোশাক ও অন্যান্য সামগ্রী তৈরী হয় নিজস্ব কারখানায়, নিজস্ব ডিজাইনে ।
হাটি হাটি পা পা করে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছেন।  দেশীয় সামগ্রী, দেশীয় কৃষ্ট ও সংস্কৃতি এবং নান্দনিকতাকে ভিত্তি করেই এগিয়ে যেতে চান নন্দন কুটিরের তানিয়া তোফায়েল হক।

তানিয়া ও তাঁর নন্দন কুটিরের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা।

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version