পর্ব-১৩ : ইয়্যু উইন সাম, ইয়্যু লস সাম-১

Spread the love

পর্ব-১২

আমার আর সঞ্জয়ের চাকরি হল ওরাকলে।

আমার আরো অফার ছিল। তবে, ওরাকল যে কেবল সবচেয়ে বেশি টাকা দিচ্ছে তা নয়। বরং তারা আমাকে টাকা দিচ্ছে যাতে আমার কলেজ জীবনের সকল স্থাবর সম্পত্তি আমি ক্যালিফোর্নিয়ায় নিয়ে যেতে পারি। শুধু তাই নয়, আমাকে আর সঞ্জয়কে তারা বিনে পয়সায় তাদের কর্পোরেট হাউসিং-এ থাকতে দিয়েছে, নতুনদের প্রশিক্ষণ সময়কালটাতে। আর ১৯৯৫ সালে বার্ষিক ৪০ হাজার টাকা(ডলার!) একজন ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েটের জন্য নেহায়েতই কম নয়!

আমি অনুভব করলাম আমি সফল হয়েছি। কলেজের তো একটা উদ্দেশ্যই ছিল মোটা বেতনের চাকরি পাওয়া এবং আমি সেটা পেয়েছি। আমি আর সঞ্জয় আমাদের অন্যান্য রুমমেটদের সঙ্গে তুলনা করে দেখলাম কেও আমাদের মত বেতন পাচ্ছে না। তারমানে তাদের চেয়ে আমাদের আয় বরকত বেশিই হবে।

কয়েক মাস পর। আমি আর সঞ্জয় ওরাকলের নতুনদের ট্রেনিং-এ যোগ দিলাম। এটি একটি তিন সপ্তাহের কোর্স। আমাদের সঙ্গে আরো ২০ জন নতুন গ্র্যাজুয়েট। তিন সপ্তাহ দ্রুত চলে গেল। এটি আসলে ছিল ডেটাবেস প্রোগ্রামিঙের একটি ক্র্যাশকোর্স। আমরা অনেক নুতন প্রজেক্ট করা শিখলাম। আমি নিজেও খুশী কারণ আমি নতুন বন্ধু বানালাম এবং এই সময়ে টাকাও ভাল কামালাম।
নতুন বস আর কাজের জন্য আমি অনেক উত্তেজনা নিয়ে অপেক্ষা করি।

তবে, অন্যদের মত আমি ওরাকল নিয়ে কোন রিসার্স করি নাই। আমাকে কী কাজ করতে দেওয়া হবে এই নিয়েও আমার বিন্দুমাত্র ধারণা ছিল না। আমার কেবল মনে আছে ক্যাম্পাসে কেও একজন আমার একটা ইন্টারভিউ নিয়েছে এবং তারা আমার ট্রান্সক্রিপ্ট দেখে খুবই প্লীজড হয়েছে। ওরা আসলে এ ছাড়া আমার সম্পর্কে আর কিছুই জানে না এবং আমিও তাদের সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না। আমি খালি জানি “সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার” হিসাবে চাকরি করার জন্য ওরা আমাকে ৪০ হাজার করে টাকা দেবে!

ওরাকলে আমার প্রথম কাজের দিনে আমাকে আমার ডেস্ক দেখিয়ে দেওয়া হল। আর আমার কাজ হল – “টেকনিক্যাল কোয়ালিটি এসুরেন্স এন্ড রিগ্রেশন টেস্ট”। এটা কী সে সম্পর্কে আমার কোন আইডিয়া নেই এবং আমি মোটই তাতে চিন্তিত নই। কারণ আমি তো টাকা পাচ্ছি! আর সপ্তাহখানেকের মধ্যে আমি বুঝে ফেল্লাম এটা খুবই সহজ টাকা!

আমার কাজ হলো দিনে কয়েকটা অটোমেটেড টেস্ট চালানো। টেস্ট রেডি করার জন্য ৪-৫ মিনিট সময় লাগতো। তারপর টেস্টটা চালায় দিলে এটি প্রায় ঘন্টা তিনেক চলতো। এই সময় আমার কাজ ছিল কম্পিউটারের সামনে বসে থাকা অথবা এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ানো। তারপর সেটা শেষ হলে আর একটা টেস্টের জন্য কাজ শুরু করা। আমি লক্ষ করলাম আমি কখন আসি, কখন যাই এই নিয়ে কারো কোন মাধাব্যাথা নাই, কেও এমনকি আমাকে নজরদাড়িতে রেখেছে বলেও আমার মনে হয় না। আমার ধারণা আমি যে নতুন জয়েন করেছি এটাও কেও খেয়াল করে নাই!

প্রথম মাস এবং তারপরের দিনগুলোতে আমি নিজেকে খুবই সৌভাগ্যবান ভাবলাম। কারণ আমি প্রায় বিনা কষ্টে ব্যাপক টাকা কামাতে শুরু করেছি। আমি আর সঞ্জয় মিলে কাছেই একটা এপার্টমেন্ট ভাড়া করলাম যেখানে হেঁটে যেতে আমাদের মাত্র ৭ মিনিট সময় লাগে।

সপ্তাহখানেকের মধ্যে আমি আমার দিনের  রুটিনটা বানিয়ে ফেললাম।

১০.০০          :         ডেস্কের সামনে নিজেকে হাজির  রাখা

১০.০৫          :         একটা টেস্ট শুরু করা

১০.১০         :         ই-মেইল চেক করা। আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধবের ই-মেইলের জবাব দেওয়া

১১.৩০        :         মধ্যাহ্ন ভোজের জন্য বাসায় যাওয়া

১২.৩০          :         ভাতঘুম !

১.৪৫            :         আবার অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা

২.০০            :         আর একটা টেস্ট শুরু করা

২.০৫            :         ই-মেইল চেক করা। আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধবের ই-মেইলের জবাব দেওয়া

৪.০০            :         বাসার দিকে রওনা দেওয়া

 

আমার জন্য যতোটা সহজ এই ব্যাপারটা সঞ্জয়ের জন্য কিন্তু ততোটা সহজ ছিল না। কারণ ওর ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা ৭টা বাজতো। তার কাজটা কেমন একটা জানতে চাইলেই সে সব সময় বলে- ঠিক আছে। তোমন একটা এক্সসাইটিং না।

আমি তাকে বললাম আমার কাজটাও নেহায়েত ছাপোষা। কোন উত্তেজনা নাই। বোরিং। কাজে আমি তাকে বললাম – চলো একটা কিছু করি যাতে বোরিংনেজটা কাটানো যায়। আমরা রাতে বা সপ্তাহান্তে কাজ করতে পারবো।

এর মধ্যে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের ব্যাপারটা জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে। সঞ্জয়ের গ্রাফিকসের হাত খুব ভাল। কাজে আমরা চাইলে অন্যদের জন্য এয়েবসাইট বানাতে পারি।

নিজেদের একটা সাইড বিজনেজের ব্যাপারটা একটা মজা হিসাবেই গন্য করলাম। আমাদের কোম্পানির নাম দিলাম ইন্টারনেট মার্কেটিং সলিউশন অথবা সংক্ষেপে আইএমএস। আমরা আমাদের নিজেদের ওয়েবসাইট তৈরি করলাম, কাস্টোমাইজ নেম কার্ড প্রিন্ট করলাম এবং এপার্টমেন্টে নতুন একটা টেলিফোন লাইন নিলাম।

আর এভাবে আমরা তৈরি হলাম আমাদের নতুন মজার জন্য!

Exit mobile version