কম্পিউটার বিজ্ঞান শিক্ষা সপ্তাহ ২০১৬

Spread the love

আমাদের দেশে প্রায় দেড়/দুই দশক আগে হঠাৎ করে সবাই কম্পিউটার বিজ্ঞান পড়তে শুরু করে। কিন্তু তখন তারা জানতো না কেন পড়বে? শুধু যে ফর্মাল পড়া তা নয়, রীতিমতো জমি জমা বেঁচে এপটেক-এনআইআইটিতে কোর্স করতে শুরু করে। ভাবখানা এমন যে,খালি কোর্স করাটাই বাকি। তারপর খালি টাকা আর টাকা। সেসময় জামিলুর রেজা স্যার কিছুদিন শিল্প ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। স্যারের গাড়ির ড্রাইভার একদিন একটা জমির দলিল স্যারকে দেখিয়ে জানতে চায় – বেঁচলে কয় টাকা পাওয়া যাবে। কারণ – তার ছেলেকে অ্যাপটেকে ভর্তি করাতে হবে। বাঙ্গালি যা ধরে সেটা শেষ না করে ছাড়ে না। অচিরেই লোকে টের পায় ১/২ পাতা পড়ে আর যাই হোক সিএসে ভাল করা যায় না। এর জন্য দরকার ডেডিকেশন, লেগে থাকা, কঠিন চেষ্টা এবং বার বার ফেল করে শেখা। সে সময় বাঙ্গালির কই? কাজে এক সময় সিএসই পড়ুয়াদের সংখ্যা অনেক কমে যায়।
এ জোয়ার আবার নতুন করে শুরু হয়েছে কারণ বিশ্বব্যাপী আবার প্রোগ্রামারদের চাহিদা বেড়ে গেছে। কতো বেড়ে গেছে তার একটা নমুনা আমি এখানে দিলাম। বলা হচ্ছে, শুধু আমেরিকাতেই আগামী কয়েক বছরে ১০ লক্ষ প্রোগ্রামারের ঘাটতি হবে। ওরা অবশ্য চেষ্টা করলে অন্য দেশ থেকে লোক নিয়ে যেতে পারবে। তারপরও তারা হৈচৈ করে নেমেছে ছেলে-মেয়েদের প্রোগ্রামার বানানোর কাজে। কয়েকটি অঙ্গ রাজ্যে এখন কে-১২ এর মধ্যে সিএস পড়া শুরু করতে হচ্ছে। কেন? কারণ এটা একটা জানা কথা যে, ছোটবেলা থেকে যদি একটা বিষয় জানা যায়, আগ্রহ থাকে তাহলে সেখানে দক্ষতা বাড়াটা স্বাভাবিক। তো সেই চেষ্টা ওনারা করছেন।

২০১৪ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে দেখলাম ছোটদের কম্পিউটার প্রোগ্রামিং-এ উৎসাহ দিতে।

ভাবলাম এমনিতেই আমেরিকার প্রেসিডেন্টরা বিজ্ঞান-প্রযুক্তি-উদ্ভাবনকে বেশি গুরুত্ব দেন। অবাক হয়ে দেখলাম বারাক ওবামা হোয়াইট হাউসে সিএসফরঅল নামে একটা আলাদা অফিসই খুলে ফেললেন। সে অফিস আবার যে সব ছেলে মেয়ে দেশে-বিদেশে প্রোগ্রামিং-এ ভাল করে তাদের দাওয়াতও দিতে শুরু করলো। আর এবছর বারাক ওবামা ক’দিন আগে প্রেসিডেন্ট ফ্রিডম পদক দিলেন। ১২ জনের মধ্যে ৪ জন আইটির। আর এর মধ্যে রয়েছেন গ্রেস হপার ও মার্গারিটা হ্যামিল্টন। প্রেস হপারকে অনেকেই জানেন। সে তুলনায় চাঁদে মানুষ যাবার কম্পিউটার প্রোগ্রামগুলোর পেছনের নেতা হ্যামিল্টনকে চেনে একটু কম মানুষ। তো এ হলো আমেরিকার ব্যাপার। 

সারা বিশ্বে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং-কে জনপ্রিয় করার চেষ্টা হচ্ছে। আমাদের কী অন্য কোন উপায় আছে? নাই মনে হয়। ২০১১ সাল থেকে হাই স্কুলে আইসিটিকে একটি বাধ্যতামূলক বিষয় হিসাবে চালু করা হয়েছে। উদ্দেশ্য ছোটবেলা থেকে আইসিটির ব্যাপারগুলোতে হাতে খড়ি যেন হয়। সঙ্গে আছে আরও আয়োজনও। যেমন জাতীয় হাইস্কুল প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা। সেই সঙ্গে ২০১৩-২০১৪ সাল থেকে আমরা পালন করছি কম্পিউটার বিজ্ঞান শিক্ষা সপ্তাহ।

https://www.youtube.com/watch?v=krYXHtrzXLU

 

কম্পিউটার বিজ্ঞান শিক্ষা সপ্তাহ প্রতিবছর ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ জুড়ে পালিত হয়। আমাদের দেশে এই সময়টা থাকে পরীক্ষা। কাজে আমরা সপ্তাহ পালন করি মাস-দেড়মাস ধরে। এবারও তাই করবো।

https://www.youtube.com/watch?v=BmObrZvsUzY

এবারের আয়োজনে থাকছে-

* সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে আওয়ার অব কোড আয়োজন
* দুইটি অনলাইন প্রোগ্রামিং কনটেস্ট
– মেয়েদের জন্য এডা লাভলেস প্রোগ্রামিং কনটেস্ট (৯ ডিসেম্বর ২০১৬)
– সবার জন্য প্রোগ্রামিং কনটেস্ট (১২ ডিসেম্বর)
* বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রোগ্রামিং আড্ডা ও খুদেদের জন্য প্রোগ্রামিং কর্মশালা
* প্রোগ্রামিং ক্যাম্প, স্পেশাল ওয়েব ট্রেনিং
* নাসা এপ সংক্রান্ত একটি প্রস্তুতি কর্মশালা
* আর্টিফিশিয়েল ইনটেলিজেন্স ও বিগডেটা নিয়ে লম্বা কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ
* সিইং ইজ বিলিভিং – আইটিতে ক্যারিয়ার করতে আগ্রহীদের জন্য আইটি অফিস ভিজিটের ব্যবস্থা

আমি প্রোগ্রামিং শিখতে এজন্য বলি না যে সবাই প্রোগ্রামার হবে। বরং প্রোগ্রামিং শিখলে বেশ কিছু প্রায়োগিক স্কিলে দক্ষতা অর্জন করা যায়। সেজন্য বিশ্বব্যাপী প্রোগ্রামিং-্কে জনপ্রিয় করার চেষ্টা হচ্ছে। বিল গটেস থেকে হালের মার্ক – সবারই তাই অভিন্ন কথা।

https://www.youtube.com/watch?v=wldli30PT1E

তো, এই দেশে কোন একাডেমিক কাজ করা খুবই কঠিন। কোন স্পন্সর পাওয়া যায় না। গাটের টাকা খরচ করতে হয়। কারো কাছে প্রপোজাল পাঠালে সেটি বিদ্যুৎগতিতে নাকচ করে দেয়। তাতে কী। আমরা আমাদের মতো করে করতে থাকি। হাল ছাড়ার দরকার কী?

এবারের আয়োজনের ফেসবুক ইভেন্ট

কাজে “আমাদের কাছে যা কিছু আছে তাই নিয়ে” আমরা শুরু করে দিলাম।

বাকী আল্লাহ ভরসা।

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version