গণিত যাত্রীর ডায়েরী ২০১৫-২ : স্কুলের রাস্তা কোনটি?

Spread the love

জাজিরা পার হয়ে আমরা শরিয়তপুর পৌছে গেলাম সন্ধ্যা সাতটার আগেই! ভাবা যায়। দেশে তো অবরোধও চলছে! আমরা এসে নামলাম শরিয়তপুর ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির (এসডিএস) রেস্ট হাউসে। চমৎকার আয়োজন। রুমগুলো পরিস্কার ও সুন্দর। আমাদের জন্য তিনটা রুম।
রেস্ট হাউসে আসার আগে কায়কোবাদ স্যারের জরুরী কয়েকটি ওষুধ কেনা হয়েছে আর স্কুলের মাঠও ঘুরে এসেছি। স্কুলের চেয়ে মাঠ অনেক বড় (পরের দিন অবশ্য জেনেছি ভেতরে স্কুলের আরো বড় ভবন আছে)। পালং তুলাসার গুরুদাস স্কুলটির প্রতিষ্ঠা ১৮৯৯ সালে। পরে জেলা কোটায় স্কুলটি সরকারি হয়েছে আশির দশকে।
শরিয়তপুর বাংলাদেশের সবচেয়ে নবীন জেলা। সম্ভবত কারো নামে আর কোন জেলা নেই। হাজী শরিয়তউল্লাহ এই পালং থানা থেকেই তাঁর ফারায়েজী আন্দোলন পরিচালনা করেছিলেন। সেই কারণে এই ইউনিয়নটির নাম পরে শরিয়তপুর, তারপর থানার নাম শরিয়তপুর হয়ে জেলার নামেও তিনি ঠাঁই পান। হাজি শরিয়তউল্লাহর ঐ আন্দোলনটা মনে হয় আবার একবার জরুরী হয়ে পড়েছে!
ফ্রেশ ট্রেশ হতে না হতেই প্রথম আলোর প্রতিনিধি সত্যজিৎ নিয়ে আসলেন রসমালাই। আমার এক সময় ধারণা ছিল কেবল কুমিল্লাতেই রসমালাই ভাল বানায়। কত কিছু জানার আছে!
আমার সঙ্গে ছিল হাউ গুগল ওয়ার্কস আর জাফর স্যারের দেখা আলো অদেখা রূপ। কায়কোবাদ স্যার গুগলটা নিয়ে গেলেন।
রাত সাড়ে নয়টার দিকে আমরা খেতে চললাম। গন্তব্য ম্যাগডোনাস চাইনিজ রেস্টোরেন্ট।
-চাইনিজ কেন? আমাদের না সর্ষে ইলিশ আর চিংড়ির মালাইকারি মেন্যু।
তবে, ওখানে গিয়ে বুজলাম এই চাইনিজে পরোটা এমনকী হালিমও পাওয়া যায়!
সর্ষে ইলিশ আর বড় বড় চিংড়ির মালাইকারি, সঙ্গে বেগুন ভাজি। মুরগীর রেজালা জাতীয় কিছু একটা ছিল সেটা অবশ্য আমি আর খাই নাই। তবে, হিমেলের মত যারা একটু শুকিয়ে গেছে তারা সেটা বাদ দেয়নি।

রাতে ঘুমটা ভাল হয়েছে। সকালে আবার ঐ চাইনিজে নাস্তা করে আমরা মাঠে চলে গেলাম ৯টা বাজার আগেই। আগে জাজিরাতে তিনটা উৎসব হলেও শরিয়তপুর জেলায় এটি আমাদের প্রথমবারের আয়োজন। সে তুলনায় শুরু থেকেই ম্যালা লোকজনের আগমন। জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপার হাজির হয়েছেন। (দুজনই প্রায় সবসময় ছিলেন। একজন ফিজিক্সের আর একজন পুর-প্রকৌশলী)।
দশটা নাগাদ পরীক্ষা শুরু হয়ে গেলে আমি আর স্যার মিলে কতক্ষণ রোদ পোহালাম। সোমা আর তার বন্ধুরা আমাদের জন্য চায়ের ব্যবস্থাও করেছে।
সাংস্কৃতিক পর্বে একটি ছোট নাটিকা আর নাচ ছিল। নাটিকার বিষয় ছিল গণিত কেমন করে সারাক্ষণই আমাদের ঘিরে রাখে।
প্রশ্নোত্তর পর্বে বিজয় স্যার আমাকে অনেকখানি সহায়তা করেছেন। কায়কোবাদ স্যারতো ছিলেনই। তবে, আমাদের প্রথমদিককার উৎসবগুলোর মত ছেলে-মেয়েরা আমার বুদ্ধির পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করেছে ফলে আমি প্রায়শও হেরে গেছি!
নামাযের বিরতির পর বেলা তিনটে নাগাদ আমরা উৎসব শেষ করে হেডস্যারের রুমে বসলাম দুপুরের খাবারের জন্য। এবং তারপর বুঝতে পারলাম আমাদের ফেসবুক স্ট্যটাসগুলোর প্রভাব কাকে বলে!!
কালিজিরা, টাকী মাছ, সীম আর বেগুন ভর্তা, তিন পদের মাছ – ইলিশ ভাজি, চিংড়ির মালাইকারি আর চিতল(?)মাছের কারি। চিল কয়েক পদের শাক আর কী কী জানি। ছিল ডাল আর সবশেষে দই আর রসগোল্লা। রসগোল্লাটা আবার জাজিরা থেকে আনা।
খেতে খেতে আমরা যখন টায়ার্ড তখন পুলিশ সুপার ‘যাবার পথে আমার বাড়িতে এক কাপ চা খেয়ে যাবেন’ বলে গেলেন।
কী আর করা। অবরোধের মধ্যে উৎসব করছি। আর চায়ের দাওয়াত।
তো, পুলিশ সুপারের চমৎকার বাংলো দেখে আমাদের টিমের সবারই বিসিএস দেওয়ার খায়েশ হয়েছে।
যদিও চায়ের দাওয়াত ছিল কিন্তু তার আগে যত কিছু আনা হয়েছে সেগুলোর লিস্ট না করাই ভাল।
সেখান থেকে হৃষ্টচিত্তে আমরা রাজবাড়ি রওনা হলাম।
যথারীতি গাড়িতে ওঠার পর কায়কোবাদ স্যার বললেন – “তোমারা তো আমার আগের সমস্যার সমাধান করতে পারো নাই। কাজেই আর একটি ছোট সমস্যা তোমাদের দেই। আমি জানি তোমরা পারবে না। ”
তারপর যোগ করলেন- আমি জানি তোমরা আমাকে ভুল প্রমাণ করবে না!!!
কায়কোবাদ স্যারের দ্বিতীয় সমস্যাটি ক্লাসিক্যাল সত্য-মিথ্যার সমস্যা।
কোন এক মোড়ে আসার পর তুমি দেখলা রাস্তাটি দুইভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে। একটি গেছে স্কুলে আর একটি পোস্ট অফিসে। ঠিক মোড়ে একজন লোক দাড়িয়ে আছে। তুমি জানো যে, ঐ লোকটা হয় সত্য কথা বলে না হয় মিথ্যা কথা বলে। একটি মাত্র প্রশ্ন করে জেনে নিতে হবে স্কুলের পথ কোনট্যা?

পুনশ্চ : এই সমস্যার একটি চমৎকার সমাধান তুমি করতে পারো যদি তুমি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হও। কারণ তাহলে তুমি একটা আক্রমন করে দুই রাস্তাকেই স্কুলে নিয়ে ফেলতে পারো।

Leave a Reply Cancel reply

Exit mobile version